×

মুক্তচিন্তা

লকডাউন টোব্যাকো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২০, ০৯:৪৫ পিএম

ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত অসুস্থতা বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে মৃত্যুর ৫টি শীর্ষস্থানীয় কারণের মধ্যে ২টিই ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতা। তামাক ব্যবহার এবং পরোক্ষ ধূমপান ফুসফুসের যেসব রোগ হচ্ছে তার মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে ফুসফুসে ক্যান্সার, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিস (সিওপিডি), যক্ষা এবং অ্যাজমা বা হাঁপানি অন্যতম। প্রতি বছর তামাক ব্যবহারের ফলে বিশ্বে ৮০ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এছাড়া পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে আরো প্রায় ১০ লাখ মানুষ, যার বড় একটি অংশ শিশু। বাংলাদেশে অকাল মৃত্যু ঘটানোর ক্ষেত্রে তামাকের অবস্থান পঞ্চম। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রতি বছর তামাকের কারণে মারা যাবে ১ কোটি মানুষ। এই মৃত্যুর তিন-চতুর্থাংশের বেশি সংঘটিত হবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। অর্থাৎ ৭০ লাখই অকাল মৃত্যুই হবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে। এই মৃত্যুর বড় অংশই হবে ফুসফুস ক্যান্সার, সিওপিডি এবং যক্ষার মতো ব্যাধির দ্বারা। বাংলাদেশে তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভয়াবহ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার (বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, ২০১৮) মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। যা ওই সময়ে দেশে সব মৃত্যুর ১৩.৫ শতাংশ। তামাকজনিত রোগের ফলে মৃতের সংখ্যা ২০০৪ সালে ৫৭ হাজার জনের তুলনায় ২০১৮ সালের দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। এখন আসা যাক করোনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় যা বলা হয়েছে, সিগারেট, বিড়ি, ই-সিগারেট, সিসা, ভেপিং মানুষের দেহে ফুসফুস, হার্ট এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। তাই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। সেটা একজন অধূমপায়ীর তুলনায় ১৪ গুণ বেশি। এছাড়াও এসব পণ্য হাতের মাধ্যমে মুখে ভাইরাস প্রবেশের মাধ্যমে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের সময় বারবার থুথু ফেলার মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। এখন আসা যাক বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ২২ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ১০ ভাগের বয়স ষাট বছরের বেশি। ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ১৫ ভাগ, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ১৮ ভাগ, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ২২ ভাগ, ২১-৩০ বছরের মধ্যে ২৪ ভাগ, ১১-২০ বছরের মধ্যে ৮ ভাগ এবং ১০ বা ১০ বছরের নিচে বয়সীদের মধ্যে ৩ ভাগ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্তের মধ্যে পুরুষ ৬৮ শতাংশ এবং নারী ৩২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তদের বয়স সীমা ২১ থেকে ৩০ বছর। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে ত্রিশ ও তদূর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসযন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, যক্ষা, ফুসফুসে ক্যান্সার, স্বরযন্ত্রের ক্যান্সার ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারে তামাকজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে তামাকজনিত এই রোগগুলোর একটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তামাক অব্যবহারকারীদের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি এবং দেশে ত্রিশ ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে বর্তমানে ৭০ লাখের অধিক লোক তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১৫ লাখ লোকের (২২ শতাংশ) রোগাক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে তামাক ব্যবহারের প্রত্যক্ষ সংশ্লেষ রয়েছে। তাছাড়া ১৫ বছরের কম বয়সী ৪ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি শিশু তামাকজনিত নানান রোগে ভুগছে, যাদের মধ্যে আবার ৬১ হাজারের অধিক (১৪ শতাংশ) শিশু বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। সুতরাং এই জনগোষ্ঠী নিশ্চয়ই করোনাতে আক্রান্ত হলে ভালো থাকার কথা না কারণ তাদের ফুসফুস আগে থেকেই অসুস্থ। আগেই বলেছি গোটা বিশ্বে মৃত্যুর ৫টি শীর্ষস্থানীয় কারণের মধ্যে ২টিই ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতা। সুতরাং বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এখনই সময় তামাকের ব্যবহার পরিহার করা। বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ২৯ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ ছিলো। আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাক শিল্প-কারখানা বন্ধ ছিলো। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের এর চিঠির মাধ্যমে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ও জাপান টোব্যাকো তাদের তামাক পাতা সংগ্রহ, উৎপাদন, বিপণন চালিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের দিয়ে বিড়ি কোম্পানিগুলো তাদের বিড়ি বানানো কাজ চালিয়ে গেছে। এখনো তা নিয়মিত করাচ্ছে। লকডাউন কিছুটা শিথিল করা করেছে সরকার। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঘরবাড়িতে অবস্থান করছে। কিছু সংশয় নিয়ে সামনের দিনগুলো চিন্তা করতে হচ্ছে তা হলো যেহেতু কিছু মানুষ বাড়িতে অবস্থানকালে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। আমরা নিজেরাও করোনাতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে নিজেরা তো থাকছি সঙ্গে সঙ্গে পরিবারে নতুন কোনো সমস্যার জন্ম দিচ্ছি। বিশ্বে অনেক দেশে দেখা যায় করোনায় ধূমপায়ীদের মারা যাওয়ার হার বেশি। আমরা কি বুঝি না এই মৃত্যু বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কি পরিমাণ স্বাস্থ্যক্ষতি আগে থেকেই করছে এবং এই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়ে কতটা ক্ষতি নিয়ে আসছে আমাদের জাতির জন্য। তাই সরকারের উচিত এই আত্মঘাতী নেশা দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। মো. মোখলেছুর রহমান : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App