শিক্ষার্থীদের আত্মহনন প্রবণতা ও অভিভাবকদের সচেতনতা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২০, ০৪:৪৪ পিএম
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার সব সূচকেই এবার ভালো ফলাফল করেছে শিক্ষার্থীরা। পাসের হার ও জিপিএ ৫ বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল এই ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীর প্রতি আমাদের অভিনন্দন। এবার ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের এ চ‚ড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন পাস করেছে। ৯টি সাধারণ বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিলে ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনালে ৭১ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এবার পাসের হার এবং জিপিএ ৫ দুদিক থেকেই সংখ্যায় এগিয়ে আছে মেয়েরা। ফলাফলে দেখা গেছে, এবার পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছরেই সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৩০৪ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার খবর আসছে। এমন খবর আমরা প্রতি বছর পেয়ে থাকি। সন্তান ভালো করুক প্রত্যেক মা-বাবা আশা করেন। আসলে যা কিছু ভালো, আকর্ষণীয় তার প্রতি সবারই আকাক্সক্ষা থাকে। কিন্তু সবক্ষেত্রে কি ভালো করা সম্ভব? বিশেষ করে এসএসসির ফলাফলের পর দেখা যায় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতার খবর। এমন খবর সত্যিই বেদনাদায়ক। এবারো পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া সেই সঙ্গে কাক্সিক্ষত ফল না করায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪ কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনার জন্য মা-বাবা কিংবা শিক্ষকরা দায়ী থাকেন। এখনকার মা-বাবা সন্তানের পরীক্ষার ফলকে সামাজিক সম্মান রক্ষার হাতিয়ার বলে মনে করেন। প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন না করতে পারলে ভর্ৎসনা তিরস্কার, গালাগাল এমনকি শারীরিক নির্যাতন করা হয় তাদের ওপর। এমন আচরণ তাদের আত্মসম্মানবোধে লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। ফলাফল খারাপ হলেই যে আপনার সন্তান জীবনে সফল হতে পারবে না, তা নয়। অনেক মানুষই আছেন যারা হয়তো একাডেমিক জীবনে ব্যর্থ। কিন্তু কর্মজীবনে সফল। ভালো ফল দিয়ে নয় বরং মানবিকতার চর্চায় যারা আজ সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন সেসব ব্যক্তিত্বের উদাহরণ দিয়ে সন্তানদের অনুপ্রেরণা দিতে হবে। একটি পরীক্ষা ভালো না হলেই আপনার সন্তানের জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে না। ব্যর্থ না হয়ে সফলও তো হওয়া যায় না। তাকে সুযোগ দিয়ে দেখুন। আবারো সে প্রস্তুত হোক, কারণ কোনো একদিন সে সুযোগ কাজে লাগাবে। একজন অনন্য শিক্ষার্থী পড়বে জ্ঞানের জন্য। নম্বর কিংবা রেজাল্ট হবে তার বাই-প্রোডাক্ট। পড়াশোনা তো জীবনের জন্য, পড়াশোনার জন্য জীবন নয়।