×

জাতীয়

কখনো দেখেনি কেউ এমন বিমর্ষ ঈদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২০, ০৩:৫১ পিএম

কখনো দেখেনি কেউ এমন বিমর্ষ ঈদ
এমন ঈদ আগে কখনো দেখেনি কেউ না বাংলাদেশে, না বিশ্বের অন্য কোথাও। নেই আনন্দ, নেই কোনো উৎসব আয়োজন। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কায় ম্রিয়মান মানুষ। তবুও প্রকৃতির নিয়মে আকাশে উঠবে শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ। আমেজ না থাকলেও চাঁদ উঠলে ঈদের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করতেই হয়। গতকাল পশ্চিম আকাশে চাঁদ দেখা না যাওয়ায় সোমবার পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর দিনটিতে উদযাপন হবে এই ঈদ। এ জন্য আজ বিকাল থেকেই শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য মুসলমানরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এবারের ঈদ উদযাপন হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে। এমনকি একসঙ্গে নামাজ আদায়েও মানতে হবে কিছু বাধ্যবাধকতা। দেশের কোথাও ঈদগাহ ময়দান বা খোলামেলা মাঠে হবে না ঈদের জামাত। মসজিদেই ঈদের নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। করোনার প্রাদুর্ভাব ছাড়াও যুক্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডব। বুধবার রাতে এই ঝড় দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানায় বিপাকে ওইসব অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ। অনেকেই হারিয়েছেন ঘর ও সহায়সম্পদ। অন্য বছর ঈদুল ফিতর উদযাপনে যে ধরনের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়, এবার তা নেই। রমজানের বেশ আগে থেকেই মানুষ ঘরবন্দি। টানা দুই মাস ধরে চলছে সরকারি ছুটি। সেই সঙ্গে বন্ধ ব্যবসা-বাণিজ্য, শপিংমল, সবধরনের গণপরিবহনও। বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় এখন চলছে অনেকের পরিবার। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াতেও বেশ কড়াকড়ি। এবার রমজানে জমে উঠেনি ঈদের কেনাকাটা। প্রতিবছর যেখানে বাণিজ্য হয়ে থাকে কয়েক হাজার কোটি টাকার। বিদ্যমান করোনা সংকটে গরিব-ধনী কারো মধ্যেই নেই খুশির ছাপ। নাড়ির টানে অনেকে ঘরমুখো হলেও নেই অন্যবারের মতো জনস্রোত। বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে নেই চিরচেনা ভিড়। রাস্তায়ও নেই কোনো যানজট। মার্কেটগুলোতে নেই উপচে পড়া ভিড়। ব্যস্ততা নেই শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায়। ঢাকায় প্রতিবছর ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠে। রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, ঢাকার মেয়র, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিদেশি ক‚টনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। এ জন্য ঈদের প্রায় ২০ দিন আগে থেকেই ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতির কাজ শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বৃষ্টি নির্বাপক ব্যবস্থাসহ কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার নামাজ আদায়ের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। সেই সঙ্গে ঢাকার কোনো খোলা স্থানেই ঈদের জামায়াত আদায় না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া প্রতিটি এলাকায় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য নির্দেশ দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে। প্রতিটি মসজিদে এক সারি ফাঁকা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে। মসজিদের প্রবেশমুখে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক রাখতে বলা হয়েছে। কোনো মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। বাড়ি থেকে জায়নামাজ আনতে বলা হয়েছে। অসুস্থ ও বয়স্কদের মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে মসজিদে না যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকেই। তারা ঈদের নামাজ বাড়ির ছাদে ক্ষুদ্রপরিসরে আদায়ের আয়োজন করছেন বলে জানা গেছে। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে কঠোরভাবে। শুধু তাই নয়; এবার ঈদ আয়োজনে শুভেচ্ছা বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় কোনো কর্মসূচিও রাখা হয়নি। সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে সরাসরি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন না রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে বঙ্গভবন ও গণভবনেও কোনো আয়োজন রাখা হয়নি। গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশের মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবেন তারা। ঈদে দেশের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানে। সেখানেও এবার ঈদের নামাজের কোনো আয়োজন করা হয়নি। খোলা জায়গায় ঈদ জামাতের আয়োজন নেই কোনো বিভাগী ও জেলা শহরেও। ঈদ উপলক্ষে হাসপাতাল ও কারাগারে পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ প্রকাশনার আয়োজন করেছে। টেলিভিশনে প্রচার করা হবে সীমিত বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে বাণী দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App