ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে আটক রাখার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, কাজলকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়েছে। যদি এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে তা হবে মানবাধিকার বিষয়ক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শফিকুলকে আটকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা পুঙ্খানুপঙ্খভাবে খতিয়ে দেখারও আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ওএইচসিএইচআর।

এক বিবৃতিতে অফিস অফ দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) মঙ্গলবার বলেছে, ফটোসাংবাদিক শফিকুলের আটকাদেশের আইনগত বৈধতার বিষয়টি যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন। ওএইচসিএইচআর বিশেষজ্ঞরা বিবৃতিতে বলেছেন, সাংবাদিক শফিকুল ইসলামের ওপর চলমান নির্যাতন এবং তাকে গুম করে রাখার বিষয়ে তারা শঙ্কিত। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শফিকুলের আটকাদেশ এবং তার বিরুদ্ধে চলা ফৌজদারি মামলা ইঙ্গিত দেয় বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে বাকস্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে।

বিবৃতিতে ওএইচসিএইচআর জানায়, সাংবাদিকতার 'দায়ে' শফিকুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার আগে তিনি যৌনতার জন্য পাচার বিষয়ক একটি প্রতিবেদনের কাজ করছিলেন। ওই প্রতিবেদনে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততার উল্লেখ ছিল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ভঙ্গের অভিযোগ তদন্ত করতে শুরু করে।

ওএইচসিএইচআরের বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, শফিকুল ইসলামের মতো অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নিশানা করে গ্রেফতার মুক্ত স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি বাংলাদেশের যে অঙ্গীকার, সে সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে। এ ধরনের নির্যাতন সাংবাদিক, তাদের পরিবার ও গোটা সমাজকে বিপর্যন্ত করে তোলে।

ওএইচসিএইচআরের বিশেষজ্ঞদের তালিকায় রয়েছেন মত ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ডেভিড কায়ে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, সংক্ষিপ্ত বা একপেশে বিচার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি অ্যাগনেস ক্যালামার্ড, গুম বিষয়ক কার্যকরী কমিটির সদস্য, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার সম্পর্কিত কমিটির বিশেষ প্রতিনিধি দাইনয়িূজ পারুস।

গত ১০ মার্চ রাজধানীর হাতিরপুল এলাকা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর যশোরে ভারত সীমান্তের কাছে বেনাপোল থেকে গত ৩ মে তিনি রহস্যজনকভাবে উদ্ধার হন।  শফিকুল ইসলাম কাজলকে ৩ মে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় আদালত তাকে জামিন দিলেও পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শফিকুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি মামলা রয়েছে। তার একটিতে গত ২০ মে শফিকুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এখন তিনি রয়েছেন যশোর কারাগারে।