×

মুক্তচিন্তা

লাইলাতুল কদর : সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২০, ১১:০৩ পিএম

করোনাকালে এবার এলো মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর। সমগ্র বিশ্ব আজ কঠিনভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের দেশও করোনাকাল থেকে নিরাপদ নয়। করোনার অভিঘাতে সবাই জর্জরিত। লাইলাতুল কদর রাতটিতে প্রিয় নবী শফিউল মুজনেবিন রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে শ্রেষ্ঠ আসমানি গ্রন্থ কুরআন মজিদ। লাইলাতুল কদর অর্থ মহিমান্বিত রাত। সৌভাগ্য রজনী হিসেবে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে রাতটির অতীব মর্যাদা, তাৎপর্য ও গুরুত্ব রয়েছে। ‘কদর’ শব্দের দুটো অর্থ। একটি হচ্ছে ভাগ্য বা তকদির। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে মর্যাদা বা সম্মান। এই রজনীতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। পরবর্র্তী বছরের রিজিক বণ্টন, জীবন-মৃত্যুসহ যাবতীয় কাজের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ‘লাইলাতুল কদরে’। এই সৌভাগ্য রজনীতে ইবাদত-বন্দেগি, কুরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ, জিকির আজকার ও দান সদকা বেশি বেশি করার মাধ্যমে আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জনের প্রয়াস চালায় ইমানদার মুসলমানরা। যে ব্যক্তি এই রাতে ইবাদতে রত থাকে এবং তওবা ইসতেগফার করে আল্লাহর কাছে তার সম্মান ও মর্যাদা বহুগুণ বেড়ে যায়। এবার করোনাকালের মহামারি থেকে আল্লাহপাক যেন বিশ্ববাসীকে মুক্ত করেন, আমাদেরও দেশও যাতে করোনার অভিঘাত থেকে মুক্তি পায় এজন্য আল্লাহপাকের দরবারে অশ্রুসিক্ত ফরিয়াদ জানাতে হবে। আল্লাহপাক যদি আমাদের ওপর দয়ার্দ্র হন, তবে সব বালা-মুসিবত থেকে নিষ্কৃতি মিলতে পারে এ আশা করা যায়। পবিত্র কুরআনে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য গুরুত্বের সঙ্গে ব্যক্ত হয়েছে। কুরআন মজিদে লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পরিপূর্ণ সুরা রয়েছে। সুরাটির নাম ‘সুরা আল কদর’। সুরাটি ইরশাদ হয়েছে : ‘আমি এই কুরআন অবতীর্ণ করেছি লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত রজনীতে। আর মহিমান্বিত রজনী সম্পর্কে আপনি জানেন? লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রজনী হচ্ছে সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ (হজরত জিব্রাঈল আ.) অবতীর্ণ হন প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে, শান্তিই শান্তি সেই রজনী, সুবহে সাদিক পর্যন্ত।’ এ সুরাটির শানে নজুল বা অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে হাদিস শরিফে রয়েছে, মহানবী (দ.) বনী ইসরাইলের চারজন নবীর উল্লেখ করে বলেন, তাঁরা প্রত্যেকে ৮০ বছর করে ইবাদতে বিভোর ছিলেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর ইবাদত থেকে বিরত হননি। আর আল্লাহর কোনো আদেশের বিপরীতেও চলেননি। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বিস্মিত হন। সেই মুহূর্তেই হজরত জিব্রাঈল (আ.) নবীজির (দ.) কাছে উক্ত কদরের আয়াত শুনালেন, প্রিয় নবী (দ.) আরো বলেছেন ‘আল্লাহতায়ালা আমার উম্মতদের ওপর লাইলাতুল কদর দান করেছেন। অন্য নবীদের ওপর এ বিরাট দান প্রদত্ত হয়নি।’ প্রিয় নবীর (দ.) সুন্নাত অনুযায়ী মাহে রমজানের শেষ দশকে এর তালাশে ইবাদত করা উচিত। পবিত্র কুরআনে এ রাতকে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ উল্লেখ করা হয়েছে। লাইলাতুল কদর কোন রাত এ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেছেন : তোমরা লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো রমজানের শেষ দশকে বিজোড় রাতে (মিশকাত)। লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির লক্ষ্যে রমজানের শেষ দশকের রাতসমূহে ইবাদতে মশগুল থাকা উত্তম। তবে সাতাশতম রাতের ব্যাপারে নির্দিষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় এবং এ মোতাবেক যুগে যুগে মুসলমানরা লাইলাতুল কদর পালন করে আসছে। লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে এবং সাওয়াব বা পুণ্যের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখে তার পেছনের সব পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সাওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে ইবাদত করবে তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারি শরিফ) তবে এ রাতে ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী, সুদখোর, গণক, অপরের নিন্দাকারী, হিংসুক, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী ও মাতা-পিতার অবাধ্য লোকদের দোয়া কবুল হবে না। খাঁটি নিয়তে অনুশোচনা ও তাওবা করলেই মুক্তির আশা করা যায়। অন্যের সম্পদ হকদারকে ফিরিয়ে না দিলে এ রাতেও মুক্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এ রাতে নফল নামাজ, দোয়া দরুদ, জিকির, কুরআন তেলাওয়াত, মা-বাবা ও মুরব্বিদের কবর জিয়ারত এবং মহান অলি-বুজুর্গদের মাজার শরিফ জিয়ারত করা ও দান-সদকাহ করা অতীব উত্তম। এতে অধিক পুণ্য অর্জিত হয়। লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App