×

জাতীয়

ঝুঁকি-বঞ্চনার মধ্যেও হাসি মুখে সেবা দিতে চান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২০, ১১:৪৫ পিএম

ঝুঁকি-বঞ্চনার মধ্যেও হাসি মুখে সেবা দিতে চান

ফাইল ছবি

করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রতিনিয়তই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ পর্যন্ত তিনজন চিকিৎসক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে নার্সরা আক্রান্ত হলেও তাদের মধ্যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকেও হাজির হচ্ছেন অনেকে। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) মধ্যেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই জনের। ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়তই। তবে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে তারা সাধারণ ও করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যেতে চান। কারণ তারা মনে করছেন, বেঁচে থাকলে জীবনে ঈদ আসবে। কিন্তু এই সময়ে মানুষের যে দুর্ভোগ, নিজের পেশা ও কাজের প্রতি আনুগত্য ও আন্তরিকতা দেখানোর এটাই সুযোগ।

আগে বাসা থেকে কাজ করলেও এখন করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িত চিকিৎসক নার্সরা বাসায় যেতে পারেন না। তারা টানা ১০ থেকে ১৪ দিন কাজ করে পরবর্তী ১৪ দিন নির্ধারিত হোটেল বা কোয়ান্টোইন সেন্টারে আইসোলেশনে থাকেন। যাদের করোনা সংক্রমণ ধরা পরে তাদের আলদাভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। বাকিরা নির্ধারিত ওই সময়ের পর আবার কাজে যোগ তেন। এভাবেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা চিকিৎসায় নিয়েজিত আছেন।

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) হিসেব অনুযায়ী করোনায় এখন পর্যন্ত ৭৫৫ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫০৪ জন, ময়মনসিংহে ৮৮ জন, চট্টগ্রামে ৩৭ জন, খুলনায় ৩৭ জন, সিলেটে ২৪ জন, বরিশালে ১০ জন, রংপুরে ১০ জন, রাজশাহীতে এক জন। এবং অনান্য ৪৪ জন। দেড়শ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আক্রান্ত হয়েছেন। সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি এন্ড রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৬৪২ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪৯৩ জন, ময়মনসিংহে ৫০ জন, সিলেটে ৩৩ জন, চট্টগ্রামে ১৬ জন, খুলনায় ১৩ জন, রংপুরে ১৩ জন, রাজশাহীতে ১০ জন, বরিশালে ৮ জন। বাংলাদেশ সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ৪৭ জন সিএইচসিপি করোনায় আক্রান্ত ও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিডিএফের চেয়ারম্যান ডা. মো. শাহেদ রাফি পাভেল ভোরের কাগজকে বলেন, চিকিৎসকরাতো ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে। তবে আশার কথা এখন আক্রান্তের হার কিছুটা কমে এসেছে। সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে নানা সমস্যার পাশাপাশি চিকিৎসকদের বেতন-বোনাস নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা বেতন ও বোনাস পেয়েছেন। তাদের সুযোগ সুবিধাও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের তুলনায় অনেক বেশি। করোনা কালীন এই সময়ে বেসরকারি হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক বেতন পাননি। বোনাস পাননি। অনেকে অর্ধেক বেতন পেয়েছে। কিন্তু তারপরও চিকিৎসকরা কাজ করে যাচ্ছেন। এই ঈদেও আমরা কাজ করব। প্রতিটি চিকিৎসক চায় তার রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক হাসি মুখে। রোগীদের সুস্থ হবার মধ্য দিয়েই আমরা ঈদের খুশি উদযাপন করতে চাই।

একই কথা জানালেন সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি এন্ড রাইটসের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির মাহমুদ। জানালেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতো নার্সরাও বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। এরপরও তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আগামীতেও তারা তাদের সেবা অব্যাহত রাখেবে।

বাংলাদেশ সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মো. জাহিদুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে ও নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৪৭ জন সিএইচসিপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন দুই জন। সারাদেশে লকডাউনের ফলে গণপরিবহন বন্ধ আছে। কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেটে নারী সিএইচসিপিরা কর্মস্থলে এসে সেবা দিচ্ছে। সরকার ঘোষীত প্রণোদনাতে সিএইচসিপিরা আদৌ পড়বে কিনা তা আমরা জানি না। কিন্তু বৈশ্বিক এই মহামারীতে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা আমরা সিএইচসিপিরা অব্যাহত রাখতে চাই। আশা করি আমাদের নিরাপত্তা এবং দাবিগুলোও প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিবেচনা করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App