×

জাতীয়

পরিবহন ব্যবসায়ীদের মাথায় ব্যাংক ঋণের বোঝা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২০, ১০:০২ এএম

সবচেয়ে দুঃসময় পার করছে ৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিক প্রণোদনা না থাকায় হতাশ মালিকরা

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণায় পরিবহন সেক্টরে সবচেয়ে বড় আঘাত পড়েছে। সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গাড়ি কেনার জন্য নেয়া ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ করা নিয়ে পরিবহন মালিকদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। সাধারণ ছুটির মেয়াদ যত বাড়ছে মালিকদের দুশ্চিন্তাও ততই বাড়ছে। গত দেড় মাস ধরে এক টাকা আয় রোজগার হয়নি। কিন্তু ব্যাংক ঋণের সুদ যথারীতি গুনতে হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন সেক্টরে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পরিবহন সেক্টরের জন্য প্রণোদনা না থাকায় মালিকদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ছোট ও বড় বিভিন্ন গণপরিবহন কোম্পানির মালিকরা জানান, পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ সড়ক যোগাযোগ সচল রাখে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গার্মেন্ট সেক্টরের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার করোনা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও পরিবহন সেক্টরের জন্য কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা কনেনি। এটা খুবই দুঃখজনক। একটানা দেড় মাস গাড়ি বন্ধ থাকায় মালিকদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। গাড়ি কেনার জন্য ব্যাংক ঋণের টাকা পরিশোধ করাই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে পরিবহন সেক্টরের প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক সবচেয়ে দুঃসময়ের মধ্যে পড়েছে।

গত দেড় মাসের নিষেধাজ্ঞায় বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানিগুলোর শত শত নতুন ও পুরাতন বাস টার্মিনাল এবং নিজস্ব গ্যারেজে বসে আছে। বড় পরিবহন কোম্পানিগুলোর মধ্যে শ্যামলী পরিবহনের ১ হাজার ২০০, হানিফ পরিবহনের কমপক্ষে ১ হাজার, সোহাগ পরিবহনের দেড় শতাধিক, এনা পরিবহনের ২ শতাধিক, গ্রীনলাইন পরিবহনের শতাধিক দূরপাল্লার বাস রয়েছে। এছাড়া আরো কমপক্ষে দেড় শতাধিক গণপরিবহন কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া কয়েক লাখ পণ্যবাহী ট্রাক, কার্গো ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। প্রতিটি পরিবহন কোম্পানি বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনে রাস্তায় নামিয়েছে। এই ঋণের বিপক্ষে প্রতিমাসে তাদের মোটা অংশের সুদ গুণতে হচ্ছে। গাড়ি না চলায় ব্যাকের কিস্তির টাকা দেয়া মালিকদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। দেড় মাস বসে থাকায় সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালের প্রায় সব গাড়ির যন্ত্রাংশে মরিচা ধরেছে। ১০ মে পর্যন্ত পরিবহন সেক্টরে ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। লকডাউন যত দীর্ঘায়িত হবে ক্ষতির হিসাবও ততই দীর্ঘ হবে।

এদিকে বিভিন্ন সেক্টরে সরকারের প্রণোদনা থাকলেও পরিবহন সেক্টরের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় হতাশ হয়েছেন মালিকরা। একমাসে ১ টাকা আয়-রোজগার না থাকলেও পরিবহন মালিকদের ব্যাংকের ঋণ শতভাগই গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে এই কঠিন বিপর্যয়ের মধ্যেও মালিকরা আর্থিক সহযোগিতা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজি আবুল কালাম বলেন, গত ২৬ মার্চ থেকে বাস মালিকের এক টাকাও আয় রোজগার নেই। তারপরও একটি বাস বা মিনিবাসের জন্য প্রতিমাসে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যাংকের ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে। দূরপাল্লার দামি বাসের জন্য আরো বেশি পরিমাণ টাকার কিস্তি গুনতে হচ্ছে। ২০ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান জরুরি পণ্য নিয়ে চলাচল করলেও ৮০ ভাগ পুরোপুরি গ্যারেজে বসে আছে। এই খাতে সরকারের প্রণোদনা ঘোষণা করা উচিত। মালিকদের পাশাপাশি প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক চরম বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। মালিকরা অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। এই অবস্থায় সরকারি প্রণোদনা দেয়া উচিত।

পরিবহন সেক্টরে প্রণোদনা না থাকায় শ্রমিকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, গত ২৬ মার্চ গণপরিবহন বন্ধ হওয়ায় মালিক ও শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্র। অতীতের বিভিন্ন সময়ে আমরা লাগাতার হরতাল-অবরোধের মধ্যেও যানবাহন চলাচল সচল রেখে সরকারকে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু এই দুঃসময়ে পরিবহন সেক্টরে সরকারি প্রণোদনা নেই।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, পরিবহন সেক্টরে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। ৪৫ থেকে ৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিক এখন বেকার। ব্যাংক ঋণে বাস কিনে রাস্তায় নামানো হয়। গাড়ি না চললেও সেই ঋণের সুদের টাকা ঠিকই গুনতে হচ্ছে। এই দেড় মাসে একটি পয়সাও আয় হয়নি। লকডাউন যত দীর্ঘায়িত হবে মালিক পক্ষের ক্ষতির পরিমাণ ততই বাড়বে। সরকারের প্রণোদনার ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো নির্দশনা পাইনি। আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি।

সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল হোসেন তালুকদার বলেন, করোনার বিপর্যয়ে পরিবহন সেক্টরের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক কথায় অঙ্কের হিসাবে নিরূপণ করা সম্ভব না। তারপরও আমাদের আর্থিক ক্ষতির হিসাব করতে হয়। সোহাগ পরিবহনের দেড় শতাধিক দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু খরচ বন্ধ হয়নি। মাসিক বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের জন্য সুখবর নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বড় পরিবহন কোম্পানি নয়, যেসব পরিবহন মালিকের ১টি বা ২টি গাড়ি আছে তাদের অবস্থা আরো বেশি খারাপ। স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতে নেমে গত দেড় মাসের বিপর্যয়ে এখন তাদের পথে বসার উপক্রম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App