×

খেলা

৫ লাখ ১০ হাজার টাকায় মুন্না-তৈয়বের জার্সি বিক্রি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২০, ০৯:০৪ পিএম

৫ লাখ ১০ হাজার টাকায় মুন্না-তৈয়বের জার্সি বিক্রি

মুন্না-তৈয়বের জার্সি

নিলামে বিক্রি হলো দেশের ইতিহাসে ‘কিং ব্যাক’ খ্যাত মোনেম মুন্নার জার্সি। জাতীয় দলের স্মৃতিবিজড়িত জার্সির পাশাপাশি আবাহনীর হয়ে খেলা জার্সিও বিক্রি হয়েছে। ৫ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এই জার্সি দুটি। এছাড়া বাংলাদেশের সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসানের নিলামে তোলা জার্সিও বিক্রি হয়েছে। এই পুরো অর্থ ব্যয় করা হবে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহযোগিতায়।

অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে নিলামে তোলা হয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা মোনেম মুন্নার জার্সি। নিলামে গতকাল সেই জার্সি ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মোনেম মুন্না এই জার্সি পরেই ১৯৮৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে খেলেছিলেন। ওই আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে পরা মুন্নার জার্সিটির ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ টাকা।

নিলামকারী প্রতিষ্ঠান অকশন ফর অ্যাকশন কর্তৃক অনুষ্ঠিত নিলাম থেকে সেই বিখ্যাত ‘২’ নম্বর জার্সিটি ৩ লাখ টাকায় কিনে নেয় কার্নিভাল ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া মোনেম মুন্নার আবাহনী লিমিটেডের একটি জার্সি বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকায়। শুরুতে নিলামে তোলা না হলেও সরাসরি যোগাযোগ করে এটি কিনে নেন এইচএসবিসি ব্যাংকের সিইও মাহবুবুর রহমান।

অন্যদিকে বাংলাদেশের সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসানের জার্সিও নিলামে তোলা হয়েছিল। এই জার্সি পরে ২০১৩ সালে কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত সাফ ফুটবলের ফাইনাল পরিচালনা করেছিলেন তৈয়ব। সেবারই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার কোনো রেফারি সাফ ফুটবলের ফাইনাল পরিচালনা করেন।

নিলামে তৈয়বের জার্সি বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকায়। নিলাম থেকে জার্সিটি কিনেছেন সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠু। এর ভিত্তিমূল্য ছিল ২ লাখ টাকা।

মোনেম মুন্না। ক্ষণজন্মা একজন ফুটবলার। যার সম্পর্কে আক্ষেপ করে জাতীয় দলের সাবেক জার্মান কোচ অটো ফিস্টার বলেছিলেন, হি ওয়াজ মিসটেকেনলি বর্ন ইন বাংলাদেশ। তার এই উক্তিই বলে দেয়, কতো বড় মাপের তারকা ফুটবলার ছিলেন মুন্না।

দেশের ফুটবলে ইতিহাসে তো বটেই, উপমহাদেশেরও সেরা ডিফেন্ডারদের একজন মোনেম মুন্না। দক্ষ নেতৃত্ব আর দুর্দান্ত পেশাদারিত্বের এক জ্বলন্ত উদাহরণ ছিলেন তিনি। যার হাত ধরে বাংলাদেশের ফুটবল পেয়েছিল অনন্য কিছু সাফল্য। কিডনি রোগে মাত্র ৩৭ বছরে বয়সে অকাল প্রয়াণ হয় কিং ব্যাক খ্যাত মুন্নার। তবে এখনো ভক্ত-সমর্থকদের স্মৃতির মানসপটে রয়ে গেছেন মোনেম মুন্না।

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সেরা ডিফেন্ডারদের মধ্যে অন্যতম মোনেম মুন্না ১৯৬৮ সালের ৯ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলায় জন্ম গ্রহন করেন। মোনেম মুন্না ঢাকায় ১৯৮১ সালে পাইওনিয়ার লিগের দল গুলশান ক্লাবে খেলা শুরু করেন। পরের বছর দ্বিতীয় বিভাগের দল শান্তিনগরে যোগ দেন। সেই বছর ১৯৮২ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা দলের সাথে জাতীয় দলের এক প্রদর্শনী খেলায় কিশোর মোনেম মুন্না সবার নজরে আসেন। দ্বিতীয় বিভাগের দল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ১৯৮৩ সালে মুন্নাকে দলে নেয় এবং দ্বিতীয় বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে উঠে।

১৯৮৬ সালে মুন্না ব্রাদার্স ইউনিয়নে যোগদেন এবং সে বছরই মাত্র ১৮ বছর বয়সে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। ১৯৮৭ সালে মুন্না আবাহনীতে যোগ দেন এবং আমৃত্যু আবাহনী ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলেন। মাঝখানে ১৯৯১-৯২ মৌসুমে কলকাতার ইস্টবেঙ্গলের হয়েও ফুটবল খেলেন।

বাংলাদেশে জাতীয় দলের হয়ে মুন্না প্রথম খেলার সুযোগ পান ১৯৮৬ সালে। সে বছর সিউলে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের জন্য নির্বাচিত দলে তিনি প্রথমবারের মতো ডাক পান। একটানা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৫ সালে তারই নেতৃত্বে মায়ানমারে অনুষ্ঠিত চার জাতি কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের বাইরে প্রথম বাংলাদেশ কোন ট্রফি জেতার অনন্য কৃতিত্ব দেখায়।

২০০৫ সালে স্বল্প বয়সে কিডনিজনিত কারণে মৃত্যুবরন করেন মুন্না। ১৯৯৯ সালের রমজান মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার্থে সিঙ্গাপুর যান। সেখানেই কিডনি সমস্যা ধরা পড়ে। ২০০০ সালের মার্চে ব্যাঙ্গালোরে বোন শামসুন নাহার আইভীর কিডনি তার দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। ২০০৪ সালে দেহে ক্ষতিকারক ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।

মোনেম মুন্নার স্ত্রী সুরভী মোনেম জার্সি বিক্রিতে খুশি। তিনি চেয়েছিলেন মুন্নার জার্সি যেন সম্মানজনক মূল্যে বিক্রি হয়। তাই ৫ লাখ ১০ হাজার টাকায় দুটি জার্সি বিক্রি হওয়ায় তিনি অনেক খুশি।

নিলামের পুরো সময় লাইভে ছিলেন সুরভী মোনেম। সেখানে তিনি বারবার বলছিলেন, এই জার্সি আমার কাছে মুন্নার আমানত হিসেবে ছিল। আমি অনেক যতœ করে এগুলো রেখেছিলাম। মাঝে মধ্যে বের করে পরিষ্কার করে রাখতাম। মুন্না বেঁচে থাকলে এখন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াত। আমি ওর রেখে যাওয়া আমানত বিক্রি করে মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড়।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App