×

জাতীয়

হাসপাতালে থাকার মেয়াদ ৪ দিন কমায় রেমডেসিভির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২০, ০৯:৫২ এএম

হাসপাতালে থাকার মেয়াদ ৪ দিন কমায় রেমডেসিভির

রেমডেসিভির

আক্রান্তের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের জন্য দরকার এই ওষুধ

করোনা ভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে এবং মানুষ বাঁচাতে এর প্রতিষেধক আবিষ্কারে মরিয়া হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ব। এরইমধ্যে প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলেছে- এমন দাবি উঠেছে উন্নত দেশগুলো থেকে। চীন, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো তাদের দেশের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের তৈরি প্রতিষেধক বানরসহ বিভিন্ন প্রাণীর দেহে ক্লিনিক্যালি পরীক্ষাও করেছে। কোনো কোনো দেশ সীমিত পরিসরে মানুষের দেহে তা প্রয়োগ করে সফলতা পেয়েছে বলে দাবি করছে। কিন্তু সত্য হলো- এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর কোনো প্রতিষেধক কোনো দেশই আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। তবে ‘রেমডেসিভির’ ওষুধটি নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠছেন অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানী।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের আটটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে এ ওষুধ তৈরির অনুমোদন দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে বেক্সিমকো ও এসকেএফ তাদের উৎপাদিক নমুনা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দিয়েছে। তবে দেশে এই ওষুধকে শতভাগ কার্যকর বলে যে খবর প্রচার হচ্ছে, তা আমাদের স্বাস্থ্য ও গবেষণা খাতের দৈন্যতা প্রমাণ করে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যারা রেমডেসিভিরকে কার্যকর ওষুধ বলছেন তারা পুরো সত্য না জেনেই এমনটা বলছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। তাদের বোঝা উচিত এটি কোনো সামান্য বিষয় নয়। এমন পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে কথা বলার আগে পুরোটা জেনে মন্তব্য করা উচিত। ভুল ও বেফাঁস মন্তব্য দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোপুরি কার্যকারিতা তো দূরের কথা, রেমডেসিভির কার্যকারিতা যাচাইয়ে খুব সীমিত পরিসরেই এর প্রয়োগ করা হয়েছে। এই ওষুধ যাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের হাসপাতালে থাকার মেয়াদ চারদিন কমানো ছাড়া এর আর তেমন কোনো কার্যকারিতার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। এছাড়া কার্যকারিতার ফলাফলও সাংর্ঘষিক। এক দেশ বলছে, তারা এর প্রয়োগে সফলতা পেয়েছে; আবার অন্য দেশ বলছে, কার্যকর নয়। তবে যেসব দেশ বলছে তারা রেমডেসিভির প্রয়োগে সফলতা পেয়েছে- তারা এই সফলতার হার কত তা কিন্তু বলছে না। এছাড়া এটি প্রয়োগের পরও কতজন মারা গেছেন তাও বলছে না। তাই সব দিক বিবেচনা করে করে এই ওষুধকে পুরোপুরি কার্যকর বলে বিভ্রান্তি তৈরি করা সঠিক নয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে।

প্রশংসা পেতে খুবই পছন্দ করে- এমন কিছু ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সত্যতা যাচাই ছাড়াই এরকম একটা সংকটময় মুহূর্তে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে কৃতিত্ব নিতে চায় বলে মন্তব্য করেন ফার্মাসিস্ট ও গবেষক ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ। ভোরের কাগজকে গতকাল তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোই যখন রেমডেসিভিরকে শতভাগ কার্যকরি বলছে না সেখানে আমাদের দেশে একটি শ্রেণি তা বলছে। গণমাধ্যমে এসব খবর ফলাও করে প্রচারও হচ্ছে। মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বে করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই আমরা বিভিন্ন ওষুধের নাম শুনছি। কিন্তু শতভাগ কার্যকারিতা এখনো পর্যন্ত কোনো ওষুধে পাওয়া যায়নি। তাই যেসব ওষুধের কার্যকারিতা যাচাই হচ্ছে- তা একেরপর এক বাদের তালিকায় চলে যাচ্ছে।

ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ২০১৪ সালে রেমডেসিভির আবিষ্কার করা হয়। কিন্তু এই ওষুধ ইবোলার প্রতিষেধক হিসেবে কার্যকর হয়নি। রেমডেসিভিরকে বলা হলো এই ওষুধের ব্যবহারে আমেরিকা আশাবাদী এবং এর প্রয়োগ সম্ভবত কার্যকর হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এই শব্দ দুটি বদলে হয়ে গেল কার্যকরী ওষুধ। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ বলা হচ্ছে, যাদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে এবং যাদের ওপর তা প্রয়োগ করা হয়নি- এই দুদলের মধ্যে যাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে তারা ১১ দিনে সুস্থ হয়েছেন। আর যাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়নি তারা সুস্থ হয়েছেন ১৫ দিনে। এই পার্থক্যটি ছাড়া আর কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। বড় পরিসরে পরীক্ষা না করে কোনো ওষুধকে কার্যকরি বলা যাবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বিজ্ঞান সম্মত গবেষণার ভিত্তিতে একটি ওষুধকে একটি রোগে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় সে ধরনের কোনো শক্তিশালী গবেষণার ফলাফল জানা যায়নি। এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ গবেষণা হয়েছে স্বল্প পরিসরে। আবার এসব ফলাফল সাংঘর্ষিকও। বিশ্বের ৫০টি দেশে বড় পরিসরে গবেষণার কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যাকে বলা হচ্ছে সলিডারিটি। এর ফলাফল পেতে আরো দুই তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬০টিরও বেশি ওষুধ নিয়ে বেশ কিছু দেশে গবেষণা হচ্ছে। তবে এর কোনোটিই নতুন ওষুধ নয়। এখনো পর্যন্ত করোনার জন্য গবেষণা করা হয়নি। আবিষ্কৃত পুরাতন ওষুধ দিয়েই এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় গবেষণা হচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যতক্ষণ একটি ওষুধকে কার্যকরি না বলছে; ততদিন পর্যন্ত আমাদের এবং বিশ্ববাসীকে অপেক্ষা করতে হবে। ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বেশি আশাবাদী করলে এর ফল উল্টোই হবে। ওষুধের বাজার এমনিতেই সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাছাড়া ওষুধটি যদি বাজারে আসে তাহলে এর ভুল প্রয়োগও হবে। তারা বলছেন, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে শর্ত মেনে এই ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন হবে। আক্রান্ত ৯৫ শতাংশ মানুষকে কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব সেই বিষয়টিও আমাদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App