×

জাতীয়

এবারের বাজেট অধিবেশন গড়তে চলেছে কম সময়ের রেকর্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২০, ০১:৫৭ পিএম

 করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কারণে একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট অধিবেশন গড়তে চলেছে কম সময়ের আলোচনার রেকর্ড। সাধারনত ৫০-৬০ ঘন্টার আলোচনা পরে বাজেট পাশের রেওয়াজ থাকলেও এবারের বাজেট অধিবেশন ১২-১৫ ঘন্টা আলোচনা করেই ৩০ জুন বাজেট পাশ হয়ে যাবে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।

এবারের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী ১০ জুন বিকেল ৫টায়। আর ১১ জুন বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট পেশ করবেন। ওই দিন রাষ্ট্রপতি উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু এ অধিবেশনটি আগের যে কোন বাজেট অধিবেশন থেকে সংক্ষিপ্ত হবে, চলতে পারে মাত্র ৭-৮ কার্যদিবস বলে সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কেবলমাত্র দিনের কার্যক্রমে অপরিহার্য অর্থাৎ কোরাম সংকট উত্তোরনের জন্য (৬০জন এমপি হাজিরা হলে কোরাম পূর্ণ হয়) সর্বোচ্চ ৮০-৯০ জন এমপিকে রোস্টার পদ্ধতিতে বাজেট অধিবেশনে হাজির হবার জন্য বলা হবে। যথা সম্ভব ঢাকার আশ পাশের এবং কম বয়সী এমপিদের হাজির হতে বলা হচ্ছে। বয়ষ্ক ও রোগাক্রান্ত এমপি-মন্ত্রীদের সংসদে আসতে নিরুসাহিত করা হবে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।

তবে এবারের বাজেট অধিবেশন কোন প্রশ্নোত্তোর পর্ব থাকছে না। অধিবেশনের শুরুতেই বাজেট নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান গেছে। প্রথম দিন অর্থাৎ ১০ জুন বিকেল ৫ টায় অধিবেশন শুরু হয়ে সম্প্রতি প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে মুলতবি হবে। পরের দিন ১১ জুন বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী তার বাজেট পেশ করবেন। তার পরে ২-৩ দিন মুলতবি হয়ে আবার চলবে অধিবেশন।

করোনা সংক্রমন এড়াতে এবারের বাজেট অধিবেশন সাংবাদিকদের সরাসরি কভার করার জন্য কোন পাশ ইস্যূ করা হচ্ছে না । বিটিভি থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত অধিবেশন থেকে সংবাদ সংগ্রহের কথা জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখা।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে বাজেট অধিবেশনটি অন্যবারের মত দীর্ঘ হচ্ছে না। যথা সম্ভব কম সংখ্যক সংসদ সদস্যদের নিয়ে প্রতিদিনের অধিবেশন শুরু হবে। রোস্টার পদ্ধতিতে এমপিদের আসার জন্য বলা হবে। যিনি বাজেটের ওপর বক্তব্য রেখেছেন তাকে পরের দিন না এসে অন্য সদস্যদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে যাতে বসতে পারে সেজন্য ৮০-৯০ জন এমপি নিয়ে প্রতিদিন অধিবেশন চলবে। তবে এ বিষয়ে প্রতিদিন অংশগ্রহণকারী সংসদ সদস্যদের তালিকা প্রণয়নসহ সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে ২-১ দিনের মধ্যে সব হুইপকে নিয়ে প্রধান হুইপ বৈঠকে বসবেন বলে স্পিকার জানান। তিনি বলেন, বাজেট সংক্রান্ত কাজের বাইরে কিছু করা হবে না। তাছাড়া এই অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বও থাকছে না। তবে বাজেট পাসের ক্ষেত্রে কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সব ধাপ অনুসরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

১১ জুন বিকেলে বাজেট পেশের পর ২-৩ দিন অধিবেশন মুলতবি থাকবে। এরপর প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত একটানা অধিবেশন চলবে। বিরতিহীন অধিবেশন চালাতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির আশপাশে থাকেন বা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদেরও করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করানো হবে। এছাড়া সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও করোনা পরীক্ষা করা হবে। যথা সম্ভব কমসংখ্যক মানুষকে সংসদে প্রবেশাধীকার দেয়া হবে। এছাড়া বাজেটের ওপর আলোচনাও হবে সংক্ষিপ্ত। সম্পূরক বাজেটসহ সব মিলিয়ে ১২-১৫ ঘণ্টা আলোচনা হতে পারে। সাধারণত অধিবেশন শুরুর দিন সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সার্বিক বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক এবার হচ্ছে না। কমিটির প্রধান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং কমিটির সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদের কার্যক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রতিবছর বাজেট উপস্থাপন সরাসরি দেখার জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিদেশি মিশনের প্রতিনিধি, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ এবং সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে এবার কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

এবারের বাজেট অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীসহ ১০ জন মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন, এরকম একটি বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে জারি হয়েছে। এছাড়া একজন প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। অন্যান্য বাজেট অধিবেশনে মন্ত্রিসভার পূর্ণ সদস্যরাই উপস্থিত থাকতেন।

এবার আর বাজেটের ওপর ৫০-৬০ ঘন্টা দীর্ঘ আলোচনা হবে না। নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস হবে। তবে এবার টানা বাজেট অধিবেশন চলছে না। প্রথম দুই দিন অর্থাৎ ১০, ১১ জুন চলার পর ১২ ও ১৩ জুন সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর ১৪ ও ১৫ জুন চলে আবার বিরতি। এভাবে বিরতি দিয়ে মোট ৭-৮ কার্যদিবস চলতে পারে অধিবেশনটি। এটি হতে যাচ্ছে সব চেয়ে কম সময়ে পাশ হওয়া বাজেট অধিবেশন।

এর আগে লকডাউনের মধে সংবিধানের নিয়ম রক্ষায় গত ১৮ এপ্রিল একদিনের জন্য বসে সপ্তম অধিবেশন। দেশের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম ওই অধিবেশনে ৩৫০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৩৫ জন অংশ নিয়েছিলেন। মাস্ক, গ্লাভস পরে দূরত্ব মেনেই সেদিন আইনসভায় বসেছিলেন আইনপ্রণেতারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App