করোনা ভাইরাসের কারণে টালমাটাল বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থা। বিশ্বের প্রায় সব খেলাই আক্রান্ত হয়েছে এই করোনার ছোবলে। তবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য ফের খেলা শুরু করার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছে খেলাধুলার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এর মধ্যে বিভিন্ন ফুটবল যে লিগগুলো আছে সেগুলো শুরু করার জন্য মোটামুটি প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়ে গেছে। তবে ক্রিকেটে সেই প্রস্তুতি এখনো শুরু হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। ফলে বিশ্বের অন্যান্য ক্রিকেট বোর্ডগুলোর মতো অনিশ্চয়তায় রয়েছে বাংলাদেশ। আর তাই তো অন্য বোর্ডগুলোর মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) পড়েছে আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায়।

এই ক্ষতির কারণে জাতীয় দলের বিদেশি কোচদের সঙ্গে যে চুক্তি রয়েছে তা নিয়ে ভাবছে বিসিবি। মানে বলতে গেলে তাদের চুক্তি অনুযায়ী যে বেতন দেয়া হয় সেই বেতন থেকে টাকা কেটে নেয়ার কথা ভাবছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের যে তীব্রতা রয়েছে তার আঁচ দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যা। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে মে মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আর তখন আবার মাঠে ফিরবে ক্রিকেট। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও যদি করোনায় ক্রিকেট বোর্ডের ৫-৬ মাসের রাজস্ব হারিয়ে যায়, তাহলে কোচদের চুক্তির ব্যাপারে নতুন করে ভাববে বিসিবি। বুধবার ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে এমনটা জানিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান আকরাম খান। এ ব্যাপারে ক্রিকবাজকে আকরাম বলেন, ‘সবকিছু স্বাভাবিক হতে হতে যদি আমরা ৫-৬ মাস হারিয়ে ফেলি, তাহলে কোচদের চুক্তির ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের। অবশ্যই উভয়পক্ষের কথা চিন্তা করেই যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভেট্টোরির পেছনে খরচ অনেক। তাই দেখতে হবে তার সঙ্গে কীভাবে সব সমাধান করা যায়।’

বোর্ডের আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেহেতু ১০০ দিনের ভিত্তিতে ভেট্টোরির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, তাই যে কয়দিন কাজ করবেন তিনি, ঠিক ততদিনের বেতনই দেয়া হবে তাকে। ক্রিকবাজকে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ সে (ভেট্টোরি) যতদিন কাজ করবে, আমরা ঠিক ততদিনের টাকাই তাকে দেব। যেহেতু দৈনন্দিন ভিত্তিতে চুক্তি, তাই এর বেশি দেয়ার কোনো কারণ নেই। যাদের সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন ভিত্তিতে চুক্তিতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে। বাকিদের ব্যাপারে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যান্য দেশ যা করবে, আমরাও তাই করব।’

এদিকে জাতীয় দলের বিদেশি কোচিং স্টাফদের মধ্যে হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন এবং ফিজিও হুলেন ক্যালেফাতোর সঙ্গে রয়েছে বাৎসরিক চুক্তি। এছাড়া স্পিন পরামর্শক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি এবং ফিল্ডিং কোচ রায়ান সঙ্গে চুক্তি দিন ভিত্তিতে। গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত ১০০ দিনের চুক্তি করা হয়েছে ভেট্টোরির সঙ্গে। বিনিময়ে প্রতিদিন আড়াই হাজার ডলার করে পান এ কিউই কিংবদন্তি। হেড কোচ ডমিঙ্গো যোগ দিয়েছেন ২০১৯ সালের আগস্টে, চুক্তি শেষ হবে ২০২১ সালের আগস্টে। পেস বোলিং কোচ গিবসনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এবং ২০২১ সালের নভেম্বরে শেষ হবে ক্যালেফাতোর চুক্তির মেয়াদ। গত মার্চে যোগ দেয়া ট্রেইনার ট্রেভর লি’র সঙ্গে চুক্তিটা ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত।

যদিও এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে কোচদের বেতন কাটার মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অন্য বোর্ডগুলো কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটি দেখার জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু নিজেদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে বিসিবি এখনই এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। ক্রিকেট বোর্ডগুলোর মধ্যে দুদিন আগে কোচদের বেতন কাটার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। তারা তাদের প্রধান কোচ ল্যান্স ক্লুজনার, ব্যাটিং কোচ হিল্টন ডিওন অ্যাকারমান, সহকারী কোচ অধিনায়ক নওরোজ মঙ্গলের বেতন ২৫ শতাংশ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া আগামী জুনে আফগানিস্তানের জিম্বাবুয়ে সফর বাতিল হলে সে মাসের বেতন থেকে ৫০ শতাংশ কাটা হতে পারে বলেও জানিয়েছে এসিবি।