×

মুক্তচিন্তা

হতাশার অমানিশায় আশার দীপ জ্বালিয়ে রাখি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২০, ১১:০৫ পিএম

হতাশা শব্দের গঠনটাই আশাহত করে। হত+আশা=হতাশা, হত শব্দের অর্থ বধ বা হত্যা করা। আশাকে বধ বা হত্যা করাই হচ্ছে হতাশা। হতাশা একটি পাপ। এ পাপের জন্ম কিন্তু আমার-আপনার মনের বাগানেই হয়। মনের বাগানে আশা, ভালোবাসা, মানবিকতা, ইতিবাচকতার চাষাবাদ আর নতুন নতুন স্বপ্নের রঙিন ফুল ফুটাতে না পারলে, সেখানে হতাশার নানা বিষাক্ত পোকামাকড় বাসা বাঁধে, মনের আনন্দে খেলা করে। হতাশা আপনার স্বপ্নগুলোকে হত্যা করার আগেই হতাশার দানবকেই হত্যা করুন। হত্যা কথাটা নির্মম মনে হলে, ডিলিট করুন হতাশাকে, সেটাও না পারলে অন্তত ওটাকে জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই চিরতরে লকডাউন করুন। হতাশার কাফনে জড়ানো জীবন্ত লাশ হয়ে কেন থাকবেন? অদৃশ্য করোনার কশাঘাতে দুলছে পৃথিবী, মরছে লাখো মানুষ, জীবিতরাও ভয়-হতাশায় দোদুল্যমান। তবে কী করোনার মহামারিতে মানবজাতির বিনাশ। না, না তা হতে পারে না। আমরা তো মহান আল্লাহর রহমতে হজরত নূহ (আ.)-এর কিস্তিতে থাকা মহাপ্লাবন থেকে বেঁচে যাওয়া বিশ্বাসী মানুষের বংশধর। কিছু ফুল ঝরে যাবে, বাগান তো কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। অবিশ্বাস আর হতাশা এক সঙ্গে চলে, একসূত্রে গাথা। পবিত্র কুরআন মজিদে বলা হয়েছে : আল্লাহর রহমত থেকে কেবলমাত্র কাফিররাই (অবিশ্বাসীরা) নিরাশ হয়...। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মসউদ (রা) বলেছেন : দুটি জিনিসের অনিবার্য পরিণতি ধ্বংস; একটি হতাশা বা নৈরাশ্য, আর অপরটি অহমিকা। বিশ্বাসীর হৃদয়ের শান্তি-স্বস্তি-প্রশান্তির একটি প্রধান উৎস হচ্ছে ইতিবাচকতা বা আশাবাদ। সে হতাশার নিকষ আঁধারে আশার আলো জ্বালিয়ে রাখে। সে হতাশার কালো মেঘের আড়ালে সূর্যের হাসি দেখতে পায়। ঝড়-বৃষ্টি শেষে সে আকাশে সাত রঙের রঙধনু খুঁজে পায়। হতাশা মানুষকে হতোদ্যম-অলস করে আর আশা মানুষকে স্বপ্ন দেখার, সামনে এগিয়ে যাওয়ার, কাজ করার প্রেরণা জোগায়। বস্তুত, হতাশা হচ্ছে একটি বিষ আর আশা হচ্ছে মানবজীবনের সঞ্জীবনী সুধা। আত্মবিশ্বাস আর আশা দুঃখ-কষ্ট-বেদনার ক্রন্দনরোল স্তব্ধ করে দেয়। আশা-ভালোবাসা-মানবতা জীবনে নিয়ে আসে শান্তি-প্রশান্তি, আনে উদ্যম-গতিশীলতা, সুখ ও আনন্দ। হতাশাকে পদদলিত করে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে না পারলে মানুষ অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলে, তার জীবন হয় তখন সংকীর্ণ-দুঃসহ-দুর্বহ। সবসময় স্বপ্ন পূরণ হয় না, লক্ষ্য অর্জিত হয় না, সফলতা হাতে ধরা দেয় না, শরীর রোগাক্রান্ত হয়, ব্যবসায়ে লোকসান হয়, আপনজন দূরে চলে যায় ইত্যাদি যা-ই ঘটুক না কেন স্রষ্টার রহমত থেকে হতাশ না হয়ে, এসবকে এক একটি ঘটনা হিসেবে দেখুন। অতীত ঘটনা বয়ে বেড়ানো এবং তা নিয়ে হাহুতাশ করে কোনো লাভ নেই। যেটাকে ব্যর্থতা বলে হতাশ হচ্ছেন সেটা একটা ‘শিক্ষা’ বা ‘অভিজ্ঞতা’ যদি আপনি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুধাবন করেন। যে কাজটি হয়নি, তা অতীত। অতীতে বসবাস করা, অতীত নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া মূল্যবান সময়ের অপচয়, জীবনের অপচয়। হতাশা থেকে মুক্ত থাকার কিছু চিরন্তন উপায় : ১. নিজের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করুন। আপনার মন-মননের রিমোট আপনার হাতে রাখুন। ২. আকাশকুসুম কল্পনা না করে বাস্তবতার আলোকে নিজের সামর্থ্য-দুর্বলতা বিবেচনা করে পরিকল্পনা করলে ব্যর্থ বা হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ৩. কী হারিয়েছেন তা নিয়ে না ভেবে, এখন আপনার কি করা উচিত বা এখন কি করতে পারছেন তা নিয়ে চিন্তা করে কাজে নেমে পড়–ন। মাটিতে পড়ে যাওয়া গøাসের দুধ আর ফিরে পাওয়া যায় না। ৪. নিজের সমস্যা বা ব্যর্থতার জন্য অন্যকে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই। অন্য কেউ কিছুটা দায়ী হলেও আপনার সমস্যা আপনাকেই সমাধান করতে হবে। হতাশ না হয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে। ৫. একাধিক অপশন রাখতে হবে। পথ একটা না একটা খোলা আছে... এই বিশ্বাস নিয়ে এগোতে হবে। যদি, সত্যিই কোনো পথ না থাকে তবে নিজেই পথ তৈরি করে নিতে হবে। প্রবাদ আছে, পথিক পথের সৃষ্টি করে, পথ পথিকের সৃষ্টি করে না। ৬. সবসময় ইতিবাচক কাজে ব্যস্ত থাকলে হতাশা আপনার ওপর হতাশ হয়ে পালিয়ে যাবে। ৭. কুরআন তেলাওয়াত করুন এবং মাতৃভাষায় অনুবাদসহ অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। সুখে-দুঃখে সব অবস্থায় আপনার আত্মা প্রশান্ত থাকবে। অস্থিরতা-হতাশা কেটে যাবে। ৮. দরিদ্র-অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সামান্য হলেও কিছু করুন। মনে প্রশান্তি আসবে। ৯. মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করুন। হেসে কথা বলুন। মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া আপনার হতাশা দূর করে দেবে। ১০. করোনা বা অন্য যে কোনো রোগে আক্রান্ত হলেও ভয় ও হতাশাকে জয় করে রোগ মুক্তির জন্য দোয়া-দাওয়া-দান-ধ্যান ও প্রার্থনা করুন। আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া : কলাম লেখক ও মোটিভেটর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App