×

মুক্তচিন্তা

ইমাম খতিব হাফেজ ও মুয়াজ্জিনদের উপযুক্ত সম্মানী দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২০, ০৮:৫৭ পিএম

আল্লাহপাকের ঐশীগ্রন্থ কুরআন মজিদ দুনিয়ার কারো লিখিত গ্রন্থ বা ধর্মীয় পুস্তক নয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যখন ধীরে ধীরে মহানবীর (দ.) ওপর কুরআন মজিদ অবতীর্ণ হচ্ছিল তখন থেকেই বোদ্ধা মহলে বেশ সাড়া ফেলে। যারা অবিশ্বাসী তারা কুরআন মজিদ যে ঐশীগ্রন্থ তা স্বীকার করতে চাইল না। তাই মহান স্রষ্টা আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে কুরআনের বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়। কিন্তু কেউ এই চ্যালেঞ্জ নিতে পারেনি। কুরআন মজিদের আয়াত বা সুরার মতো একটি আয়াত বা বাক্যও তারা দাঁড় করাতে পারেনি। আরবের বাঘা বাঘা চিন্তক, সাহিত্যিক ও কবিরা শেষ পর্যন্ত কুরআন মজিদ যে খোদায়ী রচিত গ্রন্থ তা মেনে নেন। নির্দ্বিধায় কুরআনের সত্যতা স্বীকার করেন। ত্রিশ পারা কুরআন মজিদ আপন সিনা মোবারকে আগলে রাখেন হাফেজে কুরআন। দুনিয়ার আরেকটি ত্রিশ পারা বই বা গ্রন্থ পাওয়া যাবে না, যা কেউ মুখস্থ রাখতে পেরেছে। কুরআন মজিদের ৬ হাজার ৬৬৬টি আয়াত একজন হাফেজ মুখস্থ করতে সক্ষম হন তা বিশাল একটি কৃতিত্বের ব্যাপার। এটাই কুরআন মজিদের অলৌকিকতা, বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মুজেজা। কিয়ামত পর্যন্ত হাফেজে কুরআনরাই কুরআন মজিদ সংরক্ষিত করে রাখবেন। আল্লাহপাক নিজেই কুরআন মজিদে ঘোষণা দিচ্ছেন ‘ইন্না নাহনু নাজ্জালনাজ জিকরা ওয়া ইন্না লাহু লাহাফিজুন’ অর্থাৎ আমিই কুরআন মজিদ অবতীর্ণ করেছি, আমিই কিয়ামত অবধি তা সংরক্ষণ করব। অতএব কুরআন মজিদ বিকৃতি ও বিস্মৃতির কবল থেকে অনাদিকাল পর্যন্ত রক্ষা পাবে এর খোদায়ী সত্যায়ন পাওয়া যায়। এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ানোর সুযোগ পায়নি হাজার হাজার হাফেজে কুরআন। তারা এমনিতে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও দৈন্যের শিকার। মসজিদ মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানা এগুলোই হচ্ছে হাফেজদের কর্মপরিধি। খুব কম সীমিত বেতনভাতা হওয়ার কারণে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ বেকায়দায় আছেন। ৮/১০/১২ হাজার টাকা বেতনে একজন হাফেজে কুরআন চাকরি করেন হেফজখানা, মসজিদ এতিমখানা কিংবা মাদ্রাসায়। এত কম বেতনে তারা কীভাবে সংসারের ধকল সামলাচ্ছেন তা বলেও বোঝানো যাবে না। কী অবর্ণনীয় কষ্টকর জীবন হাফেজের কুরআনদের! করোনার কারণে এবার দেশের প্রায় মসজিদে খতমে তারাবি অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। মসজিদগুলোতে সুরা তারাবি নামাজ পড়ছেন অনেকেই। তবে নগণ্য মসজিদে মাত্র কয়েকজন মুসল্লি নিয়ে কিছু হাফেজ তারাবি নামাজ পড়াচ্ছেন। রোজার শেষ দিকে এসে তারা এককালীন যে সম্মানী বা বিনিময় পান, অনেকেই এবার তা থেকে বঞ্চিত হবেন। কেননা মসজিদে তারাবি নামাজ হয়নি, হলেও ১০/১২ জন মুসল্লি নামাজ পড়ে আসছেন। শত শত মুসল্লি যারা মসজিদে গিয়ে খতমে তারাবির নামাজ পড়ার সুযোগ পাননি, তারা কি নিজ গরজে কিংবা নিজ কর্তব্য মনে করে হাফেজে কুরআন এবং ইমাম মুয়াজ্জিনদের জন্য যথাযথ সম্মানী দেবেন? তারা কী দায় এড়াতে চাইবেন এই বলে যে, আমরা মসজিদে গিয়ে খতমে তারাবি পড়িনি, তাহলে সম্মানী দেব কেন? আমরা কী তাতে বাধ্য? আসলে কিছু মুসল্লির হিসেবি মানসিকতাই হাফেজ, ইমাম বা মুয়াজ্জিনদের আর্থিক বঞ্চনার কারণ হতে পারে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কেউ এর অভিঘাত বা ক্ষতি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। করোনার ওপর কোনো মানুষের হাত নেই। এটি একটি মহামারি বা দুর্যোগ। তাই করোনার কারণে মসজিদে খতমে তারাবি অনুষ্ঠিত না হওয়ার পেছনে হাফেজে কুরআনদের যেন হাত নেই। এতে তাদের মোটেই দায়ী করা চলে না। তাহলে তারা কেন এর ধকল সইবেন? মসজিদ এলাকার মহল্লাবাসী বা মসজিদ কমিটি চাইলে হাফেজে কুরআন, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম ও খতিবরা একটু স্বচ্ছন্দে রোজা-ঈদ পার করে দিতে পারেন। খুব বেশি না হোক, মোটামুটি জীবনধারণ উপযোগী সম্মানী তারা পেতে পারেন। টেনেটুনে কোনোভাবে সংসার চালিয়ে নেয়া যায়, কোনোমতে ঈদ পার করা যায় এমন বেতনভাতা সম্মানী দেয়া হলে তাদের মুখে হাসি ফুটতে পারে। তাদের জন্য যথাযথ সম্মানী বা ভাতা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব মসজিদ কমিটি বা মহল্লাবাসীর। এই রোজার দিনে উনারা বেতনভাতা সম্মানী না পেয়ে যদি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন, তবে এতে আল্লাহপাক খুবই অসন্তুষ্ট হবেন। এটি হবে চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা। নামাজে তারাবির জন্য টাকা তুলে তা মসজিদ ফান্ডে রেখে দেয়া যাবে না। তারাবির জন্য তোলা টাকা সংশ্লিষ্ট হাফেজ ইমাম মুয়াজ্জিন খতিব ও খাদেমদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে। লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App