সহসাই মাঠে গড়াচ্ছে না খেলাধুলা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২০, ১১:৪৩ এএম
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন অফিস। সরকারি সিদ্ধান্তে অবশেষে ৬৬ দিন পর খুলে যাচ্ছে সেসব অফিস । ৩১ মে (রবিবার) থেকে শর্ত সাপেক্ষে সরকারি-বেসরকারি অফিসে কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদের মতো অনেক ক্রীড়া ফেডারেশনের বন্ধ দরজাও খুলতে যাচ্ছে। অর্থাৎ স্বল্প পরিসরে উন্মুক্ত হচ্ছে ক্রীড়াঙ্গন।
স¤প্রতি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গতকাল ৪০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন, নতুন প্রায় আড়াই হাজার মানুষ করোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় মাঠে ক্রিকেট ফিরিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
১৭ মার্চ থেকে গৃহবন্দি হয়ে আছেন তামিম-মুশফিকরা। সরকার অঘোষিত লকডাউন তুলে দেয়ার পর ধারণা করা হচ্ছিল ক্রিকেটারদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা দূর হবে। আবার তারা মাঠে নামবেন। কিন্তু বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কথায় সেটি আর দ্রুতই ঘটছে না।
ক্রিকেটারদের জন্য শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত না করে মাঠে ক্রিকেট ফেরানোর ঝুঁকি বিসিবি নিতে চায় না বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘মাঠে ক্রিকেট ফেরানোর ভাবনাটা আমাদের আছে। কিন্তু আমরা এ অবস্থায় ঝুঁকি নিতে চাই না। প্রথমে আমরা অফিস প্রস্তুত করব, জীবাণুনাশ করতে যা যা করা প্রয়োজন করব, খেলোয়াড়দের অনুশীলন সুবিধা শতভাগ নিশ্চিত করতে যা যা করার সেগুলো করবো।’
সম্ভাব্য দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতেই তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রশাসন, ‘আমাদের আইসিসির এফটিপিতে অনেক ম্যাচ রয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেট মৌসুমের অর্ধেক প্রায় শেষ। আমরা সুরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি নিশ্চিত করে আইসিসির প্রটোকল মেনে অনুশীলন করতে পারলে অবশ্যই ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করব। এখানে তাড়াহুড়ো করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায় তো ক্রিকেট বোর্ডের ঘাড়েই আসবে।’
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অফিস গতকাল থেকে সব বিধি মেনে খুলে দেয়া হয়েছে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মেনে আমরা অফিস খুলতে যাচ্ছি। এরজন্য সবরকম বিধি মানতে হবে। শুরু থেকে অবশ্য আমাদের সব কর্মীদের জন্য অফিস বাধ্যতামূলক নয়। যে বিভাগের কাজ আছে তাদের নিয়েই অফিস করতে চাই। যদিও আমরা করোনার শুরু থেকে জরুরি যেসব কাজ করার দরকার ছিল সেটা করেছি। বলতে গেলে আমাদের কোনো কাজ থেমে নেই।’
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই স্থগিত থাকা বাফুফের নির্বাচনের তারিখও পুনর্নির্ধারণ হবে। সোহাগ বলেছেন, ‘আমরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। সবকিছু বিবেচনা করেই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হবে।’
বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনও (বিওএ) সব কর্মীর অফিসে আসা বাধ্যতামূলক করছে না। বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেছেন, ‘করোনার কারণে আমাদের জরুরি কোনো কাজ থেমে নেই। বাসায় থেকে যতটুকু সম্ভব কাজ করে যাচ্ছে সবাই। তবে আজ থেকে অফিস খোলা। যাদের প্রয়োজন আছে তারাই অফিসে আসবে। বাকিরা বাসা থেকে কাজ করবে। পরিস্থিতির আরো উন্নতি হলেই আমরা বাংলাদেশ গেমসসহ অন্য বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করতে পারব।’
হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূর বলেছেন, ‘অফিস খোলার দিনে কিছু সময়ের জন্য সবাই যাবে। কিছু কাজ ঝুলে আছে। তবে এখনই আমরা কোনো প্রতিযোগিতা শুরুর চিন্তাভাবনা করছি না।
আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিব উদ্দিন চপলও সতর্ক, ‘আসলে খেলাধুলা আয়োজন করতে গেলে সবকিছুই দেখতে হয়। আমরা হয়তো জরুরি কাজের জন্য অফিস খোলা রাখতে পারি। কিন্তু এখনই খেলা আয়োজন কিংবা ট্রেনিং শুরু করা কঠিন। আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।’
আজ থেকে খুলছে বিসিবি কার্যালয়ও। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দুই মাসের সাধারণ ছুটি শেষে আবার সরব হচ্ছে দেশের অফিস-আদালত। প্রজ্ঞাপন অনুসারে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সরকারি-বেসরকারি-আধা-শাসিত-স্বায়ত্তশাসিত অফিস সীমিত পরিসরে চালু করা হবে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর সোমবার থেকে স্বল্প পরিসরে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করাও ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা স্বল্প পরিসরে আমাদের কার্যক্রম শুরু করার আশা করছি। আমরা অফিসে না এসে এতদিন বাসা থেকে কাজ করেছি। তবে আমরা এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে চাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশা করি আমরা স্বল্প পরিসরে অফিস করতে পারব।’
কার্যক্রম শুরু করলেও এই নিয়ে কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীদের অফিস করা নিয়ে কোনো চাপ থাকবে না বলেও জানান বিসিবির প্রধান নির্বাহী। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের কার্যক্রম অন্যান্য অফিসের তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ, সে কারণে আমরা ধীরে ধীরে আমাদের কাজ শুরু করব। যারা বাসা থেকে অফিস করতে চাইবে, তাদের আমরা অনুমতি দেব। আস্তে আস্তে আমরা অফিসে কার্যক্রম মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব’।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষায় অন্যান্য অফিসের মতোই শুরু থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছিল বিসিবি কার্যালয়। বোর্ড কর্মকর্তারা এতদিন বাসা থেকেই কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।