×

রাজধানী

প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যায় দুই জনের স্বীকারোক্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২০, ১০:১৮ পিএম

প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যায় দুই জনের স্বীকারোক্তি

প্রকৌশলী দেলোয়ার

নিহত প্রকৌশলী দেলোয়ার ও প্রকৌশলী সেলিম একই অফিসে সহকর্মী ছিলেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অন্তর্দন্দ্ব ছিল। বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাদের মধ্যে বনিবনা হতো না। আর এই কারণেই পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে।

এ ঘটনায় জড়িত থাকায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিম ছাড়াও চালক হাবিব ও শাহীন নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও সে সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি হায়েস মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ জানান, ডিএমপি উত্তরা বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

তিনি আরো বলেন, গত ১১ মে বিকাল আনুমানিক ৪টার দিকে তুরাগ থানার ১৭ নম্বর সেক্টর থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যা মামলাটি তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (অঞ্চল-৭) এর সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিমসহ প্রকৌশলী রাশেদ ও প্রকৌশলী সুফিয়ানকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভিকটিমের বাসার রাস্তার আশপাশ ও ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করতে থাকেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিকটিমের বাসার অদূরে একটি হায়েস মাইক্রোবাসে একজন সাদা পিপিই পড়া ও একজন শার্ট প্যান্ট পড়া ব্যক্তি অপেক্ষা করছে। হঠাৎই তারা একটি রিক্সাওয়ালাকে থামিয়ে তার মোবাইল থেকে কাকে যেন কল করে। কিছুক্ষণ পর রিক্সাওয়ালার ওই মোবাইলে ফিরতি কল আসলে তারা দ্রুত ভিকটিমের বাসার দিকে গাড়ি নিয়ে রওনা দেয়। এখানে সাদা পিপিই পরিহিত ব্যক্তির সাথে সহকারী প্রকৌশলী সেলিমের দেহের আকৃতির মিল পাওয়া যায়।

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ওই রিক্সাওয়ালকে আটক করে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, পিপিই পরিহিত ব্যক্তি আর প্রকৌশলী সেলিম একই ব্যক্তি। সেলিমের সংগে আরো একজন ব্যক্তি ছিলেন। রিকশাওয়ালার মোবাইল থেকে কল করে মাইক্রোবাস নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ১০০ টাকা ধরিয়ে দেয়া হয় বলে রিক্সা চালক জানান।

পরে এসব বিষয় তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশ্চিত হয়ে প্রকৌশলী সেলিমকে সিসিটিভি ফুটেজ ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে জানালে তিনি এক পর্যায়ে নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেন। হত্যার মোটিভ সম্পর্কে জানতে চাইলে এসি পলাশ বলেন, নিহত প্রকৌশলী দেলোয়ার ও প্রকৌশলী সেলিম একই অফিসে সহকর্মী ছিলেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অন্তর্দন্দ্ব ছিল। বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাদের মধ্যে বনিবনা হতো না। হত্যাকাণ্ডে সহযোগী হিসেবে শাহীন ও মাইক্রোসহ ড্রাইভার হাবিবকে সঙ্গে নেন সেলিম।

ঘটনার দিন সেলিম ও তার অন্য দুই সহযোগী মাইক্রোবাস নিয়ে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাকে গাড়িতে উঠান। গাড়িটি রূপনগর বেড়িবাঁধে পৌছালে সেলিমের ইশারায় মাইক্রোর পেছনে থাকা শাহীন দেলোয়ারের গলায় রশি দিয়ে পেঁচিয়ে টান দেন এবং সেলিম তাকে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। হত্যার পর মৃতদেহটি ১৭ নম্বর সেক্টরের খালি জায়গায় ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় দেলোয়ারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি দিয়াবাড়ির তিন নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন লেকে ফেলে দেন। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি জানান, এই ঘটনায় ২১ মে গ্রেপ্তারকৃত শাহীন ও হাবিব ১৫৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছি। বিজ্ঞ আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিমকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তদন্ত অব্যাহত আছে, অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App