×

জাতীয়

ঢাকা ফিরছে চেনা রূপে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২০, ০৯:৩৬ এএম

ঢাকা ফিরছে চেনা রূপে!

জনগণ

শপিংমল-দোকানপাট খুলে গেছে সড়কে যানজট, লোক চলাচল বেড়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই

এ যেন চিরচেনা সেই কর্মচঞ্চল মহানগরী ঢাকা। হরেক রকম যানবাহনে ঠাসা রাজধানীর প্রতিটি সড়ক, কোথাও কোথাও রীতিমতো যানজট। সব জায়গায় স্বাভাবিক সময়ের মতোই ভিড়। কাজে-অকাজে মানুষের ঘুরে বেড়ানো দেখে মনে হওয়ার উপায় নেই- দেশে চলছে অঘোষিত ‘লকডাউন’; কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার দিন দিন বাড়ছে। যদিও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এখনো চ‚ড়ায় ওঠেনি। সামনে অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর দিন। এই প্রেক্ষাপটেই রবিবার (১০ মে) থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকান ও শপিংমল খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। মূলত ঈদের ব্যবসা ধরতে করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিলেও গতকাল খোলার প্রথম দিনেই নির্দেশনার প্রতিফলন দেখা যায়নি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। সচেতনতার বালাই নেই ক্রেতা-বিক্রেতা কারো মধ্যেই।

এদিকে, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ওই মার্কেটের দোকানপাট আংশিক চালু করা হয়েছে। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোড ও পুরান ঢাকার বংশাল, নয়াবাজার, ওয়ারী, মিটফোর্ড ও বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারের কেরানীগঞ্জের মার্কেটগুলো চালু করা হয়েছে। সকাল ১০টার মধ্যেই দোকানপাট খুলে বসেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চলাচল বেড়ে যাওয়ায় নয়াবাজার, মিরপুর রোডসহ বিভিন্ন স্থানে যানজট সৃষ্টি হয়। বাস না চললেও ঢাকার রাস্তায় চলাচল করছে রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, লেগুনা, টেম্পো, পিকআপ ও ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ অন্য যানবাহন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে

গতকাল দেখা গেছে, বেশির ভাগ এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ। রাস্তার পাশের কিছু দোকান ও শোরুম খুলেছে। যেসব এলাকায় দোকান ও শপিংমল খুলেছে, সেখানে ক্রেতার উপস্থিতি কম। দীর্ঘদিন পর দোকান-শোরুম খোলায় গোছগাছে ব্যস্ত অনেকে। কোনো কোনো দোকান মালিক পোশাক সাজাচ্ছেন। অনেকে আবার ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন। তারা জানান, করোনা আতঙ্কে ক্রেতা কম আসায় বেচাকেনাও তেমন হয়নি। রাজধানীর গুলিস্তান-টিকাটুলি এলাকায় বিভিন্ন মাকের্ট ও শপিংমল বন্ধ রয়েছে। তবে রাস্তার পাশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম খুলেছে। পোশাক ব্র্যান্ড ষোলো আনার দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাদেশ আলি বলেন, প্রায় দেড় মাস পর শোরুম খুললাম। গোছগাছ করতেই দুপুর হয়ে গেছে। এখন বসে আছি, কোনো ক্রেতা নেই। দোকান বন্ধ করার সময় হয়ে যাচ্ছে; এখন পর্যন্ত কোনো বিক্রিই হয়নি। ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করেন ব্র্যান্ড শপ রেক্সের কর্মীরা। প্রতিষ্ঠানটির এক বিক্রয় কর্মী জানান, সকাল থেকে খুলে বসে আছি। ক্রেতা নেই বললেই চলে। দুয়েকজন লোক এলেও তারা দেখে চলে যাচ্ছেন। করোনার আতঙ্ক রয়েছেন সবাই। এছাড়া দীর্ঘদিন পর খুলেছে, তাই হয়তো ক্রেতা কম। তবে দুয়েক দিন গেলে ক্রেতা বাড়বে বলে আশা-প্রকাশ ওই বিক্রেতা। বেইলি রোডের একটি শোরুমে পোশাক দেখছিলেন হাফিজ নামের এক ক্রেতা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। বলেন, অফিসের প্রয়োজনে পুরান ঢাকায় গিয়েছিলাম। ফেরার পথে শোরুম খোলা দেখে, ভেতরে ফাঁকা দেখে ঢুকলাম। ছোট বাচ্চা আছে, তার জন্য পোশাক কিনব। রাজধানীর মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসকেন্দ্রিক সড়কগুলোয় স্বভাবিক কারণেই চলাচল বেশি হলেও অন্যান্য এলাকায়ও যানবাহন ও মানুষের চাপ কম নয়। বিশেষত নগরীর প্রবেশমুখগুলোতে দেদার ঢুকছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। পণ্যবাহী ট্রাক, ভ্যান, অটোরিকশা, মাইক্রোবাসে করে প্রতিনিয়ত আসছে মানুষ। অনেক স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান থাকলেও তাদের তৎপরতা শিথিল। কাউকেই তেমন বাধা দিতে দেখা যায়নি। যদিও মাঝে মাঝে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আবার নগরীর ভেতরে অনেক এলাকায় কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় জনসমাগম ছিল লক্ষণীয়। প্রধান সড়কে খানিকটা কম হলেও গলির ভেতরের সব ধরনের দোকানপাটই খোলা রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ং খোলা হয়েছে। এছাড়া ইস্টার্ন প্লাজা, গাজী শপিংকমপ্লেক্স, কম্পিউটার সিটি সেন্টার, মাল্টিপ্ল্যান আর্কেড ও এলিফ্যান্ট রোডের সব দোকান এবং দেশি পোশাকের ব্র্যান্ডসহ সড়কের দুই পাশের অধিকাংশ দোকান খুলে দেয়া হয়েছে। দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ডশপ সাদাকালো, কে-ক্রাফ্ট, অঞ্জন’স, নিপুণ, রঙ, অন্যমেলা, বাংলার মেলা, নবরূপা, নগরদোলা, দেশাল, নীলাঞ্জনাসহ দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো কোথাও খোলা থাকবে, আবার কোথাও বন্ধ থাকবে। যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ থাকবে, সেখানে আউটলেট বন্ধ থাকবে। এছাড়া ঈদ সামনে রেখে গুলশান ১ ও ২ নম্বর সেকশনের ডিনএসসি মার্কেট এবং গাজী শপিং কমপ্লেক্স, যাত্রাবাড়ী আয়েশা মোশারফ শপিং সেন্টার, বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট, রহমান প্লাজা, হাবিবুল্লাহ সুপার মার্কেট, ফার্নিচার মার্কেট ও টাইলস মার্কেটের বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্টিল ফার্নিচার মার্কেট সম্পূর্ণরূপে খোলা রাখা হবে। উত্তরা কাজী ভবন ও বেশ ভবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড খোলা থাকবে। আইডিবি ভবন, আগারগাঁও কম্পিউটার মার্কেট, ডিআইটি ফকিরাপুল মার্কেট খোলা থাকবে। মিরপুর রোডে লাটিমি শপিংমল, জাহান ম্যানশন, গোল্ডেন মার্কেট খোলা থাকবে। মিরপুর রোডের কাপড়ের দোকান, পাঞ্জাবির দোকান, জুতার দোকান এবং আল্পনা প্লাজা খোলা হয়েছে। মোহাম্মদপুর ও মিরপুর রোডের রাস্তার পাশের দোকানগুলোও খোলা থাকবে। নিউমার্কেট সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেট এবং ক্রোকারিজের মার্কেট খোলা থাকবে। গাউছিয়া সংলগ্ন গোল্ডেন প্লাজাও খোলা থাকবে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আইটি মার্কেট মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারও খোলা থাকবে। উত্তরা আলাউদ্দিন টাওয়ার ও রাস্তার পাশের কিছু দোকান খোলা থাকবে। টপ টেন ব্র্যান্ড বেশিরভাগ জায়গাতেই খোলা থাকবে। এলিফ্যান্ট রোডের ট্রপিক্যাল সেন্টার, সুবাস্তু আর্কেড খোলা হয়েছে। দেশের বৃহত্তম শপিংমল বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্ক বন্ধ থাকছে। এছাড়া আরো বন্ধ থাকবে বায়তুল মোকাররম মার্কেট, মৌচাক, আনারকলি, মোতালেব প্লাজা, মিরপুর ১ থেকে মিরপুর ১১ নম্বর পর্যন্ত সব মার্কেট, রমনা ভবন এলাকার সব মার্কেট, এনেক্সকো টাওয়ার, মহানগর কমপ্লেক্স, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, সুন্দরবন সুপার মার্কেট, জাকির প্লাজা, নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা, বঙ্গ ইসলামি সুপার মার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া ও বঙ্গবাজার। রাজধানীর মিরপুর রোডের জনপ্রিয় বিপণিবিতান গাউছিয়া ও চাঁদনী চক এখনো খোলেনি। তবে এসব মার্কেট সীমিত পরিসরে চালু হতে পারে। মার্কেটে ক্রেতা উপস্থিতি ও বেচাকেনার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। বেচাকেনা ভালো হলে এসব মার্কেট পুরোপুরি খোলা হতে পারে। উল্লেখ্য, গত ৪ মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকান ও শপিংমল ১০ মে থেকে খোলার কথা ঘোষণা করে সরকার। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, শপিংমল বা মার্কেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে। অবশ্য করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু শর্ত দেয়া হলেও তা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সকাল ১০টা থেকে দোকান খুলেন অনেক ব্যবসায়ী। প্রথমদিনেই সাড়া মেলে ক্রেতাদের, তবে শিথিলতার সুযোগে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা। এলিফ্যান্ট রোডের জুতার দোকানগুলো সকালেই খুলে দেয়া হয়। দাদা সু স্টোরের ম্যানেজার নিয়াজ মোর্শেদ জানান, সকালের দিকে ক্রেতার দেখা না মিললেও দুপুরের পর অনেকেই এসেছেন। তবে বেচাকেনা জমতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে তিনমাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়। এ কারণে নতুন ডিজাইনের জুতার কালেকশন আছে। ক্রেতারা পছন্দমতো জুতা কিনতে পারবেন। সদরঘাট ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউশন সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো পাইকারি ব্যবসায়ী আমাদের এখানে আসছে না। ফোনের মাধ্যমে আমাদের যোগাযোগ হয়, আমরা মাল পাঠিয়ে দেই। তাই আমাদের এখানে স্বাস্থ্য ঝুঁঁকি কম থাকছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক ভুঁইয়া বলেন, সদরঘাট ও যাত্রাবাড়ী এলাকার কিছু দোকানপাট খোলা হয়েছে। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোডের দোকান, মার্কেটগুলো মোটামুটি খোলা রয়েছে বলে আমরা জেনেছি। তিনি বলেন, যারা দোকান না খুলে থাকতে পারছে না জীবন রক্ষার জন্যই তারা এই কাজ করছেন। আর যারা বন্ধ রেখেছেন তারা খুবই ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App