×

রাজধানী

মামলা করতে চায় নিহত লিটনের পরিবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২০, ১২:২৭ পিএম

মামলা করতে চায় নিহত লিটনের পরিবার

টর্ট আইন ছাড়াও ফৌজদারি বিধিতে মামলা হতে পারে

গুলশানের অভিজাত ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগার পর ভেতরে থাকা রোগীদের একজনও কেন বের হতে পারলেন না- তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এমন প্রশ্নের উত্তর না পেলেও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ওই ইউনিটের একমাত্র দরজাটি ছিল বাইরে থেকে বন্ধ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত কারণেই প্রাণ হারিয়েছেন ৫ রোগী।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে নিহত রিয়াজুল আলম লিটনের পরিবার জানিয়েছে, এ ঘটনায় তারা মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আইনজীবীদের সঙ্গেও তাদের কথা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। বিচার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঘটনায় টর্ট (ঞড়ৎঃ) আইনে মামলা হতে পারে। অন্যদিকে ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা না বললেও গতকাল শনিবার ফোন করে সাক্ষাতে কথা বলতে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহত এক রোগীর স্বজন। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কেউ এখনো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলেও জানান তারা। আর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্ত শেষেই সব কিছু বলা সম্ভব হবে।

গত বুধবার রাত ৯টা ৪৮ মিনিটের দিকে ওই হাসপাতালে থাকা এক রোগীর স্বজন জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে আগুনের খবর জানান। পরে ভাটারা থানা থেকে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানায়, রাত ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের করোনা ইউনিটের আইসোলেশন সেন্টারে এসি বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণ করা হচ্ছে। রাত ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তার আগেই আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন খোদেজা আক্তার (৭০), রিয়াজুল আলম (৪৫), মো. মাহবুব (৫০), মো. মনির হোসেন (৭৫) ও ভারনন এ্যান্থনী পল (৭৪) পুড়ে মারা যান।

আগুনে নিহত বৃদ্ধ খোদেজা আক্তারের ছেলে আলমগীর ভোরের কাগজকে জানান, তার মা করোনা প্রাদুর্ভাব নিয়ে ঈদের পরের দিন হাসপাতালটিতে ভর্তি হন। হাসপাতালটির একজন পরিছন্নতাকর্মী তাকে জানিয়েছিলেন, কক্ষটিতে চিকিৎসক ও নার্সরা তেমন যান না। অধিকাংশ কাজ তাদের দিয়েই করানো হয়। আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, আগুনে হাসপাতালের কারোই কিছু হলো না শুধু মারা গেলেন রোগীরা। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কেউ যোগাযোগ না করলেও গতকাল শনিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে এক নারী ফোন দিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছেন।

আগুনে নিহত রিয়াজুল আলম লিটনের বড় ভাই রইসুল আজম ডাবলু গতকাল টেলিফোনে ভোরের কাগজকে জানান, তার ভাইয়ের ৮ বছর বয়সী সন্তান আইমান বাবার মৃত্যুর বিষয়টি এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। খালি জানতে চাইছে- তার বাবা আসছে না কেন? এরই মধ্যে সে বাবার কবরে চিঠিও লিখে এসেছে- দ্রুত বাসায় আসতে। এটুকু বলেই চুপ হয়ে যান ডাবলু। কিছুক্ষণ পর কান্না চেপে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরার ভাই অবহেলাজনিত কারণে মারা গেছে। করোনা প্রাদুর্ভাব নিয়ে ভর্তি হলেও শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন না সে। এমন ঘটনা থেকে বাঁচতে আরো দুজনকে কাঁধে নিয়ে বের হওয়ার মতো শক্তি ও সামর্থ্য ছিল আমার ভাইয়ের। আমরা মনে করছি, আইসোলেশন সেন্টারটির দরজা বন্ধ ছিল। অবহেলায় মারা গেছে আমার ছোট ভাই। এ কারণেই মামলার কথা ভাবছেন তারা।

এ বিষয়ে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশে একটা প্রচলিত আইন আছে, যার নাম হচ্ছে- টর্ট। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ আইনটি খুব প্রচলিত। এই আইনের বলে, অবহেলাজনিত কারণে যদি কারো মৃত্যু বা ক্ষতিসাধন হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার আছে। অপরাধ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং জেল-জরিমানা এমনকি আরো কঠোর শাস্তিরও বিধান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, একবার এক রোগীর অবহেলাজনিত মৃত্যুর কারণে বেসরকারি হাসপাতাল ল্যাব এইডকে জরিমানা করা হয়েছিল। এছাড়া ফৌজদারি দণ্ডবিধি ৩০৪-এর আলোকেও এ রকম অপরাধের বিচার করা সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App