×

সরকার

দুই লাখ কোটি টাকার নতুন এডিপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২০, ০৫:০২ পিএম

স্বাস্থ্যে অগ্রাধিকার, চূড়ান্ত অনুমোদন

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন হবে আজ। করোনার কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল বৈঠকে বসবে অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদ (এনইসি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। এতে বিশেষ অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এ খাতে ইতোমধ্যে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া এডিপিতে করোনা মোকাবিলায় থোক বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পও আগের তুলনায় বাড়ছে। আজকের বৈঠকে এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। যা চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বেশি। এরমধ্যে করোনা মহামারি মোকাবিলায় নতুন এডিপিতে ৫ হাজার ৮৯৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এই থোক বরাদ্দ থেকে সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা জাতীয় প্রয়োজনে খরচ করা হয়। আর নতুন এডিপির আওতায় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা খরচ করা হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার এডিপির খসড়া তৈরি করেছি। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনইসি বৈঠকে এই এডিপি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। এবার করোনা সংকট মোকাবিলায় নতুন এডিপিতে গত বছরের তুলনায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতকে। এছাড়া খাদ্য ঘাটতি মেটাতে কৃষি খাতকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষার আওতাও বাড়ছে। সর্বোপুরি মানুষের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বেশিই আছে। এবারো রূপপুর প্রকল্পেই সর্বাধিক বরাদ্দ রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ এর কারণে নতুন এডিপিতে স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এরপরও করোনা সংকটে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় রেকর্ড পরিমাণে ব্লক অ্যালোকেশন বা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অথচ এর আগে এডিপিতে এক হাজার ৬৩০ কোটি টাকা বিশেষ উন্নয়ন সহায়তার নামে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এডিপিতে এবার ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা বেশি থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবিলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বাস্থ্য খাতে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি এবং কৃষিখাতে ৮ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেয়া ইতবাচক বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, নতুন এডিপিতে করোনা মোকাবিলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে বরাদ্দ ব্যয়ের বিষয়েও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন এডিপিতে থোক বরাদ্দ বাড়ানোটা তা ইতিবাচক। তবে এসব অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ আমারা বরাবরই দেখে আসছি, অর্থছাড় থেকে শুরু করে একটা ঢিলেভাব থাকে। এছাড়া আইএমআইডি ছাড়া অর্থছাড়ের বিষয় জানা বেশ কঠিন। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ ব্যয়ে সঠিক সময়ে তথ্য সরবরাহ জরুরি। করোনা মোকাবিলায়, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য সহায়তা জরুরি তাই নতুন এডিপিতে এসব খাতকে গুরুত্ব দেয়া সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

সূত্র জানায়, নতুন এডিপিতে ৬১ পিপিপি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের এডিপির প্রকল্পের তুলনায় ২১টি বেশি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত পিপিপি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প থাকছে পরিবহন খাতের। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে অনেক প্রকল্প থমকে যায়। পিপিপি উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ও তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা খাত। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৮টি (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ছাড়া)। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৪৪টি। ফলে নতুন অর্থবছরে কমছে ১৫৬টি উন্নয়ন প্রকল্প।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App