×

মুক্তচিন্তা

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য প্রণোদনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২০, ১০:৩৬ পিএম

সারা দেশের আড়াই লাখ মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আজ করুণ শোচনীয় অবস্থা। আলেম উলামাদের কেউ আজ ভালো নেই। মসজিদ-মাদ্রাসায় চাকরি করে সীমিত আয় দিয়ে তারা আর চলতে পারছেন না। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা খুব দুঃখ-দুর্দশা ও ভীষণ অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন। লাখো লাখো মসজিদের ইমাম-খতিব ও মুয়াজ্জিনরা আজ এই করোনা পরিস্থিতিতে গভীর দুর্দশায় দিন পার করছেন। গ্রামে-গঞ্জে এমন শত শত মসজিদও আছে, যে মসজিদগুলোতে মাসে মাত্র ৩/৪ হাজার টাকা বেতন-ভাতা দেয়া হয়। এই সামান্য স্বল্প বেতনে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জীবন কীভাবে চলছে তা ভেবে দেখার গরজবোধও দেখা যায় না অনেকের মাঝে। অথচ প্রায় মসজিদের আশপাশের মানুষরা যে গরিব, তেমন নয়। মসজিদ কমিটিতে এবং আওতাধীন পাড়া-মহল্লায় অনেক সচ্ছল বিত্তবান ব্যক্তি আছেন। তাঁরা চাইলে এবং একটু উদ্যোগী হলে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিক দুরবস্থা দূর হতে পারে। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা তো অন্যদের মতো ৮/১০ ঘণ্টার চাকরি করেন না। তাঁদের কর্মঘণ্টা ২৪ ঘণ্টা। দিন-রাতে থেমে থেমে ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান তাঁরা। ছুটি বা অবসর বলতে কিছু নেই তাঁদের জীবনে। মুয়াজ্জিনদের মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত আজান দিতে হয়, ইমাম সাহেবদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াতে হয়। ঘুরেফিরে ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের চাকরি ও দায়িত্বের পরিধি। আবার গ্রামাঞ্চলে এমন শত শত মসজিদ আছে, যেখানে কোনো ইমাম নেই। যিনি মুয়াজ্জিন, তিনিই আবার ইমাম। অর্থাৎ মাত্র একজন মুয়াজ্জিনেই চলে পুরো মসজিদ। মুয়াজ্জিন বা ইমামের কোনো ছুটি নেই। নেই অবসর বা বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা। রাতে এশার নামাজ পড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন, পরদিন সকালে ফজরের নামাজ পড়াতে পারবেন এমন নিশ্চয়তাও মেলে না। যখন-তখন বিনা নোটিসে চাকরি যায় ইমাম-মুয়াজ্জিনদের। গার্মেন্টস খাতের চেয়েও শোচনীয় দশায় জীবন কাটছে তাঁদের। একজন পোশাককর্মী চাকরি হারালে অন্তত ৩/৪ মাসের বেতন-ভাতা পান বা আরো বেশি পান। কিন্তু অতীব দুর্ভাগ্যজনক যে, দেশের প্রায় মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিনরা চাকরি হারান বিনা বেতনে এবং বিনা নোটিসে।দীর্ঘ বছর ধরে একটি মসজিদে প্রাণ উজাড় করে দায়িত্ব পালন করা সত্তে¡ও তাঁরা রিক্ত হস্তে চাকরি থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন। তাঁদের চাকরির নিরাপত্তা নেই। গভীর অনিশ্চয়তা ও সারাক্ষণ দুশ্চিন্তার মাঝেই কাটে তাঁদের চাকরিকাল। মসজিদ কমিটির কর্ণধারদের মন মেজাজ বুঝে তাঁদের চলতে হয়। তাদের খুশিতে রাখতে হয়। না হয় তাঁদের চাকরি হারাতে হয়। পান থেকে চুন খসলেই ইমাম- মুয়াজ্জিনদের চাকরি চলে যায়। মান সম্মানও বিপন্ন হয়। সমাজের চোখে তাঁরা মোটামুটি সম্মান-খাতির-মর্যাদা পেয়ে আসলেও প্রায় মসজিদ কমিটির কাছে তাঁরা তেমন পাত্তাই পান না। কথায় কথায় ঠুনকো কারণে বা অকারণে চাকরি হারানোই ইমাম-মুয়াজ্জিনদের যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি, তা কী কোনো চাকরি হলো? এই সামান্য টাকায় ইমাম-মুয়াজ্জিনরা কীভাবে চলছেন কেউ কী তা ভেবে দেখছেন? সরকার, মসজিদ কমিটি এবং বিত্তবানরা চাইলে তাঁদের দুঃখ-কষ্টের বোঝা হালকা হতে পারে। বদলে যেতে পারে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের গ্লানিময় জীবনধারা। দরকার একটু সহানুভূতি ও সহমর্মিতা। ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিনদের বাড়তি ইনকাম দাওয়াত-খতম সব বন্ধ। বাড়তি আয় রোজগার বলতে কিছুই নেই। এভাবে দুঃখ-কষ্টে আর কতদিন চলা যায় এই বলে তীব্র আক্ষেপ ঝাড়লেন এই মসজিদের ইমাম। শুধু এই ইমাম নন, সারাদেশের লাখো লাখো মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন-খতিবরা আজ চরম দুঃসময় পার করছেন। করোনার অভিঘাত তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে। দিনমান দুঃখক্লিষ্ট জীবনকে আরো দুর্বিষহ করে তুলেছে। সবচেয়ে পীড়াদায়ক যে, এই বড় দুঃসময়ে আজ তাঁদের পাশে কেউ নেই। সারাদেশে আড়াই লাখ মসজিদে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ ইমাম-খতিব মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের জন্য সরকারি তরফে তেমন আর্থিক প্রণোদনা, অনুদান ও ভাতা দেয়া হয় না। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় হাজার হাজার শিক্ষক এবং আলেমগণ এমপিও পেয়ে থাকেন। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক-কর্মচারীরা মোটামুটি আর্থিক সুরক্ষা পাচ্ছেন। লাখ লাখ মসজিদে দ্বীনি দায়িত্বরত আলেম এবং ইমাম-মুয়াজ্জিন-খতিব ও খাদেমরা কেন সরকারিভাবে মাসিক অনুদান বা ভাতা পাবেন না তাই আজ বড় জিজ্ঞাসা সরকারের কাছে। করোনাকালে এই অসহায় ইমাম-মুয়াজ্জিনদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App