×

সাহিত্য

করোনা যুদ্ধেও বাঙালি জয়ী হতে পারবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২০, ০২:২১ এএম

করোনা যুদ্ধেও বাঙালি জয়ী হতে পারবে

রুবী রহমান

বিশেষ সাক্ষাতকার রুবী রহমান কবি
রুবী রহমান। মানবতার কবি। ছিলেন সংসদ সদস্যও। সব কিছু ছাপিয়ে তার প্রধান পরিচয় তিনি কবিই। কবিতা লিখছেন গত শতকের ষাটের দশক থেকে। বহুপ্রজ নন তিনি। কিন্তু তাঁর কবিতায় নিজস্বতা রয়েছে- কী স্বর, কী শৈলী অথবা বিষয়আশয়ের দিক থেকেও তিনি স্বতন্ত্র এবং নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য কবি। নারী বলেই হয়তো নারীর জীবনযাপন ও অনুভবের অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর কবিতায়। তবু নারীর অনুভবকে ছুঁয়ে তাঁর উচ্চারণ হয়ে উঠেছে মানবিক। এসব কারণেই ষাটের তিনি একজন উল্লেখযোগ্য কবি। মানবিক এই কবির করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনটা বিষণ্ন হয়ে আছে। যা করণীয় তারও কিছু করা হচ্ছে না। সবচে খারাপ লাগা হচ্ছে-আনিস স্যার চলে গেলেন। তার কাছে আমাদের সবার অনেক ঋণ। কিন্তু আনিস স্যারকে শেষ বিদায় জানাতেও যেতে পারলাম না। এই সমস্ত যাওয়া, নানা জায়গায় যেতে না পারায় মনে হচ্ছে মানবসভ্যতা ধ্বংসের দিকেই যাচ্ছে কীনা বুঝতে পারছি না। তবে মানুষ প্রচণ্ড আশাবাদী। মানুষ পরাজিত হয় না। মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আমার মেয়েটা থাকে আমেরিকায়, তার জন্য উদ্বিগ্ন আছি। সে সর্বক্ষণ খোঁজ খবর নিচ্ছে, আর খবরদারি করছে, আমি ঠিকটাক মতো ধোয়া ধোয়ি করছি কি না। সব কিছু ধুতে ধুতে জীবন শেষ। মনে হচ্ছে এসব করতে করতেই চব্বিশ ঘন্টার অর্ধেক সময়ই চলে যাচ্ছে। কি পড়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি রুবী রহমান বলেন, পড়ছি আমেরিকান লেখক মায়া অ্যাঞ্জেলো আত্মজীবনী ‘আই নো হোয়াই দ্য কেজড বার্ড সিঙ্গ’। যিনি একাধারে ছিলেন কবি, সাহিত্যিক এবং সামাজিক আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। এই আত্মজীবনীর জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। জীবনের প্রথম ১৭টি বছর ধরা রয়েছে এই বইয়ে। তার পর লিখেছেন আরও ছ’টি গ্রন্থ। বেশ ভালো লাগছে। আরেকটা বই পড়ছি আন্দ্রেজিতকে নিয়ে সিমোন দ্য বোভোয়ারের লেখা। যে বইটা লেখা হয়েছিল আন্দ্রেজিত মারা যাওয়ার পরে। তবে লেখালেখিটা হচ্ছে না। আমার মনে হয় এই সময়ে লেখাটা দরকার ছিল। করোনার সময়টা আমরা কি করে কাটাচ্ছি এই সময়টায় কি করে দিন যাপন করছি, কি অনুভব করছি। কিন্তু একধরণের উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের কারণে লেখা আসছেই না। আরেকটা বিষয় আর খুবই খারাপ লাগছে, তা হচ্ছে- রাস্তায় মানুষেরা সাহায্যের আর্তনাদ করছে, খাবারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। অভাবের তাড়নায় প্রাণের ভয়ও তারা করছে না! তাদেরকে নানাভাবে সাহায্যের চেষ্টা করছি। মানুষের এসব দুর্গতি দেখে একটা দুর্ভিক্ষের ছায়াও দেখতে পাচ্ছি। উদ্বেগ, শংকা আর উৎকণ্ঠায় আছি। করোনার অভিঘাতে অনেক কিছুই বদলে গেছে, আপনার চেনা পৃথিবীটার কতোটা বদল ঘটেছে বলে মনে করছে? এর উত্তরে বিশিষ্ট এই কবি বলেন, পাখির ডাক শুনতে পাই এখন। ঘাড়ির চলাচলের শব্দ নেই বলে পাখিদের ডাকাডাকি অনেক বেড়ে গেছে। তারা হয়তো অভয় পেয়েছে। পাখির ডাক যখন শুনি বেশ ভালো লাগে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় যে মানুষের সঙ্গ ছাড়া পাখির ডাক শুনে আমাদের কি লাভ? মানুষের সঙ্গ না থাকলে পাখির ডাক তো অর্থহীন হয়ে যায়। এ ছাড়া রাস্তা ঘাট একেবারে খা খা করছে, এটাও ভালো লাগে না। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করেন? আত্মপ্রত্যয়ী কবি রুবী রহমান দৃঢ় প্রত্যয়ে বলেন, আমার গভীর বিশ্বাস মানুষ খুব অপরাজিত। মানুষের চরিত্রে একটা অপরাজিত স্বভাবই আছে। মানুষ অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি। যে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছে, নিশ্চয় করোনা যুদ্ধেও জয়ী হতে পারবে। হয়তো সময় লাগবে। কিন্তু মানুষ ঘুরে দাঁড়াবেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App