×

সাময়িকী

রবীন্দ্রনাথ জাগরণে-বৈভবে

Icon

nakib

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২০, ০১:৪১ পিএম

রবীন্দ্রনাথ জাগরণে-বৈভবে

রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ স্বমহিমায় বাঙালি মনন, বিশ্বাস ও জাগরণে মূর্তমান প্রতিদিন। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব আমাদের জাগতিক জীবনে যেমন উদ্ভাসিত তেমনি আধ্যাত্মিকতার গভীরেও সমানভাবে প্রবাহিত। রবীন্দ্রনাথ বহমান অনাদিকালের হাওয়া। বহতা জলের নদী, সবুজ বৃক্ষ। রবীন্দ্রনাথ আমাদের হৃদয়ে চিরকালীন বিত্ত-বৈভবের এক জাগরুক উৎস। আনন্দ, বেদনায়, উৎসবে, অনুভবে, আধ্যাত্মিকতা ও আরাধনার মগ্নতায় প্রতিদিন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির বিশালতা, ভাবের অতল স্পর্শী আবেদন, চিরকাল আমাদের জীবনকে অপরিসীম ফল্গুধারায় প্লাবিত করেছে। এ কথা খুব সহজেই প্রতীয়মান হয়। আমরা বারবার রবীন্দ্রনাথের কাছে ফিরে যাই। তার ছায়ায় আশ্রয় নেই পরম নির্ভরতায়। তার সৃষ্টিকে পাঠ করে, উপলব্ধি করে, ধারণ করে আমরা হয়ে উঠি চিরচেনা বাঙালি। জীবনের নানা দ্যোতনা, নানা ব্যঞ্জনার রসে সিক্ত হয়ে খুলে দেই রুদ্ধ দুয়ার, বন্ধ জানালা। রবীন্দ্রনাথ মহাকালের অনন্ত নক্ষত্রের আলোর আধার। তবে তার সৃষ্টির বিশালত্বের আলোচনা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমাদের বিশ্বাসের ভূমিতে যে রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে থাকেন উপল জাগরণে, ঘোর অমানিশায় আলোর দীপ্তিতে এ লেখা সে বিষয়টিকে আরেকবার স্মরণ করে দেয়ার প্রয়াশ মাত্র। তবে সব কিছু ছেড়ে যে কথা সব চেয়ে সত্য, তা হলো আমাদের যাপিত জীবনাচারে রবীন্দ্রনাথের নিত্য উপস্থিতি। তা সাড়ম্বরে অনুভূত হোক না আর না হোক। তিনি তো ধ্বনিময়, জাগরুক তার সৃষ্টির চিরন্তন উপযোগিতা, আবেদন ও প্রগাঢ় মহিমায়। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির অসাধারণত্ব, প্রসারতা, গভীরতার জন্য আমরাই তাকে আবিষ্কার করি, আশ্রয় গ্রহণ করি তার মাঝে। আর এ মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ মূর্তমান হন আমাদের জীবন ও সংসারে প্রতিদিন। আমরা জেগে উঠি এ মহান কবি, শিল্পী, স্রষ্টার কালজয়ী সৃষ্টিকে চিন্তা ও মননে ধারণ, অনুশীলন ও লালন করে। বাংলা কবিতার এক বিশাল ভুবন সৃষ্টি করেছেন তিনি। প্রথম থেকে শেষাবধি কবিতায় মানবতা, প্রগাঢ় জীবনবোধ ও আধ্যাত্মিকতাকে ধারণ করেছেন বিস্ময়কর প্রতিভার স্পর্শে। তার সৃষ্টি সম্ভার বিপুলভাবে বিস্তৃত বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সর্বত্র। তিনি তো শুধু কবি নন। আরও অনেক কিছু। গল্পকার, ঔপন্যাসিক, সংগীত রচয়িতা, সুরকার, প্রবন্ধকার, নাট্যকার, অভিনেতা, আঁকিয়ে। সব ক্ষেত্রে তিনি বিস্ময়করভাবে সফল। এছাড়া তার শিক্ষা, কৃষি ভাবনাও আধুনিক গবেষকদের চিন্তা-ভাবনার বিশেষ ক্ষেত্র। লেখালেখি, সংগীত সাধনা, সম্পাদনা, অভিনয়, জমিদারি দেখভাল, সংসার, সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিসহ সব কিছু সামলিয়েছেন অভূর্তপূর্ব দক্ষতা ও সহনশীলতায়। মানব জীবনের নানা বিষয়, অনুষঙ্গ, তার গভীর দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক চিন্তা- চেতনায় জাড়িত হয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ চিরকালই এক বিস্ময়। কোনো নির্দিষ্ট দেশ, কাল, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা সংস্কৃতির গণ্ডিতে তিনি আবদ্ধ নন। তিনি সর্বকালের, সব মানুষের। তার সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যসহ বিশ্ব সাহিত্যের চিরকালীন ঐশ্বর্যময় সম্পদ। সংগীতের যে অপার সম্পদের ভাণ্ডার তিনি রেখে গেছেন তা এ দেশের মানুষ গভীর আস্থা ও প্রশান্তির সাথে সাদরে গ্রহণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথকে আরও বেশি করে আপন করে নিয়েছে। সংগীতের মধ্য দিয় দেশপ্রেম, স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পণের নিবেদন, দুর্দিন-দুঃসময়ে রবীন্দ্রনাথের সংগীত বড় অবলম্বন হয়ে আমাদের জীবনধারায় মিশে গেছে। এখানে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি চিরকালীন মহিমায় উদ্ভাসিত ও প্রলম্বিত। রবীন্দ্র সংগীতের বাণী ও সুরের মধ্যে গভীরতা, বিচিত্র বোধ, জীবন তৃষ্ণা, মানবীয় চেতনার লালন, অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটেছে চিরকালীন বৈভবে। তিনি বিশ্বাস করতেন, বৈরাগ্য নয়, সংসার ও জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে অসীম- অনন্ত জীবনকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। জাগতিক ও অনন্ত জীবনের স্বাদ পাওয়ার এ আয়োজন, আনন্দ, অফুরন্ততা তার গানের শক্তি ও অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের আধার। দেশপ্রেম, ঈশ্বর প্রেম, প্রকৃতি : মানবতা, সচেতন রাজনৈতিক বোধ, অনন্ত জীবনবোধের জাগরণ তার গানের বিশাল সম্ভারে প্রতিফলিত হয়েছে অপরিসীম মমতা ও অতুলনীয় ঐশ্বর্যে। আমাদের রাজনৈতিক সংকট, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, গণজাগরণে রবীন্দ্রনাথের গান অনুপ্রেরণা জুগিয়ে আসছে। তার দেশাত্মবোধক গানগুলো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অপরিসীম বোধে আমাদের জাগ্রত করেছে। এভাবে তিনি হয়ে উঠেছেন চেতনার চিরকালীন উৎস। তেমনি প্রেমে, দ্রোহে, আনন্দ-বেদনায়, আধ্যাত্মিকতায়, ঐক্য, মিলনে তার গানেই দিয়েছে মানসিক শক্তি ও সান্ত্বনা। রবীন্দ্রনাথের গানে সকল ধর্মের, সকল সম্প্রদায়ের মানুষ পরম এক আশ্রয়ের সন্ধান লাভ করেন। তার গানের বিপুল সম্ভারে আমাদের পরম নির্ভরতার আশ্রয়। এভাবেই তিনি কাল থেকে কালান্তরে পরিব্যপ্ত, প্রসারিত। রবীন্দ্র জাগরণ ও অনুপ্রেরণায় ধন্য হয়েছেন সমকালীন ও পরবর্তীকালের অসংখ্য কবি। নতুনদের তিনি হৃদয়ের অর্ঘ্যে গ্রহণ করেছেন, বরণ করেছেন। নবীণ কবিদের জন্য পথ নির্মাণে তিনি সব সময় সচেষ্ট ছিলেন। তিনি সব সময় নতুনদের সাফল্যকে প্রাণিত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনে, জাতিসত্তার জাগরণে, সংকটময় মুহূর্তে, ভাবনা- চিন্তার গভীর অনুরণনে জাগ্রত সব সময়। আমরা তার ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই’ এ রকম অজস্র-অমোঘ বাণীর শক্তিতে জেগে উঠি, জেগে থাকি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App