×

স্বাস্থ্য

দুই সপ্তাহের মধ্যেই গণস্বাস্থ্য কিটের ভাগ্য নির্ধারণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২০, ০৫:০৭ পিএম

পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন হওয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিটের সক্ষমতার যাচাইয়ের রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহ দুইয়েকের মধ্যেই এই কিটের ভবিষ্যৎ কী তা জানা যাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ল্যাবে গণস্বাস্থ্যের কিটের সক্ষমতা যাচাইয়েরর রিপোর্ট আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই জানা যাবে। ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাসই দিয়েছেন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। আর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, কার্যকারিতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই গণস্বাস্থ্যের কিট বাজারে আসার অনুমতি পাবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৩ মে থেকে রক্তের মাধ্যেমে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত কিটের সক্ষমতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে বিএসএমএমইউ ল্যাব। কিন্তু গত ২০ মে লালা থেকে কিটের সক্ষমতা যাইয়ের আবেদন করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আর এ কারণেই বহুল আলোচিত গণস্বাস্থ্য উৎপাদিত কিটের অনুমোদন পেতে এত দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএসএমএমইউ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের গবেষণার কাজ থেমে নেই। তবে গবেষণায় কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রথমে রক্তের মাধ্যমে কিটের সক্ষমতা যাচাইয়ের আবেদন করেছিলো। এখন তারা লালার মাধ্যমে কিটের সক্ষমতা যাইয়ের জন্য আবেদন করেছে এবং এর জন্য কিটও জমা দিয়েছে। এর জন্য তো কিছুটা সময় দরকার। আমরা বসে নেই। আমাদের কাজ চলছে। আশা করছি শিগগিরেই রিপোর্ট জানাতে পারবো।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা পরীক্ষার কিট উদ্ভাবনকারী দলের প্রধান অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল ভোরের কাগজকে বলেন, এ কথা সত্য যে গবেষণায় পরিবর্তন এসেছে। তাছাড়া গবেষণার কাজ এবং কিটের অনুমোদন পেতে কয়েকটি পদ্ধতি বা ধাপ আমাদের অনুসরণ করতেই হবে। এন্টিবডি ও এন্টিজেল এই দুই পরীক্ষার জন্যই গণস্বাস্থ্য কিট উদ্ভাবন করেছে। একটি হচ্ছে ভাইরাস ডায়াগনোসিস করার টেস্ট, আরেকটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু তৈরি হয়েছে তার টেস্ট।

প্রথমে আমরা রক্তের মাধ্যমে এন্টিবডি পরীক্ষার জন্য কিট দিয়েছিলাম। পরে ২০ মে লালার মাধ্যমে এন্টিজেল পরীক্ষার জন্য নমুনা কিট জমা দেই। আমি যতদূর জানি এন্টিবডি টেস্টের কাজ শেষ পর্যায়ে। এন্টিজেনের পরীক্ষাও দ্রুত শেষ হবে বলে আমি আশা করি। একটি আশার কথা হলো র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টিং কিট আমরাই প্রথম উদ্ভাবন করেছি। এখনো পর্যন্ত কোথাও এই কিট আবিষ্কৃত হয়নি।

কিটের কার্যকারিতায় কতটা আশাবাদী এ প্রসঙ্গে এই অনুজীব বিজ্ঞানী বলেন, কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষায় আমরা পাস করবো এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ফাইনাল পরীক্ষা করবে বিএসএমএমইউ’র একটি বিশেষ কমিটি। সেই কমিটির প্রতিবেদন যাবে প্রতিষ্ঠানের ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে। তিনি দেখে চূড়ান্ত অনুমতির জন্য পরে পাঠানো হবে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে। তবে বিএসএমএমইউ ‘ওকে’ বললেই সব ঠিক।

আমরা আশা করছি, জনস্বাস্থ্যর কথা বিবেচনা করে খুব শিগগিরই আমরা ইতিবাচক রেজাল্ট পাবো। কারণ করোনা কালীন এই পরিস্থিতিতে সরকার গণস্বাস্থ্যের কিটের অনুমোদন দিলে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ নমুনা পরীক্ষার আওতায় আসবে। কম সময়ে দ্রুত রেজাল্ট পাবে। এতে মানুষের ভোগান্তি যেমন কমবে তেমনি বেশি সংখ্যক রোগী শনাক্ত হলে তাদের আইসোলেশনে আনার কাজটাও সহজ হবে। এতে করে সংক্রমণ কমবে বলে মত দেন এই অনুজীব বিজ্ঞানী।

প্রসঙ্গত চলতি বছরের ১৭ মার্চ করোনা পরীক্ষায় ‘জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট’ কিট উৎপাদনে যাবার কথা জানিয়ে ১৯ মার্চ কিট উৎপাদন শুরু করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানের গবেষক ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন, ড. ফিরোজ আহমেদ এই কিট তৈরি করেন। ১১ এপ্রিল সরকারের কাছে এই হস্তান্তরের কথা থাকলেও বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক ক্রটির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

২৫ এপ্রিল কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠনের আয়োজন করা হলে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং বিএসএমএমইউ’র প্রতিনিধির কাছে কিট হস্তান্তর করা হয়।

পরদিন ২৬ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে উদ্ভাবিত কিট পৌঁছে দেয় গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনদিন চলে এই কিটের পরীক্ষা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক। অবশেষে ৩০ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বিএসএমএমইউ বা আইসিডিডিআরবিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার অনুমতি দেয়। কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠানের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুমকে প্রধান করে ২ মে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ১২ মে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ নমুনা কিট ও পরীক্ষার খরচ বাবদ অর্থ ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য গণস্বাস্থ্যকে চিঠি দেয়। ১৩ মে ব্যাংকে অর্থ এবং বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের হাতে নমুনা কিট হস্তান্তর করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এরপর ২০ মে রক্তের পরিবর্তে লালা থেকে কিটের সক্ষমতা যাইয়ের আবেদন করে গণস্বাস্থ্যের কর্তৃপক্ষ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App