×

অর্থনীতি

সীমিত ব্যাংকিং সেবায় ভোগান্তিতে গ্রাহক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২০, ১০:১১ এএম

সীমিত ব্যাংকিং সেবায় ভোগান্তিতে গ্রাহক

ব্যাংকে সারিবদ্ধ গ্রাহক। ছবি: সংগৃহীত

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে চলছে সাধারণ ছুটি। ছুটির মধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখা হয়েছে দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে। তবে সীমিত আকারে চলছে ব্যাংকের কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে অনেক শাখা। ফলে যেসব শাখা খোলা থাকছে সেখানে সেবা পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন গ্রাহকরা, বাড়ছে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি। আবার প্রয়োজনীয় সেবা পেতেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহককে। এতে করে কাজের সময় বেশি লাগছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট শাখায় গ্রাহকের ভিড় কমাতে এবং সার্বক্ষণিক লেনদেনসহ সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ গ্রাহক, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। যদিও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক শুরু থেকেই ঝুঁকির মধ্যে সব শাখা খোলা রেখেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো পুরোদমে ব্যাংকিং কার্যক্রম খোলা রাখতে আগ্রহী নন। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গ্রাহকদের স্বার্থে ইতোমধ্যে ধাপে ধাপে লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঈদের আগে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে গ্রাহকদের। তারপরও অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম বুথ এবং মোবাইল ব্যাংকিং স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে। যাতে গ্রাহকদের কোনো সমস্যা না হয়। সিরাজুল ইসলাম বলেন, সমস্ত ব্যাংক খোলা রাখার মতো পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছি না। জানা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশেই লকডাউনের মধ্যে তাদের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংক ব্যবস্থা পুরোদমে চালু রেখেছে। এছাড়া তাদের অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। বাংলাদেশেও অর্থনীতি সচলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন নানামুখী পদক্ষেপ। প্রতিদিনই বাড়ছে প্রণোদনা প্যাকেজের পরিধি। ব্যাপকভাবে চলছে দেশে ত্রাণ বিতরণ। ১৫ রোজার পর থেকে শুরু হয়েছে দেশের ধনিক শ্রেণিদের জাকাত দেয়া। এই জাকাতের পরিমাণও দেশে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ঈদকেন্দ্রিক মানুষের ব্যাংক থেকে ব্যাপক অর্থ উত্তোলন এবং আমানত রাখার পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া ঈদে মার্কেট খোলা না থাকলেও অনলাইন মার্কেটিং ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে। করোনার মধ্যেও কষ্ট করে হলেও রোজার মাসে ঈদকেন্দ্রিক প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যা গ্রামীণ অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করছে। এতে দেশে বেড়েছে অর্থের প্রবাহ। কিন্তু এ সময়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার অন্যতম নাম ব্যাংকিং খাত গ্রাহকদের হতাশ করেছে। পাচ্ছেন না স্বাভাবিক সেবা। অথচ অন্যান্য ঈদের আগে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তও ব্যাংক খোলা রাখতে হতো। একই সঙ্গে ছুটির দিনেও ব্যাংক খোলা রাখা হয়। বর্তমানে গত প্রায় দুই মাস ধরে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান থাকায় দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু রুটিন কাজ টাকা দেয়া-নেয়ায় ব্যস্ত আছে। চেয়ে থাকছে বাংলাদেশ ব্যাংক কি সার্কুলার দিচ্ছে তার দিকে। সামনে ঈদ হওয়া সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর নেই গ্রাহকদের নিয়ে কোন চিন্তা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা থাকায় কাজের সময় কমেছে। অনেক শাখা বন্ধ রয়েছে। যেগুলো খোলা সেখানেও ব্যাংকাররা দুই শিফটে কাজ করছেন। সব সেবাও পাওয়া যাচ্ছে না। এতে একদিনের কাজ শেষ করতে চার থেকে পাঁচদিন লাগছে। ফলে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বিলম্ব হচ্ছে, খরচও বেড়ে যাচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও। তাই সাধারণ ছুটির মধ্যে সরকার দোকানপাট-শপিংমল, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়েছে। তাই এ সময়ে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও সব শাখা খোলা রাখাও জরুরি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকায় পূর্ণ দিবস খোলা থাকবে তফসিলি ব্যাংকগুলোর সব শাখা। তবে মতিঝিল ও দিলকুশায় অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম নেই। ব্যাংকের অধিকাংশ ফ্লোরেই তালা। গুটি কয়েক কর্মকর্তা অফিস করছেন। এমনকি সাধারণ কাজ চেক ক্লিয়ারিং কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। শুধু লোকাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের কার্যক্রম চলছে। সূত্রমতে, করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সংকট থেকে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প রক্ষা করতে বিভিন্ন খাতে সরকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তবে ঘোষণার পরে প্যাকেজের বাস্তবায়ন নিয়ে নানা জটিলতা শুরু হয়েছে। সমন্বয়হীনতার কারণে বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। প্রায় দুই মাস হতে চললেও এখনো প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যক্রম ৫ শতাংশও বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে পোশাক খাতে গত বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত আবেদন করা কারখানাগুলোর মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ কারখানার মালিক অর্থ ছাড় পেয়েছেন। ব্যাংকগুলোর গাফিলতিতে টাকা ছাড় না হওয়ায় অন্যদের বেতন দেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে সাধারণত রমজান মাসে অধিক ফজিলতের আশায় মুসলমানরা জাকাত দেন। হিসাব মতে, শুধু জাকাত বাবদ এই সময়ে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার হাতবদল হবে। এছাড়া বর্তমান মহামারির সময়ে যে যেভাবে পারছেন ত্রাণ দিচ্ছেন। মানুষকে সাহায্য করছেন। আর তাই ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা মানুষের অনেকটা বেড়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ঈদ কেন্দ্রিক মানুষের কেনাকাটা। কিন্তু ব্যাংকের অধিকাংশ শাখা খোলা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু শিল্পপতি ব্যবসায়ীরা। এমনকি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের নামে যেসব ব্যাংক ব্যবসা করছে তারাও এখন তাদের কার্যক্রম সীমিত করে দিয়েছে। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ব্যাংক সীমিত পরিসরে খোলা রাখলে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতাই নয়; গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App