×

সাময়িকী

দ্রৌপদীর ছায়াপাপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২০, ১২:৩০ পিএম

দ্রৌপদীর ছায়াপাপ

‘লিটন মহন্ত’ অন্যরকম এক গল্পকারের নাম। সমসাময়িক সময়ে তার গল্প টানে। বিশেষ করে তার গল্পে যে পরাবাস্তবতার ছায়াপথ খেলা করে তা পাঠে মুগ্ধ হতে হয়। তার গল্প শুরু হয় একটি প্রতীকী নাম ধরে আর শেষ হয় বাস্তবতার শরীর ভেদ করে পরাবাস্তবতার মণিকোটর ছুঁয়ে। ‘লিটন মহন্ত’ খুব যে লেখেন তেমন নয়। অনেক দিন সময় নিয়ে নিয়ে লেখেন, লেখায় বলতে চান পোড়-খাওয়া সত্য বিষয়ের বিচিত্র রূপ-কথা। তার কোনো গল্প অবাস্তব বা বানানো বাক্য-বিশদ নয়। সমাজ, সংসার, পরিবার আর জীবন-বোধের সংস্পর্শিত চিত্রপট। আমাদের চলমান জীবনের কোনো একটি বিষয় লিটন মহন্ত আগে আঁকেন মনে; তারপর এর দশদিক বিশ্লেষণ করে নিষ্ঠ বাস্তবতাকে আপাতদৃষ্টিতে অবাস্তব এমন এক বাস্তবতার ব্যাখ্যা-বর্ণনায় বলে যান সত্যমতন; মনে হয়, এই তো চোখের সমানে দেখছি দৃশ্যপট। এখানেই লিটন মহন্তকে ভালোলাগে। তার একমাত্র গল্পগ্রন্থ ‘দ্রৌপদীর ছায়াপাপ’ দ্বিতীয়বারের মতো পাঠ করে মনে হলো গ্রন্থটি সম্পর্কে পাঠকের জানার প্রয়োজন আছে, এই কারণে যে, গল্পহীন সময়ে গল্পের নামে অযথা হৈচৈর ভিড়ে ‘দ্রৌপদীর ছায়াপাপ’ গ্রন্থের মোট তেরোটি গল্পের তেরোটি গল্পেই দেখা মিলে যাপিত জীবন-ব্যবস্থাপনার মোটা দাগের অব্যবস্থাপনা কিংবা মনো ও দেহ-যৌগিকের আঁচলে আবৃত্ত নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় অনুচ্চার বক্তব্যের মিহিন বক্তব্য। এই বক্তব্যের ভাষা পুরাতন নয়- নতুন। এই বলার ভঙ্গি মধ্যযুগীয় নয়- আধুনিক। এই ভাষার ছবি আড়াল নয়- প্রকাশ্য। গ্রন্থের গল্প ‘জোছনা ও ছায়ামৃগ, একটি সরীসৃপ ও চুলের গন্ধ, দ্রৌপদীর ছায়াপাপ, জল খোঁয়াড়, জলের নর্তকী ও শূন্যতার ছায়া, জাড় ও জারুল কথা, জল তাড়না, সহবাস, বৃষ্টি সংক্রান্ত দুপুর, ছায়াঘর, পতঙ্গ পুরুষ’ সুপ্ত হয়ে গেঁথে আছে শব্দের বুনন-বক্যে। পড়তে থাকলে প্রতিটি গল্প জীবন্ত হয়ে ওঠে তার বলার বৈশিষ্ট্যে। অনেক গল্প পাঠে যে পাঠক অভ্যস্ত সে পাঠক মাত্রই জানবেন, গল্প পাঠে দুটি দিক ফুটে ওঠে- একটি লৌকিক বিচরণে অলৌকিক পরিভ্রমণ, আরেকটি অলৌকিক বিচরণে লৌকিক ভ্রমণ। লিটন মহন্ত-এর গল্প-কথার রূপ অলৌকিক বিচরণে লৌকিক ভ্রমণ। বিষয় লৌকিক চারপাশের; খেয়ালের বিচরণ অলৌকিক, যা সব গল্পকারের ভাষায়, দর্শনে মিলে না। লিটন মহন্ত-এর আঙুলে এই রূপটি ধরা পড়ে। এটি তিনি করেন সম্পূর্ণ সচেতনভাবে। কাব্যিক ভাষার বাক্সময়তায় গল্পের কাহিণী বর্ণনায় ‘লিটন মহন্ত’ পারদর্শী। ‘দ্রৌপদীর ছায়াপাপ’-এ হাঁটতে থাকলে নিজ চোখে অবলোকন করা যায় গল্প ও কবিতার ভাষা মিলনে ভাব ও ভাষার মধ্যে কী এক মায়ামোহ তৈরি হয়েছে পাতায় পাতায়; কী এক ঘোর জেগে আছে কাহিনীর গহ্বরে। ‘বিছানার ভেতর জলের অসম্ভব খুনসুটি। একটি সরীসৃপ উঠে আসে বিছানায়, ছায়া ছায়া অন্ধকার সাদা চাদরের ওপর ছোপ ছোপ রক্তের শুকনো দাগ। সরীসৃপ উঠে আসে শরীরের ওপর, শীতল স্পর্শ, স্পর্শে চরম আদিমতা, শীতল রঙের বিশ্রি গন্ধ। শরীরটা শিরশির করছে, মুখের মাঝে সরীসৃপের মুখ। ঘামে শরীরটা জ্যাবজ্যাব করে ভিজে যায়, তারপর অপার বিস্ময়ে সরীসৃপের লেজটা শূন্যের উপর ভাসতে থাকে, শূন্য থেকে মহাশূন্যে। ...’ (একটি সরীসৃপ ও চুলের গন্ধ)। এই যে বলার ধরন, গল্পের শুরু; এমন আচ্ছন্ন মায়াজাল, ঘোর অঙ্কিত তেরো গল্পের সব গল্পেই। গল্পগ্রন্থটির রস আস্বাদন করতে থাকলে আপনা থেকেই তা উন্মোচিত হতে থাকে। পাঠশেষে নিঃসঙ্কোচনে এই বলা যায়, গল্পগ্রন্থটি নিরাশ করেনি, পাঠতৃপ্তিতে ভরিয়েছে কানায় কানায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App