×

মুক্তচিন্তা

নারীর কাজের যথাযথ স্বীকৃতি দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২০, ১০:০২ পিএম

নারীর কাজের যথাযথ স্বীকৃতি দিন
দেশ এগুচ্ছে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের অপরিসীম কর্মযজ্ঞের বদৌলতে। নারী-পুরুষের মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এই প্রিয় স্বদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের তকমা ছাপিয়ে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উঠে আসছে, নিশ্চয়ই এটি সুখবর। দেশের পোশাক খাতের আজ বিশাল যেই অর্জনের কৃতিত্ব প্রায় পুরোটাই নারীর। পোশাক খাতে মোট রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ জোগান দিচ্ছেন নারীরা। দরিদ্র, নিম্ন আয়ের এই নারীরাই সস্তা শ্রমের বিনিময়ে দেশের পোশাক খাতকে সচল ও গতিশীল রেখেছে। বাংলাদেশে সস্তা শ্রমের জন্য বহির্বিশ্বে বেশ সুনাম রয়েছে। কিন্তু আমরা কখনো ভেবে দেখছি কী, অসহায় দরিদ্র নারীদের ঠকিয়ে অমানবিক কায়দায় শ্রম শোষণই হচ্ছে আদতে সস্তা শ্রম! একই কাজ, একই দায়িত্ব পালনÑ অথচ পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীদের ঠকানো হচ্ছে। নারী শ্রমিকদের প্রতি চলে সীমাহীন বঞ্চনা ও বৈষম্য। পুরুষের সমান কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করেও কর্মক্ষেত্রে একজন নারী শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায় না। অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ নিয়ে নারী শ্রমিক খুঁজে। উদ্দেশ্য কিন্তু মহৎ নয়। নারী বলে মজুরি কম দেয়া যাবে, অল্পে তাদের তুষ্ট রাখা যাবে ভাবখানা যেন এমনই। নারীর প্রতি দরদ ও মমত্ববোধের কোনো বালাই নেই। কীভাবে কম পারিশ্রমিকে নারীকে খাটানো যায় এই চেষ্টায় থাকেন অনেকেই। নারীকে ঠকিয়ে-ঠেকিয়ে এক শ্রেণির মালিক-পুঁজি লগ্নিকারী ব্যক্তি যেন টাকার পাহাড় গড়ার মওকা খুঁজে। নারী শ্রমিকরা হলো এই মালিক-পুঁজিপতিদের থর থর করে উপরে ওঠার নিরাপদ বাহন। নারীদের শ্রমের ন্যায্য প্রতিদান কোথাও মিলে না। কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিক ও নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যৌক্তিক বেতন ভাতা ও অন্যান্য সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তা হলফ করে বলা যাবে না। নারীর প্রতি বৈষম্য, অবহেলা ও বঞ্চনা দেশ ও সমাজের চারপাশে অহরহ দেখা গেলেও একটি জায়গায় তারা মোটামুটি ভালোই আছে বলা যায়। তা হলো গণমাধ্যম। আগে দেখতাম টিভিতে খবর পাঠক হিসেবে নারীদের উপস্থিতি। এখন বার্তা কক্ষ, নিউজ, রিপোর্টিং, সম্পাদনা বিভাগ সব জায়গায় সফল বিচরণ নারীদের। নারীরা চান সমানাধিকার। এতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। ইসলাম নারীকে মাতৃত্বের আসনে ঠাঁই দিয়েছে। নারীদের বিচরণ আজ সব ক্ষেত্রে। ব্যাংক-আদালত পাড়ায় এবং স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়েও নারীদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। সব মৌলিক ও সৃষ্টিশীল কাজে নারীরা পিছিয়ে নেই। সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় নানা পেশায় ভালোই আছেন নারীরা। নারীরা আজ নিজ যোগ্যতায় সব অঙ্গনে ছড়িয়ে আছে। মাহে রমজানে সবচেয়ে বেশি কষ্ট স্বীকার করেন গৃহিণী এবং কর্মজীবী নারীরা। যারা চাকরিতে সময় দেন তাদের আবার ঘরে ফিরে ঘরের কাজও সামাল দিতে হয়। রান্নাবান্না তো আছেই, তার ওপর সংসার-বাচ্চাদের জন্য সময় দেয়া এবং সংসারের কাজে বেশি ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন নারীরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নারীরা এবং গৃহপরিচারিকারা ১৬/১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজে ডুবে থাকেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের এই শ্রম-কষ্টের স্বীকৃতি মেলে না। এত বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে নারীরা কী পাচ্ছেন? সম্মান না স্বীকৃতি! কোনোটাই নয়। মধ্যরাতে জেগে ওঠে সাহরির রান্নাবান্না করেন নারীরা। সারাদিন নানাভাবে ব্যস্ত থাকেন। আবার বিকেল না গড়াতেই ইফতার আয়োজনে নিজেদের সময়টুকু উজাড় করে দেন নারীরা। অনেক বাড়িতে গৃহপরিচারিকা থাকলেও তাদের ঠিকমতো খাবারও দেয়া হয় না। মাহে রমজানে অধীনস্থ কাজের লোকদের কাজের ভার হালকা করার এবং তাদের প্রতি সহানুভ‚তিশীল হওয়ার দিকনির্দেশনা পেশ করছেন মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। গৃহকর্মীদের প্রতি মানবিক আচরণ করার কথা বলেছেন তিনি। নিজে যা খাবেন, তা গৃহকর্মীসহ সবাইকে খাওয়াতে হবে। নিজে যা পরিধান করবেন, তাদেরও সেইভাবে ভালো পোশাক পরাতে হবে। নিজের জন্য কোনো কাজ কঠিন মনে হলে অধীনস্থদের মাধ্যমে জোর করে সেই কাজ করানো যাবে না। এটাই ইসলামের বিধান। বিদায় হজের ভাষণে প্রিয় নবী (দ.) একটি মানবিক সম্প্রীতিপূর্ণ ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যা সব যুগে সবাই মেনে চলে অশেষ উপকৃত হতে পারেন। লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App