×

সারাদেশ

সন্তানদের নিয়েই ভয় করোনাযোদ্ধা ডা. লুৎফুন্নাহারের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২০, ০৫:০০ পিএম

সন্তানদের নিয়েই ভয় করোনাযোদ্ধা ডা. লুৎফুন্নাহারের

ডা. লুৎফুন্নাহার

উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া দেশগুলো যেখানে করোনা সংকট মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে সেখানে নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকরা প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীকে সেবা দেয়া একাধিক হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের যেমন আইসোলেশন বা হোম কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে তেমনি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইরত ডাক্তার-নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থকর্মীর মৃত্যুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্ব জুড়ে যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে তাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন দেবদূত।

যশোরের চৌগাছা উপজেলা মডেল হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরাও রক্ষা পাননি সেই করোনা আক্রমণ থেকে। উপজেলার ১৬ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৮ জনই ডাক্তার-নার্স (৪ জন ডাক্তার ৪ জন নার্স) রয়েছেন। ইতোমধ্যে ১৩ জন (৩ জন ডাক্তার ৪ জন নার্স) করোনামুক্ত হয়েছেন। করোনা ক্রান্তিকালে উপজেলায় কর্মরত ডাক্তাদের তিন ভাগে (৬ জন) ভাগ করা হয়েছে। প্রতি ভাগের চিকিৎসকরা ১৪ দিন চিকিৎসাসেবা দেবেন। পরবর্তী ১৪ দিন তারা হোম করেনটাইনে থাকবেন। এতে উপজেলাবাসীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি চিকিৎসকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। এমনটাই মনে করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার লুৎফুন্নাহার।

আপনিও কি ১৪ দিন ডিউটি করেন? হঠাৎ এমন প্রশ্নে হাসতে হাসতেই জবাব দিলেন, না, সেই সুযোগ নেই। নিজের বিবেকের কাছে কখনো প্রশ্নবিদ্ধ থাকবো না। চিকিৎসক হিসেবে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে আমার দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। আসলেও তাই, করোনা ক্রান্তিকালে মহামারির বিরুদ্ধে মানুষ বাঁচানোর এই যুদ্ধে গত 8 মার্চ থেকে একদম সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন ডা. লুৎফুন্নাহার।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের সাহস দেয়া, সচেতন করা এবং হাসিমুখে পরামর্শ দিতে যে কজন ডাক্তারকে দেখা যায় তার মধ্যে ডাক্তার লুৎফুন্নাহার উল্লেখযোগ্য। ভয়ঙ্কর মহামারীর সব ভয়কে জয় করে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এই চিকিৎসক।

উপজেলাতে কেউ করোনা পজেটিভ হলে খুব কষ্ট পান তিনি। অতঃপর সেই রোগীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা, ওষুধ সরবরাহ এমনকি তার বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহে সাহায্য করা ও আক্রান্তদের পরামর্শ দিতে সবচেয়ে কাছে থাকা চিকিৎসকটি হচ্ছেন যশোরের চৌগাছা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার লুৎফুন্নাহার।

ভয় বা আতঙ্কিত হননি তিনি, এমনকি কখনো তাকে একটি পিপিই পরতেও দেখা যায়নি। মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস আর গায়ে একটা ডাক্তারি গাউনেই চিকিৎসা দিতে দেখা যায় এই চিকিৎসককে। বিরক্ত হন না বরং উৎকণ্ঠায় থাকেন যেন উপজেলায় আর কেউ করোনা পজেটিভ না হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে ২০০৫ সালে ইন্টার্ন শেষ করেছেন। পরবর্তীতে বিসিএস পাস করে সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০১০ সালে চাকরিতে যোগদান করেন লুৎফুন্নাহার। যশোর সদরের ইছালী সাব-সেন্টার তার প্রথম কর্মস্থল। তারপর ২০১৯ সালের মে মাসে খুলনার তেরোখাদা উপজেলায় ইউএইচএফপিও এবং ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর চৌগাছায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।

টিআইবিতে কর্মরত শাহনুর রহমানের স্ত্রী ডা. লুৎফুন্নাহারের দুই মেয়ে এক ছেলে। শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর এবং তাদের ছেলে মেয়ে সবাইকে নিয়ে থাকেন যশোর সদরে স্বামীর পৈতৃক বাড়িতে। বড় মেয়ে জারিন তাসনিম এবার এসএসসি দিয়েছে। মেজো ছেলে ইরফান ইফতেখার নার্সারি ও ছোট মেয়ের নুজহাত তাসনিম মাত্র দেড় বছর বয়সী।

সারাদিন পর সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফিরে আসেন ছোট মেয়েটা কোনো কথাই শুনতে চায় না। দৌড়ে এসে কোলে উঠে বসে। চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বলছিলেন, আমার বাচ্চা তিনটা নিয়ে খুব ভয়ে থাকি।

ডা. লুৎফুন্নাহার শুধু একজন চিকিৎসকই নন তিন সন্তানের জননীও। সারাদিন করোনাসহ বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে অসুস্থ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য শেষে যখন একজন মা হয়ে বাড়িতে আসেন তখন সন্তানরা তাকে কাছে পায়। নিঃশঙ্কায় জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App