×

স্বাস্থ্য

দেশে করোনার ‘থামা’ নির্ভর করছে জনগণের ওপর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২০, ১২:৫১ পিএম

দেশে করোনার ‘থামা’ নির্ভর করছে জনগণের ওপর

করোনা

প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃতের তালিকা। পরিস্থিতিও হয়ে উঠছে জটিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তররের পক্ষ থেকে মে মাসকেই ‘ক্রিটিক্যাল বলা হচ্ছিলো। ২১ মে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে। দৈনিক শনাক্তের হার কমতে শুরু করলে বলতে পারবো যে পিকে পৌঁছে গেছি। এখন সংক্রমণ বাড়ছে। তারপরও আমি মনে করি, তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না, ঠিকই আছে।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকে ভেবেছিলেন হয়তো করোনার পিকের (সর্বোচ্চ সংক্রমণ) অনেকটা কাছেই চলে এসেছে বাংলাদেশ। হয়তো আর কিছু দিন পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। কিন্তু তেমন কোনো সুখবর নেই বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিদরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের মতো বাংলাদেশেও মে মাসের শেষে লকডাউন তুলে নেয়া হলে জুলাই মাসের মাঝামাঝি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাতে পারে। তবে গত দুই মাস যাবৎ বিভিন্ন মেয়াদে লকডাউন পালিত হওয়ার কারণে আক্রান্তের সংখ্যার এই ঊর্ধ্বগতি খুব বেশি ভয়াবহ হবে না এমনটাই আশা করছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, আমাদের নিয়ম মানার ওপর পিক কবে আসবে সেটি নির্ধারিত হবে। দেশে করোনার পিক টাইম কখন আসবে তা এখনি বলা যাবে না বলে মনে করেন পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। তিনি ভোরের কাগজ লাইভকে বলেন, সরকারের যেমন নিয়ম মানার জন্য বাধ্য করা দরকার তেমনি জনগণেরও নিয়ম মানা উচিত। করোনা প্রতিরোধে দেশের জনগণকে নিয়ম মানতে বাধ্য করার জন্য বিভিন্ন দেশ কারফিউ/লকডাউন দেয়। পুলিশ মিলিটারি নামায়। আমরা তাতে ব্যর্থ হয়েছি। ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ২০১৮ সালের সংক্রমণ দমন আইনটি ও বলবৎ করতে ব্যর্থ হয়েছি। অপরদিকে, দেশের মানুষও সচেতন নয়। ফলে সংক্রমণ বাড়ছে। রাজশাহী বিভাগের স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় দাস ভোরের কাগজ লাইভকে বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমরা বারবার ঝুঁকিপূর্ণ পথে হাঁটছি। ঈদে অবাধে মানুষের বাড়ি যাওয়া এবং পুনরায় ফিরে আসা পুরো দেশে সংক্রমণের বিস্তারে একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে। এতে করে সংক্রমণের চূড়ায় কখন উঠে সংক্রমণ কার্ভটি নিচে নামবে তা অনুমান করা খুবই কঠিন হয়ে গেলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগী অধ্যাপক রোগতত্ত্ববিদ ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম শামীমও মনে করেন, ঘরে থাকা, প্রয়োজনে বের হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহারসহ করোনা প্রতিরোধে সামাজিক বিধিনিষেধগুলি মেনে চললে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালেও চূড়াটি খুব বেশি উচুঁ হবে না। একই সঙ্গে আশা করা যায় এ রোগের সংক্রমণের তীব্রতা গ্রাফের নিচের দিকে নেমে আসতে শুরু করবে। ডা. মো. রিজওয়ানুল আরো বলেন, কোনো রকম ব্যবস্থাপনা ছাড়া করোনার সংক্রমণ কেমন হতে পারে সে বিষয়ে ধারণা পেতে প্রয়োজন তিনটি ইনকিউবেসন পিরিয়ড (করোনা ভাইরাসের আক্রমণ ঘটার পর থেকে রোগ প্রকাশ পেতে যে সময় প্রয়োজন) যার সময়কাল দেড় মাস। আর তাই ৩০ মে থেকে যদি লকডাউন তুলে নেয়া হয় তাহলে আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়েই এই রোগের সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। ডা. মো. রিজওয়ানুল ধারণা করছেন, যেহেতু মানুষের মধ্যে আক্রান্ত হবার একটি ভীতি কাজ করবে তাই লকডাউন তুলে নেয়া হলেও সাধারণ জনগণ করোনা প্রতিরোধে সামাজিক বিধিনিষেধগুলি মেনে চলা অব্যাহত রাখবে। এর সঙ্গে বেশিরভাগ আক্রান্ত রোগী অধ্যুষিত এলাকা যেমন ঢাকা, নারায়াণগঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চলে নমুনা পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রোগের লক্ষণ/ উপসর্গ দেখে কঠোর নজরদারি প্রক্রিয়াটি জোরালো করতে হবে। এছাড়াও শহরাঞ্চল থেকে গ্রামাঞ্চলে রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রোগতত্ত্ববিদ ডা. মো. রিজওয়ানুল আরো বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব হালকা বসতিপূর্ণ এলাকা থেকে অনেক বেশি তাই রোগ নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রধানত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেই কঠোর ব্যবস্থাপনা গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘরে থাকার মতন প্রক্রিয়াগুলো মেনে চলা দিনদিন আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। পুরোপুরি না পারলেও নুন্যতম ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সময় নিয়মগুলো যদি আমরা মেনে চলতে পারি তাহলে এই রোগের সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App