×

আন্তর্জাতিক

বিক্ষোভ দমনে সেনা অভিযান চালাবেন ট্রাম্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২০, ১২:২২ পিএম

নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে পুলিশি হেফাজতে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল গোটা যুক্তরাষ্ট্র। কারফিউ জারি আর বিশেষ বাহিনী নামিয়েও বিক্ষোভ দমাতে পারছেন না ট্রাম্প। বিক্ষোভকারীদের হোয়াইট হাউজ চত্বর আর রাস্তা থেকে সরাতেই পারছেন না। ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে টানা ছয় দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের শহরে শহরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও লুটপাট চলছে।

এর মধ্যেই গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজের সামনে তীব্র বিক্ষোভ চলাকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাংকারে ঢুকিয়ে ফেলেন। সেখানে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন ট্রাম্প। এ নিয়ে বিশ্বমিডিয়া একেবারেই সরব।

সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫টির বেশি শহর এখন বিক্ষোভে উত্তাল। প্রায় ৪০টি শহরে কারফিউ দেয়া হয়েছে। অথচ করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় কদিন আগেও এসব শহরের সড়ক ছিল জনমানবশূন্য।

গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভকারীদের দমাতে ধরপাকড় শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকালে গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ মিলিটারি ফোর্স ন্যাশনাল গার্ডকে।

গত সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, সহিংস বিক্ষোভ থামাতে তিনি রাজধানীর সড়কগুলোতে হাজারো সেনা নামাচ্ছেন। অঙ্গরাজ্যগুলো বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে সেখানেও সেনা পাঠাবেন।

মঙ্গলবার (২ জুন) বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের দমনে সেনা অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অবশ্য এর আগেও বিক্ষোভকারীদের হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন উসকানিমূলক কথা। এমন প্রেক্ষাপটে বিক্ষোভকারীরা হোয়াইট হাউসের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। সেখানে সংঘর্ষও হয়। ভয়ে ট্রাম্প আশ্রয় নেয় বিশেষ বাঙ্কারে।

এর আগে গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিসে একটি দোকানে কেনাকাটা শেষে মূল্য পরিশোধ করেন জর্জ ফ্লয়েড। কিন্তু দোকানের কর্তৃপক্ষ পুলিশে ফোন করে অভিযোগ করে, ফ্লয়েডের দেওয়া ২০ মার্কিন ডলারের নোটটি জাল। পুলিশ গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে গাড়িতে ওঠানোর সময় তিনি রাস্তায় পড়ে যান। ওই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে আছেন। এ সময় ফ্লয়েডকে বলতে শোনা যায়, আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমাকে মারবেন না।'

প্রাথমিক ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর ডেরেক চাউভিন (৪৪) নামের ওই শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড বসেছিলেন। ওই অবস্থায়ই ফ্লয়েড অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই ঘটনার পরই বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে মেনোপোলিস। ক্রমেই তা মিনেসোটার অন্যান্য জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভের সঙ্গে ঘটতে থাকে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ। এ পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দেন, 'লুটপাট চললে গুলিও চলবে।' টুইটারে তাঁর এই মন্তব্যে ষাটের দশকের বর্ণবাদী আচরণ খুঁজে পান বিক্ষোভকারীরা। এতে আরও বেশি ফুঁসে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্পের ওই টুইটের পর ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। পুলিশ স্টেশনে ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যে একে ১৯৬৮ সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের খুনের ঘটনার পর সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার সঙ্গে তুলনা করছেন অনেকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App