×

জাতীয়

যে নিয়মে চলবে গণপরিবহন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২০, ০৬:২৪ পিএম

করোনা সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফের গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ৩১ মে থেকে দেশের সব রুটে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। তবে এসব পরিবহন পরিচালনার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা রয়েছে। এ অবস্থায় পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা সরকারের নির্দেশনা মেনেই গণপরিবহন পরিচালনা করবেন। যদিও সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা তা কতটা মানবে তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

বাস, ট্রেন ও লঞ্চ পরিচালনায় কারিগরি টিমের নির্দেশনা: গত ২৮ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতার জন্য ৮ জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গণপরিবহন পরিচালনা ক্ষেত্রে কমিটি এরইমধ্যে বেশ কিছু কারিগরি নির্দেশনা তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, স্টেশনগুলাতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সংরক্ষণ, জরুরি পরিকল্পনা প্রণয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্র স্থাপন, প্রতিটি ইউনিটের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কর্মীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক অবস্থা নথিভুক্ত করতে হবে। অসুস্থতা অনুভবকারীদের সঠিক সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। নিরাপত্তা এবং জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি মানসম্মত করতে হবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। মাস্ক, গ্লাভস ও জীবাণুনাশক মজুত থাকতে হবে। কর্মীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক অবস্থা নথিভুক্ত করতে হবে। যারা অসুস্থতা অনুভব করবে তাদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিতে হবে।

স্টেশনে আগত যাত্রীদের তাপমাত্রা মাপার জন্য স্টেশনে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার রাখতে হবে। যথাযথ শর্তাবলি মেনে একটি জরুরি এলাকা চিহ্নিত করতে হবে। যেসব যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকবে তাদের ওই জরুরি এলাকায় অস্থায়ী কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে এবং প্রয়োজন মতো চিকিৎসা দিতে হবে। পোস্টার ও ইলেকট্রনিক স্ক্রিনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যজ্ঞান পরিবেশন জোরদার করতে হবে। মাঝারি ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা ট্রেনে টিকিটের মাধ্যমে যাত্রীসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও যথাসম্ভব যাত্রীদের আলাদা বসার ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিবহনে বায়ু চলাচল পদ্ধতি যেন স্বাভাবিক থাকে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যথাযথ তাপমাত্রায় বায়ু চলাচলের জন্য পরিবহনের জানালা খুলে দিতে হবে। চলাচলের স্থানগুলো পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। টয়লেটগুলোতে তরল সাবান থাকতে হবে। সম্ভব হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং হাত জীবাণুনাশক যন্ত্র স্থাপন করা যেতে পারে। যাত্রীদের অপেক্ষা করার স্থান, বাস কম্পার্টমেন্ট ও অন্যান্য এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

প্রতিবার বাস, ট্রেন বা লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার আগে সিট, কেবিন, পরিবহনের মেঝে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জনগণের জন্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলো পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে। সিট কাভারগুলোকে প্রতিনিয়ত ধোয়া, পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যাত্রীদের অপেক্ষা করার স্থানে মাস্ক, গ্লাভস ও জীবাণুমুক্তকরণ দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত মজুত থাকতে হবে। সব পরিবহনে হাতে ধরা থার্মোমিটার থাকতে হবে। যথাযথ স্থানে একটি জরুরি এলাকা স্থাপন করতে হবে। যেখানে সন্দেহজনক উপসর্গ আছে এমন যাত্রীদের অস্থায়ী কোয়ারেন্টিনে রাখা যাবে। যাত্রী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে।

যাত্রীদের অনলাইনে টিকিট কেনার পরামর্শ দিতে হবে। সারিবদ্ধভাবে ওঠা এবং নামার সময়ে যাত্রীদের পরস্পর থেকে এক মিটারেরও বেশি দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। যাত্রীদের স্বাস্থ্য সচেতন করার জন্য রেডিও, ভিডিও ও পোস্টারের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদান করতে হবে। তবে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে এখনো পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত হতে পারেনি পরিবহন মালিকরা।

যা বলছেন পরিবহন মালিকরা: পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তারা এই বিষয়গুলো মেনে গণপরিবহন পরিচালনা করবেন। তবে বিষয়টি কতটা মানা যাবে তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এজন্য সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। আর যেহেতু একটি বাদ রেখে অপর আসন বিক্রির নির্দেশনা রয়েছে সে হিসেবে যাত্রীসংখ্যা অর্ধেকের চেয়েও কম হবে। সে কারণে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের দাবি করেছেন পরিবহন মালিকরা। তারা বলেছেন, যাত্রী যেহেতু অর্ধেকে নেমে যাবে তাই ভাড়াও দ্বিগুণ করতে হবে। আর এ নিয়ে আগামীকাল বিআরটিএ’র সঙ্গে বাস মালিক এবং বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে লঞ্চ মালিকদের বৈঠক হবে। সেখানে ভাড়াসহ সার্বিক বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হবে।

যেসব দায়িত্ব পালন করবে সিটি করপোরেশন নগরীর বাস টার্মিনালগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) নিতাই চন্দ্র সেন বলেন, করোনা শনাক্তের শুরুর দিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে ডিটিসিএ একটা মিটিং করেছে। সেখানে কীভাবে পরিবহন পরিচালনা করতে হবে তা বিস্তারিত বলে দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে স্বাস্থ্যবিধিও প্রণয়ন করা হয়েছে। এখানে মূল কাজগুলো পরিবহন মালিকদেরই করতে হবে। আমরা শুধু এনফোর্সমেন্টটাই নিশ্চিত করবো। আর আমাদের জীবাণুনাশক ছিটানো অব্যাহত রয়েছে। যেসব স্থানে জীবাণুনাশক ছিটাতে হবে সেসব স্থানে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

যেভাবে পরিচালিত হবে ট্রেন এদিকে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩১ মে থেকে অল্প সংখ্যক ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। এজন্য এরইমধ্যে একটি রোডম্যাপও তৈরি করা হয়েছে। এসব ট্রেনে একটি করে সিট ফাঁকা রেখে টিকিট বিক্রি করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সংখ্যা কমিয়ে দুটি গ্রুপে ভাগ করে ট্রেন পরিচালনা করা হবে। এরমধ্যে প্রথম ‘ক’ গ্রুপে রাখা ট্রেনগুলো ৩১ মে থেকে পরিচালনা করা হবে। এই ট্রেনগুলো হচ্ছে- ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ঢাকা-সিলেট রুটে কালনী এক্সপ্রেস, ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, ঢাকা-রাজশাহী রুটে বনলতা এক্সপ্রেস, ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে লালমনি এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে উদয়ন/পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-খুলনা রুটে চিত্রা এক্সপ্রেস।

আর ‘খ’গ্রুপে রাখা ট্রেনগুলো ৩ জুন থেকে পরিচালনা করতে সুপারিশ করা হয়েছে। এই ট্রেনগুলো হচ্ছে, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস, ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নীলসাগর এক্সপ্রেস, খুলনা-চিলাহাটি রুটে রূপসা এক্সপ্রেস, খুলনা-রাজশাহী রুটে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, রাজশাহী-গোয়ালন্দঘাট রুটে মধুমতি এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে মেঘনা এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-নোয়াখালী রুটে উপকূল এক্সপ্রেস। তবে ট্রেনে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

ট্রেন চালুর বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে কিছু আন্তনগর ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে যে রুটে পাঁচটি আন্তনগর ট্রেন চলতো, সেই রুটে এখন দুটি ট্রেন চলবে। সেক্ষেত্রে একটা সিট বাদ দিয়ে টিকিট বিক্রি করা হবে। এভাবে আমরা দুই সপ্তাহ ট্রেন চালিয়ে দেখবো। তারপর সরকার থেকে নতুন কোনও নির্দেশনা এলে আমরা আবার বিষয়টি বিবেচনা করব।’

যেভাবে চলবে লঞ্চ একই নিয়ম অনুসরণ করে পরিচালিত হবে লঞ্চ। এজন্য দেশের বড় বড় লঞ্চগুলোর প্রবেশপথে এরইমধ্যে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপন করা হয়েছে। তবে ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে আগামী ৩১ মে থেকে স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাই লঞ্চও চলবে। তবে শর্ত পরিপালনের বিষয়সহ নানাদিক দিয়ে লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান।’ এই সময়ে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App