×

জাতীয়

নগদ সহায়তা তালিকার ১৩ লাখই ভুয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২০, ০৯:৪৪ এএম

নগদ সহায়তা তালিকার ১৩ লাখই ভুয়া

ফাইল ছবি

নগদ সহায়তা তালিকার ১৩ লাখই ভুয়া

ফাইল ছবি

বৈধ ৮ লাখের মোবাইলে টাকা দেয়া শুরু আজ ৪২ লাখ উপকারভোগীর নতুন তালিকা হচ্ছে

করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেয়ার জন্য দেশজুড়ে ২১ লাখ উপকারভোগীর তালিকা হয়েছিল। এরমধ্যে মাত্র ৮ লাখ উপকারভোগীর তথ্যের সত্যতা পেয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। বাকি ১৩ লাখ উপকারভোগীর তথ্যই ভুয়া। ফলে এই ১৩ লাখ উপকারভোগীর তালিকা বাতিল করা হয়েছে। শুদ্ধভাবে বাকি ৪২ লাখ নতুন উপকারভোগীর তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে আগের তালিকায় শুদ্ধ থাকা ৮ লাখ উপকারভোগীর মোবাইলে আজ সোমবার থেকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নগদ আড়াই হাজার টাকা পাঠানো শুরু হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সবমিলিয়ে ৫০ লাখ উপকারভোগী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নগদ আড়াই হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল পাবেন। এই তালিকা করতে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। দায়িত্ব দেয়ার দুদিনের মধ্যেই তালিকা করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয় মাঠপ্রশাসন। এরপরই কেলেঙ্কারির চিত্র বেরিয়ে আসে। তালিকায় দেখা যায়, বহু উপকারভোগীর নামের পাশে একটি মাত্র মোবাইল নম্বর রয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নগদ সহায়তা প্রকৃত দুস্থদের হাতে পৌঁছা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়ছিল। কিন্তু ধরা পড়ায় এখন ৮ লাখ উপকারভোগী সেই সুবিধা পাচ্ছেন। বাকি ৪২ লাখের নতুন তালিকা হওয়ার পর চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে নগদ সহায়তা পাঠানো শুরু হবে।

জানতে চাইলে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (ত্রাণ-১) আবুল খায়ের মো. মারুফ হাসান ১৭ মে ভোরের কাগজকে বলেন, কিছু ভুল থাকায় আগের তালিকা বাতিল করে নতুন তালিকা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নতুন নির্দেশনার আলোকে তালিকা আসা শুরু হয়েছে। আগের তালিকা এবং নতুন তালিকায় কতটুকু ফারাক আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই হিসাবটি আমরা এখনো করিনি। জেলা থেকে তালিকাগুলো আসা শুরু হয়েছে। আজকালের মধ্যে মিলিয়ে দেখব, কোথায় কি ঘাপলা হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তা মেরে খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পুরো বিষয়টি নজরদারি করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রোগ্রামার মাসুম বিল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নগদ সহায়তা দেবেন এমন ঘোষণার পর মাঠপর্যায়ে তালিকা করে ঢাকায় পাঠানো শুরু হয়। আমরা সেই তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেই। অর্থ মন্ত্রণালয়ের যাচাইয়ে এই ভুলগুলো ধরা পড়ে। এরপর আমরা আবার যাচাই-বাছাই শুরু করি। এতে ২১ লাখ উপকারভোগীর তালিকায় মাত্র ৮ লাখ উপকারভোগীর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। এখন ৮ লাখ উপকারভোগীর কাছে আজ সোমবার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত আড়াই হাজার টাকা যাওয়া শুরু করবে। বাকি ১৩ লাখ উপকারভোগীর তালিকা বাতিল করা হয়েছে। নতুন তালিকা যাতে নির্ভুল থাকে সেজন্য ‘টপ টু বটম’ কাজ চলছে। ঈদের আগে ৫০ লাখ উপকারভোগীর কাছে নগদ সহায়তা পৌঁছাতে হবে। জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল গতকাল ভোরের কাগজকে বলেছেন, এটা তো কোনো নিউজই না। কেন যে সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে এভাবে লিখছেন বুঝতে পারছি না। এখন ডিজিটাল যুগ। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল মাধ্যমেই টাকা উপকারভোগীর কাছে পাঠাবেন। এখানে একটি মোবাইল নম্বরে একবারের বেশি টাকা যাবে না। টাকা পাঠানোর আগে উপকারভোগীর তালিকা ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যাচাই হবে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া টাকা মেরে খাওয়া কি এতই সহজ? তালিকায় নয়ছয় কিংবা একাধিক মোবাইল নম্বর ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যা হয়েছে তা ভুল বোঝাবুঝি। বহু মানুষের তালিকা করতে গিয়ে কিছুটা ভুল হয়েছে। এখন সেটা শুধরে নেয়া হচ্ছে। ওই তালিকায় একজন উপকারভোগীর ২৩টি তথ্য দিতে হয়। শুধু মোবাইল নম্বর দিলেই হবে না। উপকারভোগীর মোবাইল নম্বর না থাকলে ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংকে একাউন্ট করতে হবে। সবমিলিয়ে টাকা পাঠানোর আগে বড় ধরনের ছাঁকুনি হবে। তবে সচিব এসব কথা বললেও তার মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল রবিবারের মধ্যে সংশোধিত তালিকা পাঠাতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত তালিকা পাঠানোর চিঠি দেয়া হয়েছে, মুজিববর্ষে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান কর্মসূচি সংক্রান্ত নির্দেশিকায় ভাসমান মানুষ, নির্মাণ শ্রমিক, গণপরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, রেলওয়ে কুলি, মজুর, ঘাট শ্রমিক, নরসুন্দর, দিনমজুর, রিকশা/ভ্যানগাড়িচালক এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের লোকসহ মানবিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য পরিবাররা এবং যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে জীবিকা নির্বাহ করে এ রকম জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হাবে। উল্লেখ্য, প্রতি জেলার ৫ জন সুবিধাভোগীর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে আড়াই হাজার করে টাকা পাঠিয়ে গত বৃহস্পতিবার এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কোনো কোনো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মোবাইল নম্বর ২০-৩০ জন বা তারও বেশি উপকারভোগীর নামের পাশে থাকার বিষয়টি প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে গত দুই দিন ধরে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমেও বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App