×

জাতীয়

সিদ্ধান্তহীনতায় ব্যবসায়ীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২০, ০৯:২১ এএম

অনিশ্চয়তায় ঈদবাজার

সরকার ঈদের আগে বিপণিবিতানগুলো খোলার অনুমতি দিয়েছিল ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধেই। এখন এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেই মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। একদিকে পুঁজি হারানোর ভয়; অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখে এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তারা। সংশ্লিষ্ট খাতের নেতাদের অনেকেই ঈদ পর্যন্ত শপিংমল বন্ধ রাখার পক্ষে। তবে কেউ কেউ ১০ মে থেকে দোকানপাট খুলতে চান। ভিন্ন মত থাকায় এখন পর্যন্ত শপিংমল খোলা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছতে পারেননি দোকানদার ও মার্কেট কর্তৃপক্ষ। ঢাকার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনীহা প্রকাশ করেছেন অন্যান্য জেলার অনেক ব্যবসায়ীও। ব্যবসায়ীদের আগ্রহে দোকান-মার্কেট খোলার অনুমতি দিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে সরকারও। এ নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই সিদ্ধান্তের কারণে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চরম পর্যায়ে উপনীত হতে পারে। এ অবস্থায় দোকান খোলার সিদ্ধান্তের বিষয়ে খানিকটা ব্যাকফুটে সরকারও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, দোকান মালিক সমিতির আবেদনের পরিপ্রক্ষিতেই সীমিত পরিসরে দোকান-পাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দেয়া হয়। তবে কেউ চাইলে না-ও খুলতে পারেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক ইলাহী বলেন , মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিপণিবিতান-শপিংমল ও দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্তের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তারা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিপূর্ণভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন, তাহলে করবেন। তিনি বলেন, তবে আমি মনে করি আগে নিজেকে ও পরিবারকে সচেতন রাখা, নিরাপদ রাখা প্রয়োজন। দিন দিন যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে করোনা, তাতে ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যবিধি কতখানি মানতে পারবেন তা-ও ভাবনার বিষয়।

ব্যবসায়ীদের চাপে মার্কেট খোলার অনুমতি দিলেও সরকার মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও দোকান মালিকদের জানিয়ে দিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করতে না পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবার করোনাবিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিপণিবিতান, শপিংমল খুলে দিলে সবকিছুই খুলে দিতে হবে। একটি ব্যবসার সঙ্গে আরেকটি জড়িত। ফলে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না। তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পরামর্শ দেন।

এদিকে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। তাই সচেতন নাগরিকরা বিপণিবিতানগুলোতে আসবেন কিনা এ নিয়েও সন্দেহ আছে। যদি ক্রেতা সমাগম কম হয় তাহলে বিপণিবিতান-শপিংমল খুলে তাদের আরো ভর্তুকি গুনতে হবে। এ নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা। দোকানপাট খোলার চাপ দিলেও এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন প্রত্যেকেই। তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি দেখে ৯ মে সিদ্ধান্ত নেবেন কতটা মার্কেট বা দোকান খোলা রাখবেন এবং কীভাবে রাখবেন। প্রসঙ্গত, সরকার দোকান ও শপিংমল সীমিত আকারে খুলে দেয়ার ঘোষণা দিলেও রাজধানীর দুটি বৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স খুলবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে মার্কেট দুটির কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঈদের আগে রাজধানীর নিউ মার্কেট ও চন্দ্রিমা মার্কেটও খুলবে না। মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দোকান মালিক সমিতির আবেদনের পরিপ্রক্ষিতেই ঈদকে সামনে রেখে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১০ মে থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত দোকান-পাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বড় দুটি শপিংমল (বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্ক) সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা মল খুলবে না। এটা তাদেন নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কেউ যদি মনে করে দোকান খোলা ঠিক হবে না, তারা খুলবে না। তবে যারা খুলবে তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, কোনো কর্মচারী না আসতে চাইলে তাকেও জোর করা যাবে না। আর স্বাস্থ্যবিধি না মানতে পারলে ওই মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হবে।

এ বিষয়ে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তকেই অনুসরণ করছি। বর্তমানে তো করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচানো আগে। কিন্তু আমরা তো কোনো সেক্টর থেকেই কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। তাই রুটি-রুজির জন্য আমরা রাজি হয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমরা আমাদের নিজের, কর্মচারীদের এবং ক্রেতাদের- সর্বোপরি দেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।

এদিকে, উত্তরার রাজলক্ষ্মী শপিং কমপ্লেক্স চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও মার্কেট খোলা রাখার বিষয়ে দোকানদার ও মার্কেট কর্মচারীদের একাংশ আপত্তি জানিয়েছিল। এরপরও মার্কেট খোলা রাখার বিষয়ে এখন পর্যন্ত অটল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, যারা স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে মার্কেট খোলা রাখতে পারবেন, তারা খুলবেন। আর যারা পারবেন না তারা বন্ধ রাখলেও সমস্যা নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। বড় বড় শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। শপিংমলে আগত যানবাহন অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিকেল ৪টার মধ্যে দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা এখন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরকে করোনার হটস্পট বলে বিবেচনা করছি।

সিলেট : এদিকে সিলেটের ব্যবসায়ীরাও দোকান বন্ধ রাখার বিষয়ে আগ্রহী বেশি। এ নিয়ে আজ শুক্রবার বিকেলে সিলেটের বিভিন্ন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের নেতাদের নিয়ে সভা আহ্বান করেছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। এই সভায়ই শপিংমল খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে ১০ মে থেকে সিলেটের বিউটি পার্লার ও সেলুন না খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হওয়া এগুলো বন্ধের সিদ্ধান্তে নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব। চট্টগ্রাম : করোনার দুর্যোগের মধ্যেও ১০ মে থেকে দোকান ও শপিংমল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্তে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। নগরীর অর্ধশত মার্কেট এখন বন্ধ। চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা-উপজেলায় প্রায় ৫ লাখ দোকান আছে। লকডাউন কিছুটা শিথিল হওয়ায় কিছু কিছু দোকান ইতোমধ্যে খুলে গেছে। তবে নগরের বড় বড় বিপণিবিতানগুলো খোলা নিয়ে ব্যবসায়ীদের একাংশের রয়েছে চরম আপত্তি। তাদের মতে, ঈদ উপলক্ষে বিপণিবিতান খুলে দেয়া হলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হবে না। ফলে করোনা সংক্রমণ আরো ব্যাপক হারে বাড়তে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App