×

মুক্তচিন্তা

পরিবেশে ফিরছে পরিবর্তন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২০, ০৭:৫৭ পিএম

করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা বা এড়াতে মানুষ তাদের প্রতিদিনের আচরণ এবং স্বভাবসুলভ কাজগুলোতে পরিবর্তন আনছে, এতে পরিবেশের ওপর কিছু সূক্ষ প্রভাব পড়ছে। অদৃশ্য এই ভাইরাস পুরো বিশ্বকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এই সময়ে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না। কোভিড-১৯ মানুষের মধ্যে যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে তার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা যেতে পারে। যেমন বায়ুদূষণের ফলে মানবস্বাস্থ্যে যে প্রভাব পড়েছে তা অল্প হলেও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ২০০৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, যারা বায়ুদূষণের শিকার সার্সে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা তাদের মধ্যে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সার্স, এইচআইভি এইডস এবং হান্টাভাইরাসের মতো সংক্রামক রোগ যা জনবিন্যাস, পরিবেশগত, সামাজিক, প্রযুক্তিগত এবং অন্যান্য বদল নিয়ে আসতে পারে তা ক্রমবর্ধমান। হুয়ের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। যদিও পরিবেশবিদরা বলছেন, পরিবেশের এ পরিবর্তন ক্ষণস্থায়ী। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) নামের সংস্থাটি বলছে, ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ১৪ হাজার ৫০০ টন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব পণ্যের বেশিরভাগই হচ্ছে সার্জিক্যাল মাস্ক, পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, পলিথিন ব্যাগ এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বোতল। এসব বর্জ্যরে বড় অংশ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে, ৩০৭৬ টন। করোনা আক্রমণের পরে পরিবেশ-প্রকৃতি বদলে যাওয়ার এ রকম আরো অনেক খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাংলাদেশের নগরী ঢাকা শহরেও সা¤প্রতিক সময়ে পরিবেশ বদলে যাওয়ার দৃশ্যটি চোখে পড়ার মতন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বাতাসের দূষণ অনেক কমেছে। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা ২৫০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত থাকে। এক জরিপে দেখা গেছে, পর পর কয়েক দিন ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ১৯৫, ১৫৭। যানবাহন ও শিল্প কারখানার কালো ধোঁয়া বর্তমানে ঢাকার আকাশে নেই। সে কারণেই বায়ুদূষণের মাত্রা ৯৩-এ নেমে এসেছে। সুতরাং বলা যায়, যারা বায়ুদূষণের সঙ্গে জড়িত এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যারা তাদের মনিটরিং করবে, উভয়েই যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে ঢাকার বায়ু স্বাস্থ্যকর থাকবে। জীবনযাত্রাকে থমকে দেয়া করোনা ভাইরাস প্রকৃতিতে যেন আশীর্বাদই হয়ে এসেছে। তাই প্রকৃতি নিজের সুষমা, সৌন্দর্যরাশি যেন একের পর এক তুলে ধরেছে। পৃথিবীর সুন্দর শহরগুলোর মধ্যে ইতালির ভেনিস অন্যতম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একাধিক পর্যটক আসেন ওই শহরের সৌন্দর্য দেখতে। তবে এই ভাইরাসের প্রকোপে কার্যত স্তব্ধ গোটা দেশ। তাই ভেনিসে, প্রায়ই খালগুলো ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে এছাড়াও জলের নিচে পরিষ্কারভাবে মাছ দেখা যাচ্ছে। এই ভাইরাসকে রুখতে ইতালির জলপথগুলোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। আপাতভাবে এই ভাইরাসের প্রভাবে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরোক্ষভাবে কিছুটা হলেও উন্নত হয়েছে প্রকৃতি। কমেছে দূষণের মাত্রাও। কমেছে একাধিক বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণও। তারই জেরে এই পরিবর্তন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সংকটময় এই পরিস্থিতিতে আমরা যদি আমাদের পরিবেশবান্ধব অভ্যাসগুলো ত্যাগ না করি, সেটা বরং আমাদের উপকারেই আসবে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষের নেয়া পদক্ষেপের কারণে বেশ কিছু দিনে ভাইরাস বিপর্যস্ত বিশ্বে পরিবেশের নাটকীয় উন্নতি হয়েছে। আশা করা যায় বিশ্ব দ্রুতই করোনার অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভ করবে। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার অভিযান যেন বন্ধ না হয়ে যায়। স্বাস্থ্যসম্মত, দূষণমুক্ত পরিবেশ আমাদের সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন এর জন্য অপরিহার্য। শিক্ষার্থী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App