×

চিত্র বিচিত্র

ভালোবাসি, মা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২০, ০৩:৫৩ পিএম

ভালোবাসি, মা

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুর ২ বাসস্ট্যান্ডের চিত্র এটি। বাসাবাড়িতে কাজ করে চার সন্তান নিয়ে সংসার চালাতেন শিলা বেগম। করোনাভাইরাসের কারণে তাকে বাসাবাড়ির কাজে আর নেয়া হয় না। এখন তার পথে পথে বসে থেকে দিন কাটে। সাড়ে তিন বছরের ছোট মেয়েকে শুকনো চিড়া কিনে দিয়েছেন। মায়ের পাশে বসে চিড়া দিয়ে দুপুরের খাওয়া খাচ্ছে শিশু সোহাগী।

আজ বিশ্ব মা দিবস। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস পালিত হয়। আধুনিক পশ্চিমা বিশ্বে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে বিশ শতকের শুরুর দিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে মা দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয়। এই দিনে সন্তানেরা মাকে নিয়ে নানা স্মৃতি রোমন্থন করেন। মাকে বিশেষভাবে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করেন।

সাংবাদিকতার মতো ব্যস্ততম পেশায় এসে রাতদিন কীভাবে যায় বুঝতে পারি না। এরমাঝে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য সময় দিতে হয়। দুটোই আমার কাছে সমান গুরুত্বের। ভার্সিটিতে ছুটি পেলে যখন বন্ধুরা স্ট্যাটাস দেয় ‘গোয়িং টু সুইট হোম’ বা ট্রাভিলিং টু...। তখন আমাকে নিউজরুমে থাকতে হয়। সংবাদপত্র অফিসে ছুটি মেলা ভার। ক্লাস-পরীক্ষার কল্যাণে মাঝে ছুটি মেলে, সে সময়টাও খুব অস্থিরতায় কাটে। শান্তি সেতো আমার বাড়ি। আমার মা। গত ঈদও আমার অফিসে কেটেছে।

শিক্ষা এবং পেশা এ দুটো আমার কাঙ্ক্ষিত; তবে যন্ত্রণাময়। এ দুটিই আমার ব্যক্তিজীবনকে উপেক্ষিত করেছে। ভ্রমণের মতো তীব্র রঙিন নেশাকেও বিবর্ণ করেছে। সাংবাদিকতা শুরুর দিকে ধর্ষণ-মৃত্যু-দুর্ঘটনাসহ নানা অমানবিক খবর দেখে যন্ত্রণা হতো। রাতে ঘুমাতে গেলে বিভিন্ন খবর-ডাটা ব্রেন থেকে রিফ্রেশ হতে অনেক সময় লাগে। ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।

কিছুদিন আগের খবর ‘মা, তুমি এই বনে এক রাত থাকো। কাল এসে তোমাকে নিয়ে যাব’-এ কথা বলে ৫০ বছর বয়সী মাকে শাল-গজারির বনে ফেলে যান তার সন্তানেরা। কী নির্মমতা! করোনা সন্দেহে এই কাজ করেছিলেন তার সন্তানেরা। আপনাদের সবার ঐশীর কথা মনে আছে? সেতো শাসনে বিরক্ত হয়ে মা-বাবাকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। যারা সংবাদ নিয়ে কাজ করে তাদের এ ধরনের খবর মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তৈরি করে। এসব খবর হিটও হয় বেশি। পাঠক এসব নিউজ বেশি নেয় বলেই পত্রিকায় বড় করে ছাপানো হয়।

একদিন ‘রাস্তায় ফেলে মাকে পেটালেন ছেলে’ এরকম একটা খবর লিডগুলোতে ছিল। সম্পাদক এসে বললেন, ‘আপনারা এই নিউজটা সরান, মাকে ভালোবাসার বহু দৃষ্টান্ত আছে, আপনারা সেগুলো সামনে আনেন।’ কথাটি সেদিন মনে ধরেছিল। মনে করেন তো মাকে নিয়ে ইতিবাচক খবর শেষ কি পড়েছেন?

ইতিবাচক খবরগুলো আমরা খুব কম ক্যাচ করি। হয়তো খবরও মনে করি না। আমাদের এক সহপাঠী তার দুগ্ধজাত শিশু নিয়ে ক্লাসে আসেন। শিশুকে বাইরে দেখাশোনা করার একমেয়েও রাখা আছে। মা ক্লাস করেন, বাইরে থাকে শিশু। শিশুটি চিৎকার তার কানে আসলেই যতোই গুরুত্বপূর্ণ লেকচার কিংবা টপিক হোক, মেয়েটি আর ক্লাসে থাকতে পারে না। ছুটে যান সন্তানের কাছে। সন্তানকে দুধ খাইয়ে, কান্না থামিয়ে আবার ক্লাসে আসেন। আমরা দেখি কেউ অন্তঃসত্তা হয়েও পড়াশুনা ছাড়েননি, কতোজন দুদিনের বাচ্চাকে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে বসেছে... এসব সুন্দর বিষয়গুলো নিউজ হিসেবে আমাদের মাথায়ই আসে না। কোথায় সন্তানকে ফেলে রেখে গেলেন মা, কোথায় সন্তান বিক্রি করা হলো মাথায় শুধু এসব ঘুরপাক খায়।

মা দিবস উপলক্ষে ম্যাসেঞ্জারে বন্ধুদের কাছে তাদের মা নিয়ে কিছু কথাস্মৃতি শুনতে চেয়েছিলাম। খুব কমজনই মাকে নিয়ে কিছু বলতে পেরেছে। মাকে নিয়ে কিছু বলতে পারাটাও দক্ষতা। একবন্ধু লিখেছে, মাকে নিয়ে কিছু বলাটা আমার কাছে আতেলপনা মনে হয়। বেশিরভাগই শুধু মাকে ভালোবাসি ছাড়া আর কিছু লিখতে পারেনি।

সর্বশেষ মায়ের সঙ্গে যখন ভিডিওকলে কথা বলি, মা বললো জামাটা (গেঞ্জিটা) খোল। তারপর শরীরটা দেখে মৃদুহেসে বললো এবার পর। আমি অবাক হয়ে যাই খালি গায়ে থাকলে যে মা বলে জামা পরতে, সেদিন খুলতে বললো কেন?

সত্যি মাকে ভালোবাসার জন্য কোনো দিবস লাগে না। দিবসটি আমার কাছে মাকে নিয়ে কিছু বলতে পারার একটা পরীক্ষামাত্র।

-পাপলু রহমান, সংবাদকর্মী

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App