×

মুক্তচিন্তা

ফিতরা না দিলে রোজার হক আদায় হবে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২০, ০৯:২৮ পিএম

মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশক শেষ হতে আর মাত্র দুদিন। মাগফিরাত দশকের শেষে আসছে নাজাত তথা জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতির সুসংবাদ। মাহে রমজান পেয়েও যারা নিজেদের গুনাহ পাপ বিচ্যুতি থেকে রেহাই পায়নি তারা নিঃসন্দেহে বড় দুর্ভাগা। এই যে আর কয়দিন সুযোগ আছে তাকে কাজে লাগাতে হবে। কুরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, গরিব দুঃখীদের মাঝে দান-সদকাহর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিবিষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মাহে রমজানের একটি করণীয়ও যেন ছুটে না যায় রোজাদারকে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। মাহে রমজানের মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ও ইবাদত বন্দেগিতে মানুষের অংশগ্রহণের নানা নিয়ম পদ্ধতি নির্ধারিত। অজ্ঞতা বা ভুলবশত রোজার নিয়ম-পদ্ধতির ব্যতিক্রম চর্চা যে কারো দ্বারা সংঘটিত হতেই পারে। ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় মানুষ ইসলাম চর্চা ও রোজা নামাজ আদায়ে যতই ভুল-বিচ্যুতি করুকÑ তার চ‚ড়ান্ত প্রতিকার কিন্তু শুধু শাস্তিই নির্ধারিত নয়। ভুল-বিচ্যুতির মার্জনা লাভের নানা উপায় সুনির্দিষ্টভাবে শিখিয়ে দিয়েছেন উম্মতের করুণাধারা মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (দ.)। উম্মত কীভাবে পরিত্রাণ চাইবে তা প্রিয় নবীজীকে (দ.) কুরআনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহপাক। জীবন চলার পথে কৃত অপরাধ ও ভুল-বিচ্যুতির দায় এড়াতে পবিত্র কুরআনে অনুশোচনার ধরন ব্যক্ত হয়েছে এভাবে : রাব্বানা জালামনা আন ফুসানা ওয়া ইন লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসেরিনÑ ‘হে প্রভু আমি নিজ আত্মার ওপর অবিচার করেছি, তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তই থেকে যাব’ আল্লাহর কাছে এভাবে প্রার্থনা জানালে প্রত্যুত্তর আসেÑ ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম- ‘বান্দারা নিশ্চয়ই জেনে রাখো তোমার প্রভু আল্লাহ তো অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ কুরআন মাজিদের অন্য একটি আয়াতে মানুষের যাবতীয় অপরাধের নিষ্কৃতির অব্যর্থ দিকনির্দেশনা পেশ করে আল্লাহপাক বলেন, ওয়ালাও আন্নাহুম ইজ জালামু আনফুসাহুম জাউকা ফাসতাগফারুল্লাহা ওয়াস তাগফারা লাহুমুর রাসুলু লাওয়াজাদুল্লাহা তাওয়াবার রাহিমা- ‘তোমাদের কেউ যখন নিজের ওপর জুলুম করে বসবে তোমরা আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাইবে এবং প্রিয় রাসুলের (দ.) শরণাপন্ন হবে, তিনি যদি তোমাদের ক্ষমা করেন তবে অবশ্যই আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহের আশা রাখতে পার।’ মাহে রমজানে পুণ্যের সুযোগ ও হাতছানি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রোজা নামাজের হুকুম-পদ্ধতি যথার্থভাবে পালনে আমরা হয়তো ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের কথাবার্তা, ওঠা-বসা, চলাফেরা ও জীবনাচারে রোজার দিনগুলোতে বহু অনিয়ম ও ভুল-বিচ্যুতি যে সংঘটিত হয়েছে তা তো ধরেই নিতে পারি। কিন্তু যখনই ভুল পথে পা বাড়িয়েছি, ইবাদত রিয়াজতে অমনোযোগিতা ও উদাসীনতা আসায় পরক্ষণেই অনুতপ্ত হয়েছি, তখন আল্লাহর ঘোষিত ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রত্যাশায় উন্মুখ থাকি আমরা। আর আল্লাহর কাছে অনুশোচনাই বেশি পছন্দনীয়। প্রিয় নবী (দ.), আউলিয়া কেরামের উসিলায় যখন কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে কৃত পাপরাশির ক্ষমা চাওয়া হয় তখন আল্লাহপাক বলেন- ইন্নাল্লাহা তাওয়াবার রাহিমাÑ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহপাক মানুষের তাওবা গ্রহণে অতিশয় দয়ার্দ্র।’ মাহে রমজানের শেষ মুহূর্তে এসে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে কৃত অপরাধ ও ভুলের প্রতিকার চাইতে হবে। নতুবা ইবাদত ও সিয়াম সাধনার ভুল-ত্রুটির জন্য আল্লাহপাকের কাছে অপরাধীই হয়ে থাকতে হবে আমাদের। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (দ.) জাকাতুল ফিতরকে রোজাদারের বেহুদা কথা ও কাজ এবং পাপ থেকে পবিত্র করা এবং নিঃস্ব অসহায় মিসকিনদের খাবারের উদ্দেশ্যে ওয়াজিব করেছেন। যে ব্যক্তি তা ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করে সেটি আল্লাহর কাছে কবুল হয়। আর যে ব্যক্তি তা ঈদের নামাজের পর আদায় করে তা অন্যান্য দান সদকার মতো বিবেচিত হবে (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম)। এবার ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফিতরার সর্বনিম্ন হার নির্ধারণ করেছে জনপ্রতি ৭০ টাকা। আর সর্বোচ্চ ফিতরা হচ্ছে ২২০০ টাকা। যার যার সামর্থ্য ও ইচ্ছা অনুযায়ী ফিতরা প্রদান করে দায়মুক্ত হতে হবে। রোজার ত্রæটি বিচ্যুতির নিষ্কৃতি হচ্ছে সদকাতুল ফিতর। তাই এ ফিতরা না দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে সদকা-ফিতরা গরিবের হক। তাই গরিবরা যাতে হাসিখুশিতে রোজা ও ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে সেদিকেই দৃষ্টি রেখে জনপ্রতি ১০/২০ টাকা করে না দিয়ে একজনকে একটি ফিতরা কিংবা পুরো পরিবারের ফিতরা একজন গরিবকে দান করা উত্তম। লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App