দেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম করোনার থাবা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২০, ০৫:১১ পিএম
আশরাফুলের সঙ্গে আশিকুর রহমান।
করোনায় সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় যুব (অনূর্ধ-১৯) ক্রিকেট দলের সাবেক পেসার ও নারী ক্রিকেট দলের সাবেক সহকারী কোচ আশিকুর রহমান মজুমদার। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে করোনা সংক্রমণের ঘটনা এটাই প্রথম। মঙ্গলবার (১২ মে) রাতে আশিক নিজেই এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বর ও কাশিতে ভুগছিলাম। মঙ্গলবার পরীক্ষা করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আমাদের বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী'র পরামর্শে মুগদা হাসপাতারে ভর্তি হই।’
করোনায় আক্রান্ত হলেও মনোবল এতটুকু হারাননি আশিক, 'এটা এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। মেনে নেওয়াই ভাল।’ মুগদা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তির পরও সন্ধ্যায় মুঠোফোনে নিকটজনের সঙ্গে কথা বলেছেন আশিক। তবে রাত ৯টার পর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেন দেয়া হয়েছিল তাকে। সবশেষ খবর, গতকালকের চেয়ে আজ কিছুটা ভাল আছেন ক্রিকেট কোচ আশিক।
আজ সকালে আর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়নি আশিকুরের। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়নি তেমন, কথাও বলছেন মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে। সকাল ১১টার কিছু পরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মুঠোফোনে জানিয়েছেন, ‘আছি ভাল। তবে কাশিটা একটু বাড়ছে। আজ অক্সিজেন লাগেনি। অক্সিজেন লেভেল ৯৭ আছে।’
আশিক আরো জানান, ‘এখন শরীরে জ্বরও নেই। জ্বর আসলে পরশুদিন থেকেই নেই। তবে কাশির মাত্রা বাড়ায় চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়েটিক দিয়েছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, কাশি কমলে আবার করোনা টেস্ট করানো হবে। তবে কয়েক দিন থাকতে হবে হাসপাতালে।’
আশিকের করোনা পজিটিভ হওয়ার খবরে সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, ‘আশিক ভাই এলাকায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশেই ছিলেন। তাদের সহযোগিতাও করেছেন। ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার সময় এলাকার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজও তদারক করেছেন। এসব জনহিতকর কাজ করতে গিয়েই হয়তো তার শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে।
ওদিকে করোনা আক্রান্ত সাবেক ক্রিকেটার আশিকুর রহমান মজুমদারের পাশে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। এরই মধ্যে কোয়াবের পক্ষ থেকে আশিকের দেখাশোনার জন্য লোক পাঠনো হয়েছে। তিনি যে হাসপাতালে ভর্তি (মুগদা হাসপাতাল) সেখানে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিসও পাঠিয়েছে ক্রিকেটারদের সংগঠনটি।
এ বিষয়ে কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বলেন, ‘আমরা আশিক ও তার পরিবারের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। এরই মধ্যে আমাদের সভাপতি নাঈমুর রহমান দূর্জয়, সহ-সভাপতি খালেদ মাহমুদ সুজন হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা যেন সর্বোচ্চ খেয়াল রাখে সেই অনুরোধ করা হয়েছে।
আশিককে সাহস দেয়া হয়েছে যেন তিনি ভেঙে না পড়েন। এতটুকু বলতে পারি অশিকের মনোবল ভেঙে পড়েনি। সে করোনার সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত। চিকিৎসকরা জানিয়েছে ওকে একটি ইনজেকশনও দেয়া হয়েছে নাভির নিচে। আশা করি, আশিক দ্রুতই সুস্থ হবে।’
করোনা আক্রান্ত সাবেক ক্রিকেট ও কোচ আশিকের দেখভাল করতে দু’জনকে পাঠানো হয়েছে কোয়াবের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে দেবব্রত পাল বলেন, ‘আমরা জানি, করোনা আক্রান্ত রোগীর পাশে কেউ যেতে চায় না। তাই দু’জনকে আমরা মুগদা হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ওর সব খবর আমরা পাবো। হাসপাতালে অনেক কিছুর অভাব ছিল। সেগুলো দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মশারি, পানি খাওয়ার জন্য জগ, গ্লাসসহ প্রয়োজনীয় আরো অনেক কিছু। বিশেষ করে অক্সিজেন সরবরাহে যেন কোনো সমস্যা না হয়, আমরা সেটারও ব্যবস্থা করেছি। এটাই বলতে চাই, তার জন্য কোয়াব সবকিছু করবে।’
জাতীয় যুব (অনূর্ধ-১৯) দলের হয়ে ২০০২ সালের যুব বিশ্বকাপ খেলা আশিক ছিলেন সম্ভাবনাময় পেসার। ঢাকা মোহামেডানের হয়ে চলতি শতাব্দীর প্রথম দিকে কয়েকবছর বেশ সুনামের সঙ্গে খেলেছেন। পরে পিঠের ব্যথার কারণে খেলা ছেড়ে কোচিংয়ে নাম লেখান।
শুধু নারী দলের সহকারী কোচই নয়, আশিক বিসিবি গেম ডেভলপমেন্ট এর কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন। এছাড়া প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ওল্ড ডিওএইচএসসহ প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ ছিলেন তিনি।