×

বিশেষ সংখ্যা

প্রেমের অন্ধকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২০, ০৬:২২ পিএম

প্রেমের অন্ধকার

করোনা ভাইরাসের দিনগুলোতে ঘরে থাকার নির্দেশ পেয়ে যুথিকা ভেবেছিল সময়টা বুঝি গৃহবন্দির জীবনযাপন হয়ে গেল। কিন্তু গত সাত দিনে নিজেকে গৃহবন্দির অবস্থায় একদমই ভাবতে পারেনি। ঘরের ভেতরে ঘোরাফেরা করে ভেবেছে এ এক অন্যরকম জীবনযাপন। এক অদৃশ্য জীবাণু এই জীবনযাপনকে কন্ট্রোল করছে। বিশ্বজুড়ে মানুষ এই অদৃশ্য জীবাণুর কাছে নতি স্বীকার করে ঘরবন্দি রয়েছে। মৃদু হাসিতে যুথিকা নিজেকে স্বস্তির বেড়াজালে ঘেরাও করে। ভাবে, যা হচ্ছে হোক। এই নতুন সময় দেখা আমার জন্য ভিন্ন অভিজ্ঞতা। ভবিষ্যতে আমার বাচ্চাদের এই গল্প বলব। বাথরুমে ঢুকে খিলখিলিয়ে হাসে ও। যেন হাসির শব্দ কেউ শুনতে না পায়। বাড়িতে সবাই তো মনমরা হয়ে আছে। ঘরে বন্দি থেকে যুথিকার দিনগুলো ভিন্নরকম হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ, সুমন্তের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। কোনো কথা বলে মন ভরে না। সুমন্ত একদিন ফোন করে বলে, একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে বের হও, আমিও আসব। -কোথায় যাব? -রমনা পার্কে। -না, অত খোলামেলা জায়গায় যাব না। -তোমার কি মনে হয় তুমি গৃহবন্দি? -না, মোটেও। মনে হয় প্রেমের ভিন্ন আয়োজন অদৃশ্যের মধ্যে দৃশ্যমান করে তোলা প্রেমিককে। সুমন্ত হা হা করে হাসতে হাসতে বলে দারুণ বলেছো। বুঝতে পারছি আমি তোমার মন থেকে হারিয়ে যাইনি। -এটা কোনো কথা হলো নাকি। আমি তোমার জীবন থেকে কখনোই হারিয়ে যাব না। মরে গেলে তখন হারাবো। তার আগে না। -মরার কথা বলো না। বিয়ের পরে আমরা একসঙ্গে মারা যাব। তুমি, যদি আগে মারা যাও তাহলে আমিও সুইসাইড করে তোমার সঙ্গে চলে যাব। -ওই আমরা এসব কি কথা বলছি? -আমরা প্রেমের কথা বলছি। মৃত্যুর সঙ্গে প্রেমের সূত্র এসব কথা। ফোন রেখে দেয় যুথিকা। ঠিক সেই সময়ে শোনা যায় মায়ের চিৎকার। ছুটে যায় ও। - কি হয়েছে মা? -তোমার বাবার জ¦র এসেছে। সঙ্গে গলা ব্যথা, কাশিও আছে। যুথিকা আতঙ্কিত হয়ে কাঁদতে শুরু করে। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ডাক্তারকে ফোন কর। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললে ডাক্তার বলে, হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে গেলে ডাক্তার বলেন, তইমুর সাহেব করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আপনার মা থাকুক হাসপাতালে। আপনি বাড়ি চলে যান। পরদিন জানতে পারে সুমন্তর মা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সঙ্গে সুমন্তও। যুথিকার সামনে অন্ধকার ঘনীভূত হয়ে ওঠে। ওর চারদিকে কোথাও কোনো আলো নেই। মায়ের সঙ্গে সুমন্তও হাসপাতালে। একই দিনে তিনজন মানুষ মরে যায়। -করোনা ভাইরাস আমাকেও নিয়ে যাও। আমিও যেতে চাই। চারদিকে কোথাও কোনো শব্দ নাই। শুধু ওর মা ওর সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। দিনের আলোয় অন্ধকার ঘনিয়ে আছে ওর সামনে। ও বিড়বিড়িয়ে বলে, এ আমার প্রেমের অন্ধকার। আমার জীবনে আর কখনো প্রেমের আলো ফুটবে না। সুমন্ত আমার কাছে আলো হয়ে থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App