×

রাজধানী

করোনা নেগেটিভ হলেও বাড়ি ফেরা হলো না খোদেজার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২০, ০৯:৩৬ এএম

করোনা নেগেটিভ হলেও বাড়ি ফেরা হলো না খোদেজার

আগুনে পুরে যাওয়া বেড।

কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলেও বাড়ি ফেরা হলো না বৃদ্ধ খোদেজা বেগমের। রাজধানী গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে বুধবার (২৮ মে) রাতে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ দিতে হলো সত্তোর্ধ এ বৃদ্ধাকে। ঈদের দিন করোনা প্রাদুর্ভাব নিয়ে দেশের নামাদামী ওই হাসপাতালটিতে ভর্তি হন তিনি।

হাসপাতালটির মূল ফটকের পাশেই স্থাপিত আইসলোশন ওয়ার্ডে খাদেজা বেগম ছাড়াও চিকিৎসাধীন ছিলেন আরো ৪ জন। গুলশান থানা পুলিশ জানায়, তারা হলেন- মো. মাহবুব (৫০), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভারনন এ্যান্থনী পল (৭৪), খোদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজ উল আলম (৪৫)।

মৃত পাঁচ জনই করোনা উপসর্গ নিয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে পরে ৩ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ হলেও দুজনের নেগেটিভ আসে। তাদের আইসলোশন ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে ফেলার কথা বলেছিলেন চিকিৎসকরা। তবে এর মধ্যেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হন সবাই।

ঘটনার রাতে ৯টা ৪৮ মিনিটের দিকে ওই হাসপাতালে এক রোগীর স্বজন জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে আগুনের খবর জানায়। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ভাটারা থানা ফায়র সার্ভিসে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এসি বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও যাদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ এসেছে তাদেও লাশ স্বাভাবিক ভাবেই হস্তান্তর হবে। আর করোনা আক্রান্তদের মরদেহ আইইডিসিআর এর বিধান অনুস্মরণ করা হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানায়, রাত ৯টা ৫৫ মিনিটর দিকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের করোনা ইউনিটের আইসোলেশন সেন্টারে এসি বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণ করা হচ্ছে। ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। মৃত পাঁচ জনই করোনা আক্রান্ত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃতের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী, এ কথা নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। মৃতদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জরুরি বিভাগ থেকে হাসপাতালের মূল অংশ আলাদা হওয়ায়, মূল ভবনের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। অস্থায়ী করোনা ইউনিটটি তাবু ও প্লাস্টিক বা সিনথেটিক দ্রব্য দিয়ে নির্মিত ছিল বলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলেও জানায় ফায়ার সার্ভিস।

এদিকে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা। নিহত খোদেজার ছেলে আলমগীর বলেন, করোনার লক্ষণ দেখা দেয়ায় ঈদের দিনই নামী-দামী বেসরকারী বিখ্যাত এ হাসপাতালে মাকে ভর্তি করি। তবে তার করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে। তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরের কথা ছিল। তবে এর আগেই মারা গেলেন মা।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা ওই আইসোলেশন সেন্টারে কম যেতেন। ক্লিনার ও অন্যান্য বয়দের পাঠাতেন। সেখানে অব্যবস্থাপণার কারনেই এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ঘটনার রাতে ৯টা ৪৮ মিনিটের দিকে ওই হাসপাতালে এক রোগীর স্বজন জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে আগুনের খবর জানালে দমকল বাহিনীকে খবর দেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এসি থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। এছাড়া সেখানে স্যানিটাইজারও ছিল অনেক। তবে এ ঘটনায় প্রকৃত বিষয় উদঘাটনে কমিটি করা হবে। কমিটির সিদ্ধান্তনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App