×

সারাদেশ

জন্মের ১৫ বছরেও মেলেনি শিমলার পিতৃ পরিচয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২০, ০২:৩৮ পিএম

জন্মের ১৫ বছরেও মেলেনি শিমলার পিতৃ পরিচয়

বাবা শেখ আজিজুর রহমান সুমন ও মেয়ে শিমলা আক্তার। ছবি: প্রতিনিধি

রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বাবা আমাকে দেখে অন্য দিকে ফিরে থাকে। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যায়। সবাই বাবার আদর পায়, আমি বাবার কোনো আদর পাই না। সবাই বাবাকে বাবা বলে ডাকে, তবে আমি বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারছি না। আমার কি অপরাধ?’’ এই বলে হাউমাও করে কেঁদে উঠলেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিনের ব্রাহ্মনগাঁও গ্রামের শিমলা আক্তার (১৫)। তার বাবার নাম শেখ আজিজুর রহমান সুমন।

শুক্রবার (১৫ মে) সকালে ব্রাহ্মনগাঁও শহীদ ময়েজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার এ কান্নায় উপস্থিত প্রায় শতাধিক মানুষের চোখ অশ্রুশিক্ত হলো। সবাই নিরবেই চোখ মুছে নিলেন। কিন্তু কেউই শিমলাকে শান্তনা দিতে এগিয়ে আসলেন না। গত ১৫ বছর এলাকাবাসী শিমলার বাবা ও তার পরিবারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও শিমলাকে তার বাবার আদর ফিরিয়ে দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে কেউ এগিয়ে গেলে লাঞ্চিত হতে হয়েছেন। এখন আর কেউ শিমলাকে শান্তনা দিতে এগিয়ে আসেনা। কারণ এলাকাবাসী জানে শিমলার পিতৃ পরিচয় তারা ফিরিয়ে দিতে পারবে না।

এলাকাবাসী জানায়, ২০০৪ সালের দিকে শেখ মোহাম্মদ আলীর ছেলে শেখ আজিজুর রহমান সুমন একই গ্রামের ছবির মোল্লার মেয়ে সাথীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর সেই সূত্রে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও গড়ায়। কয়েকদিন পর সাথী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি টের পেয়ে কেটে পড়ার চেষ্টা করে সুমন। কিন্তু এলাকাবাসীর তোপের মুখে তা সম্ভব হয়নি। গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে তাদের বিয়ে দেয়া হয়। সাথীকে বাড়ি নিয়ে যায় সুমন ও তার পরিবার। বিয়ের ৩ মাসের মধ্যেই স্থানীয় একটি হাসপাতালে জন্ম হয় শিমলার। ওই সময় সুমন হাসপাতালে তার স্ত্রী ও নবজাতককে রেখে পালিয়ে যায়। কিন্তু সাথীর দরিদ্র পরিবারের পক্ষে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা সম্ভব না হওয়ায় থানার ওসি তা পরিশোধ করেন। এরপর থেকে একটি দিনের জন্যও সুমন তার স্ত্রী-কন্যার খোঁজখবর নেয়নি।

শিমলার নানা ছবির মোল্লা ও নানী সালেহা বেগম জানান, ওই সময় অসুস্থ্ মেয়ে ও নবজাতককে নিয়ে তাদের বাড়িতে ফেরার পরও সুমন তার বাড়ি না নেওয়ার কারণে কিছু মানুষ নানা ধরনের কথা বলাবলি করছিল। অবশেষে লজ্জা ও ভয়ে তারা বাড়ী ছাড়া হয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর গাজীপুরের টঙ্গীতে ছিলেন। পরিবারের খরচ ও বাড়ী ভাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বিধায় ১ বছর আগে নাতনিকে নিয়ে গ্রামের বাড়ী ফিরে আসে। ইতিমধ্যে শিমলার মা সাথীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু শিমলার কী হবে? তারও তো ভবিষ্যৎ আছে? তারা তাকে নিয়ে কোথায় যাবে? তারা চায় সুমন তার মেয়েকে পরিচয় দিয়ে ফিরিয়ে নিক।

এ ব্যাপারে কথা হয় শিমলার বাবা শেখ আজিজুর বলেন, তাকে পিতৃ পরিচয় দেইনি কে বলেছে? জন্ম নিবন্ধনে তো পিতা হিসেবে আমার নামই লিখেছে। শুধু জন্ম নিবন্ধনে বাবার নাম লিখলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতিকুর রহমান আকন্দ ফারুক জানান, ওই সময় স্থানীয় একটি স্কুল মাঠে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে সুমন বিয়ে করে সাথীকে। তবে বিএনপি করা সুমন দলের প্রভাব খাটিয়ে পরে তা অস্বীকার করে। তবে বিষয়টি মানবিক, মেয়েটি এখন খুব অসহায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App