এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২০, ১০:৪৮ পিএম
গত বুধবার রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের বর্ধিত অংশে আগুন লাগার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ, মর্মাহত। চিকিৎসা নিতে এসে হাসপাতালে গাফিলতির কারণে পাঁচজন রোগীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। পাঁচজনই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আইসোলেশনে ছিলেন। পাঁচজনের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের মধ্যে তিনজন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। বাকি দুজনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তারা রিপোর্টের অপেক্ষায় ছিলেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। আমরা শুধু মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করতে পারি। গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরে উঠে আসছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে একটি অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে। মূল ভবনের পাশে অস্থায়ী ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়েছে। এই আইসোলেশন সেন্টারে রোগীদের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রাখা হয়েছিল। হাসপাতালের সানশেডের নিচে এই পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অবহেলা করা হচ্ছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতালও এই অভিযোগের বাইরে নয়। করোনা ভাইরাসের কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। এ ভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে মিল না থাকলেও রোগী ভর্তি অথবা চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিনিয়ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সাধারণ রোগীর মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ডায়ালাইসিসসহ চিকিৎসা গ্রহণ করা রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। হৃদরোগ কিংবা কিডনি রোগে ভুগলেও মিলছে না চিকিৎসা। এমন পরিস্থিতিতে অনেক রোগী এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করতেই প্রাণ হারাচ্ছেন। দেশের চরম সংকটে ইউনাইটেড হাসপাতাল পাঁচজন রোগী পুড়িয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এজন্য যদি কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করা হয়, তাহলে কি ভুল হবে? অগ্নিকাণ্ড যে কোনো সময় ঘটতে পারে। সেজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। ফায়ার সার্ভিস অভিযোগ করছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন ইউনাইটেড হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা। মেয়াদোত্তীর্ণ ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানো যায় না। এগুলো কাজ করে না। এর দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। দেড় মাস আগেই ফায়ার এক্সটিংগুইশারগুলো রিফিল করা উচিত ছিল বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালককে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমরাও চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। অভিযুক্তদের কোনোভাবেই ছাড় নয়। যারা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন তাদের পরিবার যেন আর্থিক ক্ষতি পূরণ পায় সেই বিষয়ে তদন্ত কমিটিকে উপস্থাপন করতে হবে।