×

জাতীয়

জুনে আসবে আরো বড় ধাক্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২০, ০১:১৩ পিএম

শনাক্তের ৮২ ও মৃত্যুর ৭১ শতাংশই হয়েছে ক্রিটিক্যাল মে’র ২৯ দিনে

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে চলতি মে মাসকে অনেক আগেই ‘ক্রিটিক্যাল’ বলে ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। মাস শেষ হওয়ার দুই দিন বাকি। ইতোমধ্যেই ক্রিটিক্যাল মে মাসের নজির অনেকটাই সামনে এসে গেছে। দেশে এ পর্যন্ত যে সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এর ৭৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ হয়েছে চলতি মে মাসে। মোট আক্রান্তের ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ এবং প্রাণহানির ৭০ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে চলতি মাসের ২৯ দিনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে ৪২ হাজার ৮৪৪ জনের দেহে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৮২ জনের। এর মধ্যে মে মাসে পরীক্ষা করা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৪০১টি নমুনা। ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে ৩৫ হাজার ১৮১টি নমুনায়। আর মে মাসেই মৃত্যু হয়েছে ৪১৪ জনের। দেশে করোনা সংক্রমণের ১২তম সপ্তাহ (২৪-৩০ মে) শেষ হতে এখনো একদিন বাকি। সপ্তাহের শুরুতেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু হয়। ২৪ মে ২৮ জনের প্রাণহানির তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল ২৯ মে সপ্তাহের ষষ্ঠ দিনে শনাক্ত হয় সর্বোচ্চ সংখ্যক সংক্রমিত ব্যক্তি। এ দিন ২ হাজার ৫২৩ জনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। আর গত ছয় দিনে ৫২ হাজার ৩৯২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ভাইরাসের উপস্থিতি মিলে ১০ হাজার ৭৬৬ জনের দেহে। প্রাণহানি হয় ১২৯ জনের। চলতি মাসের ২৯ দিনে নমুনা পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারের সংখ্যা বেড়েছে ১৮টি। পহেলা মে ৩১টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৯ মে এ সংখ্যা হলো ৪৯টি।

মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৯ মে ১১ হাজার ৩০১টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৫২৩টিতে ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয় ২৩ জনের। ২৮ মে থেকে পহেলা মে পর্যন্ত এ সংখ্যা যথাক্রমে ৯ হাজার ৩১০, ২ হাজার ২৯ ও ১৫; ২৭ মে ৮ হাজার ১৫, এক হাজার ৫৪১ ও ২২; ২৬ মে ৫ হাজার ৪০৭, এক হাজার ১৬৬ ও ২১; ২৫ মে ৯ হাজার ৪৫১, এক হাজার ৯৭৫ ও ২১; ২৪ মে ৮ হাজার ৯০৮ এক হাজার ৫৩২ ও ২৮; ২৩ মে ১০ হাজার ৮৩৪ এক হাজার ৮৭৩ ও ২০; ২২ মে ৯ হাজার ৭২৭, এক হাজার ৬৯৪ ও ২৪; ২১ মে ১০ হাজার ২৬২, এক হাজার ৭৭৩ ও ২২। ২০ মে ১০ হাজার ২০৭, এক হাজার ৬১৭ ও ১৬; ১৯ মে ৮ হাজার ৪৪৯, এক হাজার ২৫১ ও ২১; ১৮ মে ৯ হাজার ৭৮৮, এক হাজার ৬০২ ও ২১; ১৭ মে ৮ হাজার ১১৪, এক হাজার ২৭৩ ও ১৪; ১৬ মে ৬ হাজার ৭৮২, ৯৩০ ও ১৬; ১৫ মে ৮ হাজার ৫৮২, এক হাজার ২০২ ও ১৫; ১৪ মে ৭ হাজার ৩৯২, এক হাজার ৪১ ও ১৪; ১৩ মে ৭ হাজার ৯০০ এক হাজার ১৬২ ও ১৯; ১২ মে ৬ হাজার ৭৭৩, ৯৬৯ ও ১১; ১১ মে ৭ হাজার ২০৮, এক হাজার ৩৪ ও ১১; ১০ মে ৫ হাজার ৭৩৮, ৮৮৭ ও ১৪; ৯ মে ৫ হাজার ৪৬৫, ৬৩৬ ও ৮; ৮ মে ৫ হাজার ৯৪১, ৭০৯ ও ৭; ৭ মে ৫ হাজার ৮৬৭, ৭০৬ ও ১৩; ৬ মে ৬ হাজার ২৪১, ৭৯০ ও ৩; ৫ মে ৫ হাজার ৭১১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭৮৬ জন নতুন সংক্রমিত শনাক্ত হয় আর একজনের মৃত্যুর হয়। ৪ মে ৬ হাজার ২৬০, ৬৮৮ ও ৫; ৩ মে ৫ হাজার ৩৬৮, ৬৬৫ ও ২; ২ মে ৫ হাজার ৮২৭, ৫৫২ ও ৫ আর পহেলা মে ৫ হাজার ৫৭৩টি নমুনায় ৫৭১ জন সংক্রমিত ও দুই জনের প্রাণহানির তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের প্রতিদিন যত টেস্ট করা হচ্ছে তার মধ্যে ২২ শতাংশের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে। এই সংক্রমণ আরো বাড়বে। আক্রান্তের এই শতাংশ দিয়ে খুব বেশি কিছু নির্ধারণ করা যায় না। এই হারে যদি চলতে থাকে তাহলে অনেকদিন সংক্রমণ চলবে। রাজশাহী জেলার স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. চিন্ময় দাস ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে প্রতিফলন হয়েছে মে মাসে। সংক্রমণ না কমিয়ে সব কিছু যেভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাতে জুন মাসে আরো বড় ধরনের ধাক্কা আসবে।

জুন মাসেই বাংলাদেশ করোনা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছাবে বলে মনে করছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকেই ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছাতে পারে। তিনি আরো বলেন, সরকার করোনা পরীক্ষার জন্য গণস্বাস্থ্যের কিটের চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে নমুনা পরীক্ষার সুবিধা আরো বেশি সহজ ও বিস্তৃত হতো। গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট দিয়ে ২০ মিনিটেই নমুনা পরীক্ষা করে ফলাফল জানা সম্ভব। এতে করে নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে মানুষের যে দুর্ভোগ ও রিপোর্ট পেতে যে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে তা বহুলাংশে কমে যাবে। ফলে বেশি সংখ্যক রোগী শনাক্ত করা গেলে এবং দ্রুত শনাক্ত ব্যক্তিদের আলাদা করা গেলে ধীরে ধীরে সংক্রমণ এবং রোগীর সংখ্যা কমতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App