×

মুক্তচিন্তা

করোনাকালের অর্থনীতি ১

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২০, ০৮:১৪ পিএম

করোনাকালের অর্থনীতি ১
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের হিসাব উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই, কাগজে কলমেই দেখিয়েছে বিশ্বব্যাধি করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতির ৯.৭ ভাগ কেটে নেবে, যার আর্থিক মূল্য ৮.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। চাকরি/কর্মচ্যুতির সংখ্যা দাঁড়াবে ২৪ কোটি ২০ লাখ। একদশক আগে বিশ্বমন্দার সময় এই কর্মচ্যুতির সংখ্যা ছিল করোনাকালের শতভাগের একভাগ। এখন কেবল বঞ্চিত শ্রমমজুরি ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাধির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে দেওলিয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকবে এবং পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতেও দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। ৩০ মে পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাবে ১৯৭টি দেশসহ ২১৩টি দেশ ও টেরিটরিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৫.৭ মিলিয়নের বেশি। মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রেই লাখ ছাড়িয়ে। যুক্তরাষ্ট্র হারাবে ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার- জিডিপির এক দশমাংশ, চীন হারাবে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার- জিডিপির ১১ ভাগ। সফর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ^বাণিজ্য হারাবে ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের টানাপড়েন বাণিজ্যে প্রকটিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। করোনাকাল ভয়ঙ্কর আঘাত হেনেছে জ্বালানি অর্থনীতিতে। তেল উত্তোলনকারীরা বিনে পয়সায় অশোধিত তেল দিতে চেয়েছে, নেয়ার মতো কেউ ছিল না। যখন তেলের দাম শূন্যের নিচে ব্যারেল প্রতি মাইনাস সাড়ে ৩৭ ডলারে পৌঁছে তখন অশোধিত তেল উত্তোলনকারীরা বিনে পয়সায় তেলের সঙ্গে যথেষ্ট টাকাও দিতে চেয়েছে। তবুও নেয়ার মানুষ নেই। কারণ সব দেশেরই রিজার্ভার তেলে টইটুম্বুর। রাখার জায়গা নেই। এমনকি পরিবহনকারী তেলের ট্যাঙ্কার জাহাজও তেলে ভর্তি। এ ধরনের অভিজ্ঞতা- এত ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা পৃথিবীর কখনো হয়নি। প্রবৃদ্ধির ফানুস নিয়ে যাদের মুখে খই ফোটেছে, ডিজিটাল বিপ্লব নিয়ে আত্মরতির পুলক অনুভব করেছে, করোনা ভাইরাস তাদের ও বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে কত ঠুনকো উন্নয়নের এসব প্রতিবেদন। পৃথিবীর ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে অর্থনীতিবিদদের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ (রয়টারের নিজস্ব পছন্দে বাছাই করা অর্থনীতিবিদ) মনে করেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরবর্তী পৃথিবীর অর্থনীতি যেভাবে নিপতিত হয়েছে ঠিকভাবে দ্রুত, একই গতিতে ঠ-এর মতো উঠে আসবে। বাকি চার ভাগই এই আশাবাদে আস্থা রাখছেন না। বছরের প্রথম কোয়ার্টারে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) আর্থিক পৃথিবী বড় ধরনের গর্তে পড়ে যায়। তখনই চীনে করোনা ভাইরাস সংক্রমন শুরু হয়। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে (এপ্রিল থেকে জুন) এসে এই বিশ্বব্যাধি বা প্যানডেমিক সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে এবং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে অনেক উদীয়মান বাজারে তৃতীয় কোয়ার্টারেও (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) এই ব্যাধির প্রকোপ রয়ে যাবে। এই ব্যাধি কত ভয়াবহ হতে পারে, আর্থিক খাতকে কতটা স্থবির করে দিতে পারে পৃথিবীতে শক্তি, সামর্থ্য, সম্পদ ও মোড়লগিরিতে শীর্ষস্থান দখলকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রই সে সাক্ষ্য দেবে। যুক্তরাষ্ট্র এত বেকারত্ব কখনো দেখেনি। ২৭ মে তারিখের এক প্রতিবেদনে সেখানকার বেকার মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেউ মনে করছেন আরো বেশি। অনুন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির অবস্থা অনুমেয়। করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজার। সংখ্যার যথার্থতা নিয়ে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশের সরকারি হিসাবকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। প্লেগ ও স্প্যানিশ ফ্লু চলাকালীন সরকারসমূহ আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যাকে ধামাচাপা দেবার কিংবা প্লেগ মৃত্যুকে ভিন্ন রোগের কারণে মৃত বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। এমনকি বিশ্বব্যাধিজনিত মৃত্যুকে স্টিগমা মনে করে বড় বড় গণমাধ্যমও তাদের স্বজনদের মৃত্যুর কারণ প্যানডেমিক বহিভর্‚ত ভিন্ন কোনো রোগ বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। অর্থনীতির দুয়ার খুলতে হবে, কিন্তু খোলার ক্ষেত্রে প্রধান আশঙ্কা এতে সংক্রমণের নতুন কোনো ঢেউ না আবার সৃষ্টি হয়। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৯৪ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ৬৯ জনই মনে করেন অর্থনৈতিক আরোগ্যের ধরনটা হবে ট আকৃতির, এমনকি এর তলদেশ আরো বিস্তৃত হয়ে আরোগ্যের সময় আরো বেশি বাড়িয়ে দেবে। কেউ কেউ মনে করেছেন আরোগ্যের ধরনটা ড-এর মতো হতে পারে অর্থাৎ পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতির পর আবারো পতন ঘটে পুনরায় তা উর্ধ্বমুখী হবে। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন ভয়াল পতনের পর অর্থনীতি খ অক্ষরের মতো সমতলে রয়ে যাবে। এই অর্থনীতিবিদদের সবাই মনে করছেন দৈনিক আর্থিক প্রবৃদ্ধি শূন্য রেখার নিচে নেমে যাবে। তাদের সাড়া অনুযায়ী এর বিস্তার -০.৩ থেকে -৬.৭ শতাংশ পর্যন্ত। আর্থিক ও মুদ্রানীতির প্রশ্নে যে ৬৯ জন অর্থনীতিবিদ সাড়া দিয়েছেন তাদের মধ্যে ৩৮ জনই মনে করেন করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাধির মুখোমুখি হবার কারণে গৃহীত আর্থিক ও মুদ্রানীতি যথার্থই ঠিক হয়েছে। ২৯ জন মনে করেছেন এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সাড়া অপর্যাপ্ত, ২ জন মনে করেন করোনা আতঙ্কের সঠিক পরিমাপ না করে এ ক্ষেত্রে বড্ড বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। কেউ কেউ যথার্থই বলেছেন করোনা ভাইরাস পৃথিবীতে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়েছে। এর তীব্রতা ও বিস্তার পরিমাপ করা সম্ভব ছিল না। সব মিলিয়ে এটাই স্পষ্ট করে উঠেছে যে পৃথিবীর ঘুরে দাঁড়াতে অনেকটা সময়ই লেগে যাবে। করোনাভাইরাসের দিনে অর্থভাগ্য কোভিড ১৯ পৃথিবীতে যে মন্দা এনে দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন তা ১৯২৯-এর মহামন্দার চেয়েও ভয়াবহ হবে। পৃথিবী যখন কোয়ারেন্টাইনে, কারখানা যখন তালাবন্ধ, ইনস্টিটিউট অব পলিসি রিসার্চ ও আমেরিকানস ফর ট্যাক্স ফেয়ারনেস জানিয়েছে ১৮ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ২ মাস ১ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নেয়ারদের সম্পদের সঙ্গে যোগ হয়েছে ৪০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ। ২০২০-এর প্রথম তিন মাসে ২০১৯-এর তুলনায় ভোক্তার খরচ কমে গেছে ৭.৬ ভাগ, কিন্তু গৃহবন্দি মানুষের অনলাইন শপিং বেড়ে যাওয়ায় আমাজনের জেফ বেজোসের সম্পদে যোগ হয়েছে ১৪৮ বিলিয়ন ডলার। তার সাবেক স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৩৩ ভাগ। এ সময় বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, ওয়ারেন বাফেট, ল্যারি এলিসন, মাইকেল ব্লু মবার্গের সম্পদে যোগ হয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। কিন্তু এ সময় প্রায় ৫ কোটি আমেরিকান চাকরি হারা হয়ে থাকবেন বলে ধারণা করা হয়। এ সময় সাধারণ আমেরিকান শ্রমিকের সাপ্তাহিক আয় সপ্তাহে ৮০৪ ডলার থেকে বেড়ে ৮৪২ ডলারে উঠে। আপাতদৃষ্টিতে এই বৃদ্ধি ভালো মনে হলেও ভেতরের কাহিনী বেদনাদায়ক। কম বেতনের কর্মচারীরাই সবার আগে চাকরি হয়েছেন বেশি বেতনের শ্রমিক তার চাকরি ধরে রাখায় বেতনের গড়টা বেড়ে যায়। মহামন্দার সময়ও একই ব্যাপার ঘটেছিল। করোনাভাইরাসমুক্ত বিশ্ব দেখবে আয়বৈষম্য আগের চেয়েও বেশি বেড়ে গেছে। করোনাকালের মন্দায় যারা বেশি ভোগবেন, মৃত্যুঝুঁকিতে থাকবেন তারাই। করোনামন্দা শুধু আয়বৈষম্যই বাড়াবে না, সম্পদ ও স্বাস্থ্যের বৈষম্যও প্রকট করে তুলবে। মিলিয়নওয়ারি মুত্যুর খতিয়ান মে ২০২০’র প্রথম দিন করোনা মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান প্রচারিত হয়েছে তাতে প্রতি দশ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ক’জন মানুষ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তার একটি খতিয়ান প্রকাশিত হয়েছে। বেলজিয়াম প্রতি দশ লাখে ৬৩০ জন স্পেন প্রতি দশ লাখে ৫০৩ জন ইতালি প্রতি দশ লাখে ৪৪৬ জন ফ্রান্স প্রতি দশ লাখে ৩৪৭ জন যুক্তরাজ্য প্রতি দশ লাখে ৩১৭ জন নেদারল্যান্ডস প্রতি দশ লাখে ২৬২ জন আয়ারল্যান্ড প্রতি দশ লাখে ২২৭ জন সুইজারল্যান্ড প্রতি দশ লাখে ১৯৫ জন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি দশ লাখে ১৭১ জন পর্তুগাল প্রতি দশ লাখে ৯০ জন কানাডা প্রতি দশ লাখে ৭৬ জন জার্মানি প্রতি দশ লাখে ৭৩ জন এই হিসাবের বিপরীতে ভারতে প্রতি দশ লাখে ১ জনেরও কম মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রকৃত হিসাবটি ০.৭৬। ভারতের বিশেষজ্ঞরাও সেখারকার সরকার ঘোষিত আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে সন্দিহান কিন্তু মৃত্যু হিসাব নিয়ে তাদের সংশয় কম, কারণ সামাজিক ও গণমাধ্যম সেখানে অনেকটা স্বাধীনভাবেই কাজ করে। একই কারণে একই সময়কার বাংলাদেশের মৃত্যু পরিসংখ্যান প্রতি দশ লাখে ১ জনের কিছু বেশি। কম আক্রান্ত দেশে কি প্রাক-করোনা আর্থিক অবস্থায় ফিরে সহজ হবে? হয়তো তাই হবে, কিন্তু এসব দেশে কোভিড-১৯-এর প্রকৃতি ও বিস্তারের ধরনটি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে নমস্য অর্থনীতিবিদ, নোবেল বিজয়ী, আর্থিক তত্ত¡প্রণেতা প্রমুখ করোনাকালেন অর্থনীতি নিয়ে কি বলেছেন, কেয়ামতের কোনো আলামত দেখেছেন এবং কি নসিহত করেছেন এই করোনাকালে, নিবন্ধের এই অংশটি সেসব নিয়ে নয়। যারা সরাসরি বাজারের মানুষ ব্যবহারিক মানুষ আবার কিছু পাণ্ডিত্যও আছে এমন ক’জন কি বলছেন নাক থ্যাতলানো অবস্থান থেকে অর্থনীতি কি সহসা উঠে দাঁড়াতে পারবে না আরো ভোগান্তি সইবে। বিল কোনার্লি তাদের একজন। অর্থনীতিবিদ হবেন সে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ১৬ বছর বয়সে, পড়তে শুরু করেন দাদির সংগ্রহের পুরনো ফোর্বস ম্যাগাজিন। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে, তিন বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে ঠিক করলেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করবেন। বড় বড় করপোরেটের ইকোনমিস্ট পথে কাজ করার পর শুরু করলেন পরামর্শকের কাজ। বই লিখলেন : ‘বিজিনোমিক্স : ফ্রম দ্য হেডলাইন টু বটমলাইন হার্ড টু প্রফিট ইন অ্যানি ইকোনমিক সাইকেল’। ফোর্বস ম্যাগাজিনে চলতি সপ্তাহে তিনি লিখেছেন ৮টি কারণে অর্থনীতিতে ধস নামবে না। এই কারণগুলো ধস ঠেকাবে। বিশ্বব্যাধি করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, কাজেই তারা কম খরচ করবে। তাতে আরো লে অফ ঘটবে, আরো ব্যয় সংকোচন ঘটবে নিম্নমুখী এক দুষ্টচক্রে অর্থনীতির বারোটা বাজবে। বিল কোনার্লি বলছেন এটা ঠিক নয়। পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। তিনি অবশ্য আমেরিকার বাজারের দিকে চোখ রেখে কথা বলেছেন, এর অনেকটাই অন্য সব দেশের জন্যও প্রাসঙ্গিক। ১. যদি ১৫ শতাংশ মানুষ চাকরি হারায় তাহলে ৮৫ শতাংশের চাকরি কিংবা কর্মসংস্থান থাকবে, তাদের খরচ করার সক্ষমতা তেমন বদলাবে না। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক অবশ্য ভবিষ্যৎ লে-অফের দুর্ভাবনায় থাকবে, যাদের নিরাপদ চাকরি ছিল তারা কারখানায়, অফিসে কিংবা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ পরিবেশে কাজ অব্যাহত রাখবে। ২. বেকাররা খরচ করার মতো টাকা পাচ্ছেন। বেকারকালীন বিমা (বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়) ২৬ সপ্তাহ পর্যন্ত চাকরিকালীন আয়ের অর্ধেক, কংগ্রেস তা আরো ১৩ সপ্তাহ বাড়িয়েছে, সব বেকারের জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাপ্তাহিক সরকারি অনুদান ৬০০ ডলার। যাদের আয় ঘণ্টায় ৩০ ডলারের নিচে ছিল তাদের প্রাপ্তি অন্যের চেয়ে বেশি। ৩. পেনশনভোগী এবং স্থায়ী চাকরি প্রাপকের আর্থিক অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। পেনশনভোগীদের যারা স্টক মার্কেটের ওপর নির্ভরশীল, যারা ব্যাংক সুদের ওপর নির্ভরশীল তারা কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। ৪. মাথাপিছু প্রাপ্তবয়স্কের ১২০০ ডলার এবং শিশুর ৫০০ ডলার সরকার ঘোষিত সহায়তার অর্থ বাজারেই আসবে। ৫. সার্বিক খরচ কমে আসায় গাড়ির মতো স্বেচ্ছাধীন ক্রয়যোগ্য দ্রব্যের দাম হ্রাস পাবে, অন্যদিকে ব্যাংকের সুদও কম হওয়া এ ধরনের সামগ্রী ক্রয়ের হিড়িক পড়ে যেতে পারে। জ্বালানির দাম পড়ে যাওয়াতে বড় ট্রাক কেনায় ও বাণিজ্যিক ব্যবহারে আগ্রহ বাড়বে। ৬. ব্যবসায় বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে। কম সুদের হার ও অন্যান্য প্রণোদনার কারণে বিনিয়োগ বেড়ে যেতে পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাড়ি-ভিত্তিক অফিস সরঞ্জামের (বিশেষ করে ইলেকট্রনিক দ্রব্য, ল্যাপটপ) ব্যবসা ঊর্ধ্বমুখী হবে : মালিকরা এই সময়ের সুযোগ নিয়ে কারখানা ও অফিস রিনোভেশনের কাজ করে নেবেন। ৭. মন্দাবস্থায় কোম্পানি পূর্ব পরিকল্পিত বিক্রয় চালিয়ে যেতে পারে না বলে মালামালের ইনভেন্টরি বেড়ে যায়। কিন্তু করোনাকালের ইনভেন্টরির বৃদ্ধি হবে পরিকল্পিত। করোনার কারণে কোনো কোনো কারখানা বন্ধ করার কারণে অবিক্রীত মালামাল কম সুদের ঋণে ব্যবসায়ীরা কিনে নেবেন। ৮. ফেডারেল ব্যয়-কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করবে (যেমন করেছে মহামন্দার সময়)। সরকারের সব সেইফটি নেট কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে সংকটকালে ঘাটতি বাজেটের কেউ পরোয়া করে না। এই বিষয়গুলো তো রয়েছে সেইসঙ্গে আর্থিক ও মুদ্রানীতি স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করবে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App