×

মুক্তচিন্তা

ইতিকাফ : আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহের সুযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২০, ০৯:৪২ পিএম

ইতিকাফ : আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহের সুযোগ
রহমত এবং মাগফিরাত রোজার দুটি দশক আমরা পার করছি। আজ মাগফিরাতের দশক শেষ হচ্ছে। আগামীকাল থেকে শুরু হবে নাজাত তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক। এই শেষ দশ দিনে মুমিন রোজাদাররা ইতিকাফ নামে বিশেষ ইবাদতে মশগুল হয়ে পড়েন। আল্লাহপাকের অফুরন্ত দয়া, ক্ষমা, অনুগ্রহ ও বিশেষ অনুকম্পা লাভের মোক্ষম সুযোগ হচ্ছে ইতিকাফ। এই দশ দিনেই আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, অনুকম্পা, ক্ষমা ও করুণার আশায় মসজিদে মসজিদে পালন করা হয় ইতিকাফ। ইতিকাফের সময় ঘনিয়ে এলো। আজ সূর্যাস্তের আগেই মুসল্লিরা মসজিদে ইতিকাফের জন্য প্রবেশ করে বিশেষ ইবাদত আরাধনায় মশগুল হবেন। যারা ইতিকাফ আদায় করবেন এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া ভালো। রোজাদার মুসল্লিরা ইতিকাফ আদায় করে বিশেষ ফজিলত ও পুণ্য অর্জনে সচেষ্ট থাকেন। মাহে রমজানের প্রতিটি দিনক্ষণ ও মুহূর্ত খুবই দামি ও মূল্যবান। ইবাদত তপস্যা ও আরাধনার মাধ্যমে রোজাদার আল্লাহর দরবারে নিজেকে নিবেদন করতে সক্ষম হলে তবে জীবন হবে ধন্য ও কামিয়াব। বছরে একটি মাস মহিমান্বিত মাহে রমজানে সিয়াম সাধনা, ইবাদত-আরাধনা, দান-সদকাহ ও জাকাত-ফিতরার মাধ্যমে রোজাদারকে আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্যের কাছাকাছি নিয়ে যায়। তেমনিভাবে মাহে রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ পালনের সুযোগ গ্রহণ করলে রোজাদারের মর্যাদা বাড়ে ও পুণ্যের থলি ভরে যায়। ইতিকাফের শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা, কোনো বস্তুর ওপর স্থায়ীভাবে থাকা। ইতিকাফের মাধ্যমে নিজের সত্তাকে আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে আটকিয়ে রাখা হয় এবং নিজেকে মসজিদ থেকে বের হওয়া ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। ইতিকাফ মাহে রমজানের একটি বিশেষ ইবাদত। শরীয়তের পরিভাষায় ইতিকাফের নিয়তে পুরুষের মসজিদে অবস্থান করা অথবা কোনো মহিলার নিজ ঘরে নামাজের স্থানে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়। ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব হতে মসজিদে মসজিদে মুসল্লিরা ইতিকাফের নিয়তে প্রবেশ করবে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় মসজিদে পূর্ণাঙ্গ অবস্থান করার মাধ্যমে মুসল্লিরা ইতিকাফের নিয়তে সর্বক্ষণ কুরআন তেলাওয়াত তসবিহ-তাহলিল, জিকিরে ব্যস্ত সময় কাটায়। যিনি ইতিকাফ করেন তাকে মুতাকিফ বলা চলে। ইতিকাফ যে কোনো সময় করা যায়। যখনই কেউ ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবস্থান করেন তখনই তা ইতিকাফ বলে গণ্য হবে। তবে ২০ রমজানের সূর্যাস্তের পূর্ব হতে শাওয়াল তথা ঈদের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করা সুন্নাত। ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো, দুনিয়ার সব রকম ঝামেলা থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে একমাত্র তাঁরই ইবাদতে নিবেদিত হয়ে পরিশুদ্ধি অর্জন। মাজহাবের ইমামদের সর্বসম্মত মত অনুযায়ী মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ পালন করা সুন্নাত। আমাদের হানাফী মাজহাব মতে রমজান শেষ দশ দিনের ইতিকাফ হচ্ছে সুন্নাতে মুআক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ মসজিদের মুসল্লিদের পক্ষ থেকে বা মহল্লার মধ্য থেকে কোনো এক ব্যক্তি ইতিকাফ করলে তা সব মুসল্লি বা মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। ইতিকাফ অতীব ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। নবী-রাসুল ও আল্লাহর খাস বান্দা আউলিয়ায়ে কেরাম ইতিকাফ পালনে আজীবন সচেষ্ট ছিলেন। এর মাধ্যমে তাদের মর্যাদা, সম্মান ও আল্লাহর কাছে অতীব প্রিয়তর হওয়ার সুযোগ তারা হাতছাড়া করেন না। এ প্রসঙ্গে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, নবী করীম (দ.) সব সময় মাহে রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। ওফাত পর্যন্ত এ নিয়ম তিনি পালন করেছেন। তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফের সিলসিলা জারি রাখেন। (বুখারী ও মুসলিম)। মুসলিম নারীরা নির্জন ঘরে বসে সম্পূর্ণ নীরবতা মেনে চলে ইতিকাফ পালন করতে পারেন। অন্তত জীবনে একবার ইতিকাফ পালন করতে পারা অতীব পুণ্য ও সৌভাগ্যের ব্যাপার। একটি হাদিসে প্রিয় নবী (দ.) ইরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানে দশ দিন ইতিকাফ করল সে যেন দুটি হজ ও দুটি ওমরাহ পালন করল। মাহে রমজানের যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগি-আরাধনার ভুল বিচ্যুতি নিজগুণে ক্ষমা করে আমাদের জীবন ধন্য ও পুণ্যময় কর হে প্রভু! নিবিষ্টভাবে ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহপাক আমাদের করুণাসিক্ত হওয়ার তৌফিক দিন। লেখক : সাংবাদিক; ইসলামী চিন্তাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App