×

সাহিত্য

এখন অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২০, ০২:২৮ এএম

এখন অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে

হাসনাত আবদুল হাই

বিশেষ সাক্ষাৎকার হাসনাত আবদুল হাই কথাসাহিত্যিক
হাসনাত আবদুল হাই। শিল্প-সাহিত্যের বহুমাত্রিক শাখায় বিচরণ তার। কথাসাহিত্যিক, শিল্প সমালোচক এবং কলামিস্ট। বিরামহীন গতির সঙ্গে বিচিত্র প্রকরণে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমনকাহিনিতে নিজেকে প্রকাশ করে চলেছেন তিনি। ১৯৫৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত হাসনাত আবদুল হাইয়ের যাত্রাপথ নির্ণয় করলে পাওয়া যায় দীর্ঘ বছরের নিরন্তর সৃজনের যাত্রাকাল। এই যাত্রায় তিনি গল্পে, উপন্যাসে, বর্ণিল মানচিত্র একেঁছেন, ক্রমশ নিজেকে এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে, এক তরী থেকে ভিন্ন তরীতে নিয়ে গেছেন, এবং অভিজ্ঞতার সফেন সমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন। লিখেছেন গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনি ও প্রবন্ধসংগ্রহসহ ৭০টির অধিক গ্রন্থ। বাংলা ছাড়াও ইংরেজিতে সমাজবিজ্ঞান ও উন্নয়ন বিষয়েও লিখেছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি। বহুমাত্রিক এই লেখকের করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই করোনাকালে আমি টেলিভিশনে নিউজ দেখছি, খবরের কাগজ পড়ছি। দেশে বিদেশে করোনা সম্পর্কে খবরাখবর নিচ্ছি, মূলত এটাই আমার প্রধান কাজ। এছাড়া বাংলা ইংরেজী উপন্যাস পড়ছি। আমেরিকার ঔপন্যাসিক গে লিলোর আন্ডারগ্রাউন্ড। আর্জেন্টিনার লেখক পি ইগোর ‘ট্রপিক্যাল নাইট’, আর্জেন্টিনার আরেক লেখক হোলিও কোতার্জার ‘হপস্কচ’ উপন্যাস দ্বিতীয়বার পড়লাম। রাশিয়ান লেখক মিখাইল লারমন্টভের ‘হিরো অব আওয়ার টাইম’। ব্রাজিলের লেখক হোর্হে আমাদোর ‘শেফার্জ অব দি নাইল্ক’, ফরাসি লেখক ছেলিনির ‘জার্নি টু দ্যা অ্যান্ড অব দ্য নাইট’, এই উপন্যাসটি আমি তৃতীয়বারের মতো পড়েছি। গত দুই আড়াই মাসে আমি এই বইগুলো পড়েছি। এই হলো আমার তৃতীয় এক্টিভিটিজ। চতুর্থ এক্টিভিটিজের মধ্যে রয়েছে ফেসবুকে আমি প্রত্যেকদিন কিছু না কিছু লিখছি। সেটা কখনও মন্তব্য, কখনও গদ্য। এর মধ্যে করোনা সংক্রান্ত লেখাও রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এসব তো কবিতাই। আমি তাদের বলেছি, আমি আমার মনের অনুভুতি প্রকাশ করছি। লেখাগুলো আমি নিয়মিতই ফেসবুকে শেয়ার করছি। এইসব করে আমার সময় কাটছে। করোনার এ সময়টায় আপনার চেনা পৃথিবীটা বদলে গেছে বলে মনে হচ্ছে? এর উত্তরে এই কথাসাহিত্যিক বলেন, কার পৃথিবী বদলায়নি? প্রত্যেকেরই জীবন বদলে গেছে। রাস্তার ফকির থেকে শুরু করে যে নাকি বিলিওনিয়ার তারও জীবন বদলে গেছে। আমরা যে জীবনের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম সে জীবন সম্পূর্ন বদলে গেছে। তিনি প্রেসিডেন্ট হোন, প্রধানমন্ত্রী হোন, রাস্তার ভিখারিই হোন প্রত্যেকেরই জীবন বদলে গেছে। আর এই বদলে যাওয়া পৃথিবীটা আমাকে শেখাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি আবার সেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যেতে চাই। যে জীবনে আমি মুক্ত মনে স্বাধীনভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারব, দোকানে গিয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারব, কফির দোকানে গিয়ে আমি কফি খেতে পারবো। বইয়ের দোকানে গিয়ে বই ঘাঁটতে পারব, বই কিনতে পারব। ছায়ানটে গিয়ে গান শুনতে পারব। সেই পুরোনো জীবনে ফিরতে চাই। কিন্তু আমি সেই পুরনো জীবনে এমন পরিবর্তন চাই, যাতে এই ধরণের মহামারীতে মানুষ বিপন্ন না হয়। তার মানে হলো আমাদের সরকার এবং পৃথিবীর সব দেশ, যাদের উপর আমরা নির্ভর করছি, তাদেরকে এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে স্বাস্থ্য খাতে অনেক বরাদ্দ বাড়ানো হয়। এবং সেই স্বাস্থ্য সেবা যাতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। সুতরাং আমি স্বাভাবিক জীবন এবং পুরোনো জীবনে এই শর্তে, সেখানে যে সব অন্যায় ছিল, যা ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল গভর্নেন্সে সুশাসনের ক্ষেত্রে সেগুলো যাতে দূর করা হয়। আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশ করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারবে? জবাবে এই শিল্প সমালোচক বলেন, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ এটা তো আমাদের উপর নির্ভর করছে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের উপরও নির্ভর করছে। তবে, বাংলাদেশ এর ধাক্কা কাটিয়ে তো উঠবেই। আমরা অনেক সংকট কাটিয়ে উঠেছি। এটাও কাটিয়ে উঠব। প্রশ্ন হলো, কতো মূল্যে? কোন মূল্যে? কতো জন মারা যাবে? এই যে মানুষ মারা যাবে এদের সংখ্যা আমরা জানি না। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও উচিৎ এবং কর্তব্য আছে, সরকারের তো উচিতই এই সংখ্যাকে যতদূর সম্ভব নীচে নামিয়ে আনা। কিন্তু সরকার তো লকডাউন তুলে দিল? তিনি বললেন, দরকার হলে তুলে দেবে। আবার যেখানে প্রয়োজন সেখানে দেবে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সব দেশেই এমনটা হচ্ছে। তবে লকডাউন তুলে নেয়ার ফলে লোকজন বেশি অসতর্ক হয়ে যাচ্ছে, এ অসতর্কতাও কেবল আমাদের দেশেই নয়, সব দেশেই। এর ফলে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সেদিন খবরে দেখলাম, সরকার বলল, তিন ভাগে ভাগ করা হবে। লাল, সবুজ, হলুদ। লাল এলাকাগুলোকে আবার লকডাউন করা হবে। সরকার নিশ্চিন্ত হয়ে বসে নেই। এটা ভালো লক্ষণ। নাগরিকদেরও এটা অনুসরন করতে হবে। নিয়মনীতি পালন করেই চলতে হবে। আপনার জীবদ্দশায় করোনার মতো কোনো ভাইরাসের দেখা মিলেছে? এই প্রবীণ লেখক বলেন, আমি নয় কেবল, মানুষ জাতির কোনো সদস্য যারা জীবিত আছে, যারা মারা গিয়েছে, তারাও দেখেনি। সভ্যতার ইতিহাসে এরকম ঘটনা আর ঘটে নি। আপনার কি মনে হচ্ছে একাত্তরের মতোই যুদ্ধ করছি আমরা? সংবেদী এই লেখক বললেন, দুটো দু’ধরণের যুদ্ধ। একটা অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আর একাত্তরে ছিল দৃশ্যমান শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ। দুটো দু’রকমেরই যুদ্ধ। কোনোটার সাথে কোনোটার তুলনা চলে না। এখন অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App