×

জাতীয়

আপাতত স্বপদেই থাকছেন বিদ্যানন্দের কিশোর কুমার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২০, ১১:৩৬ এএম

আপাতত স্বপদেই থাকছেন বিদ্যানন্দের কিশোর কুমার

কিশোর কুমার দাশ

ভাই কিশোর কুমার দাশ সুদূর পেরু প্রবাসী। আর বোন শিপ্রা দাশ থাকেন ঢাকায়। ‘পড়বো, খেলবো, শিখবো’ স্লোগানে ২০১৪ সালে ভাইবোন মিলে গড়ে তোলেন বিদ্যানন্দ নামের ব্যতিক্রমী সংগঠনটি। সারাদেশে ১২টি শাখার মাধ্যমে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি পথশিশু, সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র ও অসচ্ছল শিশুদের মৌলিক শিক্ষা, এক টাকার বিনিময়ে খাবার, এক টাকায় চিকিৎসা এবং এক টাকায় আইনি সেবা দিচ্ছে সংগঠনটি। এছাড়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে পোশাক, শিক্ষা উপকরণ, মাসিক বৃত্তির পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছে বিদ্যানন্দ। এমনকি করোনার অভিঘাতে দিশাহারা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি। কিন্তু এই কর্মকাণ্ডে যেন ঘি ঢেলে দিল ফেসবুকের শ্রাবণ ইস্পাহানী, ডক্টর তুহিন মালিক, বিবিসি বাংলা ডট কম নামে বেশকিছু ভুয়া আইডি এবং উগ্রবাদী সংগঠন। এসব আপত্তিকর মন্তব্যে আবেগে মর্মাহত হয়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন। মানবিক এমন কর্মকাণ্ডে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রশংসা যখন দেশজুড়ে, তখন কিশোর কুমার দাসের পদত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়।

মঙ্গলবার (৫ মে) সকালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে একটি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘সাম্প্রদায়িক অপপ্রচারে নয়, বরং ব্যক্তিগত ত্যাগে স্বেচ্ছাসেবকদের অনুপ্রাণিত করার এবং নতুন মেধায় প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্নে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিশোর দাশ। বিদ্যানন্দ নামটি দিয়েছেন এক মুসলমান ব্র্যান্ড এক্সপার্ট। আনন্দের মাধ্যমে বিদ্যা অর্জন-স্লোগানের সঙ্গে মিল রেখে তিনি নামটি দিয়েছিলেন। অনেকেই এটাকে ব্যক্তির নাম থেকে ভেবে ভুল করেন। এজন্য আমরা দুই বছর আগে নাম পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটে করি এবং স্বেচ্ছাসেবকরা নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে ভোট দেন। বিদ্যানন্দের প্রবাসী উদ্যোক্তা সশরীরে খুব অল্পই সময় দিতে পারেন। ৯০% মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরাই চালিয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবুও উদ্যোক্তার ধর্ম পরিচয়ে অনেকেই অপপ্রচার চালায়। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কার্যক্রম, অনুদানের গতি।

এছাড়া গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিদ্যানন্দের একই ফেসবুক পেজে কিশোর কুমার দাস আরেকটি পোস্ট দিয়ে জানান, সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেটা নিয়ে আমার বক্তব্য প্রকাশ করলাম- প্রথমত আমি বিদ্যানন্দ ছাড়ছি না, পরিচালনা পর্ষদেই থাকছি। শুধু দায়িত্ব পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। পরিচালনা পর্ষদে এখনো সে আবেদন গৃহীত হয়নি। দ্বিতীয়ত কোনো চাপে এই সিদ্ধান্ত নেইনি। শারীরিক ক্লান্তি এবং ব্যক্তিগত আবেগের কাছে হার মেনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া।

তৃতীয়ত, সব ধর্মের বিশেষ করে মুসলমানদের সহযোগিতায় এতদূর আসা। কিছু মন্দ লোক অপপ্রচার করে সেটা খুবই নগন্য। যদি আমার আগের বক্তব্যে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাই এবং অনুরোধ থাকবে, আমাদের পক্ষে লিখতে গিয়ে অনুমানভিত্তিক অন্যকে দোষারোপ করবেন না।

এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী এ প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা বিভাগের সমন্বয়ক সালমান খান ইয়াসিন ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাস সঙ্কটের এই সময়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস পদত্যাগের কথা মার্চেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। তিনি কোভিড-১৯ ক্যাম্পেইন শেষ না হওয়া অবধি চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকবেন।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এমন তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রাবণ ইস্পাহানী, ডক্টর তুহিন মালিক, বিবিসি বাংলা ডট কম নামে বেশকিছু উগ্রবাদী সংগঠন আর ফেসবুক ইউজার কারও কারও সাম্প্রদায়িক এবং নেগেটিভ কমেন্টে আবেগতাড়িত হয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং মানসিকভাবে বিব্রতবোধ করছিলেন কিশোর কুমার। তাছাড়া ধর্ম নিয়ে অনবরত নেগেটিভ কমেন্টেও তিনি নিতে পারছিলেন না। বলেছিলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থেকে কাজ করবেন তিনি।

সালমান আরো বলেন, ‘দাদা হঠাৎ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেও আমরা তা গ্রহণ করি নাই। কোভিড-১৯ ক্যাম্পেইন শেষ হলে পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আপাতত তিনি চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকছেন। তিনি বলেন, ‘যদিও তিনি পদটাকে কখনোই বড় করে দেখতেন না। তার ত্যাগ অসাধারণ। তিনি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে গেলে যোগ্য কাউকে না পেলে পদটি শূন্যই থাকবে। আমাদের মননে তিনি ছাড়া আর কেইউ নাই। থাকবেও না।

দেশের এই সঙ্কটকালে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য ত্রাণ নিয়ে পুরো শহরময় ছুটছে এর স্বেচ্ছাসেবীরা। সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায়ও ত্রাণ পাঠাচ্ছে। যখন চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক, নার্সদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের সংকট ছিল তখন বিদ্যানন্দ নিজেদের বাসন্তী গার্মেন্টসে পিপিই বানিয়েছে। সেই পিপিইগুলো বিনামূল্যে ‘সরবারাহ’ করেছে ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে মসজিদ, হাসপাতাল, বাস, রেলস্টেশনের মতো জায়গাগুলো জনসমাগমস্থলে জীবাণুনাশকও ছিটিয়েছে।

মানুষের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে দিতে রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, গুলশান, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে বসিয়েছে অস্থায়ী হাত ধোয়ার বেসিন। সরবারহ করা হয়েছে পানি ও সাবান। তৈরি করেছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক; যা বিতরণ করা হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষদের। পুরো রমজান মাসজুড়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন এলাকায় দুস্থ পরিবারগুলোকে ইফতার ও সেহেরি দিচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ শেষে পথেই সেহরি খাচ্ছেন বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App