×

মুক্তচিন্তা

তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কৃপাধন্য হোন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২০, ০৯:৫২ পিএম

মাহে রমজানে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত তাহাজ্জুদ নামাজ। তাই এই মাসে বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে মহান আল্লাহ পাকের কৃপাধন্য হতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি এমন কিছু বিশেষ নামাজ রয়েছে, যা আদায়ের মাধ্যমে ইমানদাররা আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করে। এমন একটি বিশেষ ইবাদত হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ। এই নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে বান্দাহর মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। মধ্য রাতে বা শেষ রাতে আরামের ঘুম ত্যাগ করে যাঁরা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন তাঁরা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবান। মাহে রমজানে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে ইমানদাররা আল্লাহ পাকের বিশেষ মেহেরবানি পেতে পারেন। যেহেতু এই রমজান মাসে যে কোনো পুণ্য কাজের প্রতিদান বা বিনিময় সত্তরগুণ থেকে সাতশগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। তাই এই মাসে তাহাজ্জুদ নামাজ বেশি বেশি পড়তে হবে। সেহরির ১৫-২০ মিনিট আগে শয্যা ত্যাগ করে এই নামাজ প্রতিদিন পড়তে পারলে অশেষ সওয়াবের ভাগিদার হওয়া যাবে। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত বা মাহাত্ম্য বর্ণনা করে মহান আল্লাহ পাক কুরআন মজিদে বলছেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম কর। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, ৭৯)। তাহাজ্জুদ আরবি ভাষায় ব্যবহৃত একটি শব্দ। তাহাজ্জুদ শব্দটি নিদ্রা যাওয়া এবং জাগ্রত হওয়া পরস্পরবিরোধী দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন কুরআন মজিদের সুরা বনি ইসরাঈলের ৭৯ নং আয়াতে আছে ‘রাতের কিছু অংশ কুরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন।’ কুরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকার মানেই হলো নামাজ পড়া। আর এই কারণেই রাতের নামাজকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়ে থাকে। কুরআন মজিদের ব্যাখ্যাকার তথা মুফাসসিরগণের মতে রাতে বিছানা পরিত্যাগ করে জিকির ও দোয়ায় নিমগ্ন থাকা, নফল নামাজ বা তাহাজ্জুদ আদায় করার দিকনির্দেশনা রয়েছে ওই আয়াতে। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা মেরাজের পর নফল হয়ে যায়। এই নামাজ মন ও চিন্তাধারাকে নির্মল ও পবিত্র করে এবং সত্যের ওপর সুদৃঢ় থাকার প্রেরণা সৃষ্টি করে। কুরআন মজিদের সুরা মুজ্জাম্মিলে এই প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা নফসকে করায়ত্ত বা দমিত রাখায় খুব বেশি কার্যকর এবং শেষ সময়ের কুরআন পাঠ বা জিকির একেবারেই যথাযথ।’ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় হলো আম্বিয়া কেরামের সুন্নাত। আল্লাহর মকবুল বান্দাহ হওয়ার জন্য তাহাজ্জুদ আদায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সঙ্গে বান্দাহর সম্পর্ক গভীর থেকে আরো গভীরতর হয়। অর্জিত হয় আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য। রমজান মাসে তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়াও বেশি বেশি নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করা জরুরি। কুরআন মজিদের বিভিন্ন সুরা পাঠ করা যায় দিনে-রাতের যে কোনো সময়। ফজিলতপূর্ণ নানা দরুদ শরিফ পাঠেও অশেষ সওয়াব অর্জন করা যায়। নফল নামাজ, জিকির আজকার, দান-সদকাহ ইত্যাদি পুণ্যময় কাজেও বেশি বেশি সময় দিন। আল্লাহর সান্নিধ্য ও মেহেরবানি অর্জন করুন নানামুখী ইবাদতের মাধ্যমে। প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ মুস্তফা সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজকে শ্রেষ্ঠ নফল নামাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে প্রিয় নবীর (দ.) ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কোনোদিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকেননি। হাদিস শরিফে তাহাজ্জুদ নামাজের নানা ফজিলতের কথা বিবৃত হয়েছে। যেমন হজরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার নামাজের পর দুই বা ততোধিক রাকায়াত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।’ পবিত্র রমজান মাসে দিনভর সিয়াম সাধনা এবং রাতে আরামের ঘুম ত্যাগ করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় আল্লাহ পাকের কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও সাওয়াব অন্যান্য নফল ইবাদতের চেয়ে অধিক এবং এটি আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল। তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট সময় আছে। মধ্যরাতের পর বা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ পার হওয়ার পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। রাত ২টার পর থেকে ফজরের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যায়। সেহরির সময় শেষ হলে অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সীমা শেষ হয়। হজরত আবু হুরাইরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, প্রিয় নবী (দ.) বলেছেন, ‘ফরজ নামাজসমূহের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম শরিফ)। অতএব পারলে প্রতিদিন রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ুন। আল্লাহ পাকের বিশেষ কৃপাধন্য হোন। লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App