×

সারাদেশ

সংক্রমণে সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকা এখন চট্টগ্রাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২০, ১২:০২ পিএম

দেশে করোনা সংক্রমণের দিক থেকে ‘হটস্পট’খ্যাত নারায়ণগঞ্জকে পেছনে ফেলেছে চট্টগ্রাম। সর্বশেষ শনিবার রাতে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে একদিনে আরো ২৭৯ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্তের পর চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৬৭ জনে। আর শনিবার পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে মোট করোনা আক্রান্ত ছিল ২৫৩২ জন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের প্রায় একমাস পরে চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। সংক্রমণ শুরুর প্রথম মাসে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দ্বিতীয় মাসে চট্টগ্রামে করোনার দ্রæত বিস্তার ঘটে। সেই হিসাবে দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকা এখন চট্টগ্রাম। মানুষের অবাধ বিচরণ ও সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও চট্টগ্রামের প্রবেশ পথে অনিয়ন্ত্রিত যানচলাচল অব্যাহত থাকায় চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসের বিস্তার দ্রুত ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল রবিবার দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ২৮৬৭। গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার একমাস পর গত ৩ মে (রাত পর্যন্ত) চট্টগ্রামে মোট করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় ৮১ জন। অথচ গত ২৮ দিনে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ২৭৮৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২২৪ জন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৫ জন। শনিবার মধ্যরাতে প্রকাশিত নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, শনিবার চট্টগ্রামের ১২১৯টি নমুনা পরীক্ষায় আরো ২৭৯ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এর মধ্যে মহানগর এলাকার ১৮৮ জন এবং বিভিন্ন উপজেলা ৯১ জন। ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি ল্যাব বন্ধ থাকায় গত ৩ দিনের ৮১৬টি নমুনা পরীক্ষা করেছে ঢাকার আইইডিসিআর। এর মধ্যে ১১৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। চমেক ল্যাবে ২৬০টি নমুনা পরীক্ষায় ১২০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। সিভাসুর ল্যাবে পরীক্ষা হয় ১৩৮ জনের নমুনা। এতে ৪২ জনের পজিটিভ ধরা পড়ে। এছাড়া কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ (কমেক) ল্যাবে চট্টগ্রামের ৫টি নমুনা পরীক্ষায় একজনের করোনা পজিটিভ এসেছে। এদিকে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রামে আরো ৭ জনের মুত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পার্সোনাল অফিসার (পিএ) মো. আব্দুল মান্নান (৪৫) মারা গেছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর যান্ত্রিক বিভাগের স্টাফ আবদুর রশিদ মিয়াজিরও (৪৫) মৃত্যু হয়েছে করোনার উপসর্গে। গতকাল রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল মন্নান মারা যান। এর আগে শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর যান্ত্রিক বিভাগের হাইস্টার অপারেটর আবদুর রশিদ মিয়াজির মৃত্যু হয়। এছাড়া করোনা উপসর্গ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সাবরিনা ইসলাম সুইটি (৫৩)। তিনি নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল রবিবার সকালে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহমেদ সাবিত (৬৮) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের আরো চারজন মারা গেছেন। চবি প্রকৌশল দপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হুমায়ুন কবির ভ‚ঁইয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চবির নাট্যকলা বিভাগের সহকারী গ্রন্থাগারিক মাহবুবুল আলম মাসুমও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। এছাড়া চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোদ্দাচ্ছির হোসাইনের বাবা এবং একই বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফরিদা নাসরিনের বাবা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শিক্ষক, চিকিৎসক বা কর্মকতা-কর্মচারীদের জন্য দেয়া নির্দেশনায় সংশোধন আনা হয়েছে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসে আইসোলেশনে গেলে অনুপস্থিত থাকার নির্দেশনার অংশটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামীম হাসান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চমেকের যেসব শিক্ষক, চিকিৎসক বা কর্মকর্তা-কর্মচারী কোভিড-১৯ পজিটিভ হবেন, কেবল তারাই ১০ দিনের আইসোলেশনে যাওয়ার বা হাসপাতালে অবস্থানের সুযোগ পাবেন। যথাযথ সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করে করোনা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসবেন তারা পরবর্তী দিনগুলোতে রোস্টার নীতি মেনে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। যেসব শিক্ষক, চিকিৎসক বা কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা পজিটিভ কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যদি একই ফ্ল্যাট বা বাসায় অবস্থান করে থাকেন এবং ওই ফ্ল্যাট বা বাসা যদি লকডাউনও করে দেয়া হয়, তবুও ওই শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে লকডাউনের আওতার বাইরে গিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত হতে হবে। সব শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অফিস সূচি অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App