করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে পালিয়ে আসা কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সেই আলোচিত দম্পতি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেয়েসহ চিকিৎসাধীন এই পরিবারটিকে দুই সপ্তাহ পর শনিবার (৯ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।

রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের একটি ভাড়া বাসায় থাকা অবস্থায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার তছিকুল ইসলাম (৩১) ও তার স্ত্রী শিল্পী খাতুন (২৫)। এরপর গত ২৪ এপ্রিল পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান ফাতেমাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা থেকে গোপনে নিজ বাড়ির উদ্দেশে পালিয়ে আসার পথে রাজবাড়ীতে পুলিশের হাতে আটক হন তারা।

এই দম্পতিকে রাখা না রাখা নিয়ে দুই জেলার (রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া) কর্মকর্তারা বিপাকে পড়ে যান। শুরু হয় ঠেলাঠেলি। দুই জেলার কর্মকর্তাদের মধ্যে ঠেলাঠেলির পর দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশার মানবিক হস্তক্ষেপে করোনা আক্রান্ত এই দম্পতির ঠাঁই হয় নিজ জেলা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ডে।

এখানে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২৮ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত এই দম্পতির শিশুকন্যা ফাতেমার শরীরেও কোভিডের উপস্থিতি ধরা পড়ে। দুই সপ্তাহ ধরে আক্রান্ত পরিবারটি আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠায় শনিবার (৯ মে) বিকেলে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, করোনাক্রান্ত এই দম্পতিকে নিয়ে আমরা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলাম। পাঁচ বছর বয়সী শিশু কন্যা ফাতেমাকে নিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে থাকতেন তছিকুল-শিল্পী দম্পতি। গত ১৬ এপ্রিল এই দম্পত্তি কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রান্তের লক্ষণ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তারা ঢাকা মেডিকেলে গেলে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা আইইডিসিআরে পাঠিয়ে চিকিৎসকরা তাদের বাসায় গিয়ে সাবধানে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেন। দুই জেলার কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে তাদের কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা আক্রান্ত এই পরিবারের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কুষ্টিয়ার চিকিৎসকরা একটা চ্যালেঞ্জের মুখে যুদ্ধ জয় করেছেন। এই দম্পতিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে দীর্ঘ ১৬ দিন চিকিৎসা দেয়া হয়। তারা ধীরে ধীরে সুস্থ ওঠার পর কেএমসিএইচের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের ছাড়পত্র দেয়া হলো।

প্রসঙ্গত, দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের ভ্যাগল মালিথার ছেলে তছিকুল ইসলাম রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ওমর ফারুকের ব্যক্তিগত গাড়ি চালাতেন। সাত মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রীসহ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় একমাত্র মেয়েকে দেখাশোনার কথা চিন্তা করে তারা গোপনে বাড়ি ফিরে আসার পথে রাজবাড়ীতে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। এ নিয়ে রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ঠেলাঠেলির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে আসেন এই করোনা আক্রান্ত দম্পতি।