×

জাতীয়

সেদিন ট্রেনে কোনো যাত্রী যায়নি: রেলমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২০, ০৫:৩২ পিএম

রেলওয়ের সিলেট জোনের কর্মীদের বেতন ভাতা নিয়ে গত ১৮ এপ্রিল ঢাকা থেকে সিলেটে দু বড়ির যে স্পেশাল ক্যাশ ট্রনটি যায় তাতে রেলকর্মী ছাড়া বাইরের কোন লোক যাইনি না বলে জানিয়েছেন স্বয়ং রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

তিনি বলেন, ওই ট্রেন করে যাত্রী নিয়ে যাবার তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যে। ওই ট্রেনে রেলের কর্মী ছাড়া অন্য কোন বাইরের লোক ছিল না। সে সময় ডিসির অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একজনকে আরএনবিকে সাসপেন্ড করেছিলাম। রেলের পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগীয় উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোট দিয়েছে, তাতে তারা বলেছে ওই ক্যাশ ট্রেনে করে রেলের কর্মী ছাড়া বাইরের কোন লোক যায়নি। রেলের তদন্ত কমিটির দেয়া রিপোর্টে এমনি তথ্য উঠে এসেছে বলে জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

রেলমন্ত্রী বলেন, তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছে কমিটি। আমাকে এবিষয়ে অবগত করা হয়েছে। তবে কয়েকদিন আমি ঢাকার বাইরে (পঞ্চগড়) থাকায় আমার হাতে এখনো সেটি আসেনি। তবে রিপোর্টে ওই ম্যাজিট্রেটের সব অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা এর জন্য একজন আরএনবিকে সাসপেন্ড করেছিলাম, তা উইড্র করে তাকে চাকুরীতে বহাল করেছি।

রেলমন্ত্রী মঙ্গলবার দুপুরে ভোরের কাগজের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা একেবারেই ভ’ল তথ্য ছিল। এই লক ডাউনে কমলাপুরে স্টেশনে, বিমান বন্দর স্টেশনে কোন লোক থাকার কথা নয়, তাহলে কিভাবে লোক উঠবে। তাছাড়া ওই ট্রেনে করে সিলেট রেলওয়ে বিভাগের কর্মীদের বেতন ভাতা, পেনশন ইত্যাদি খরচের জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বহন করা হচ্ছিল। সেকারণে ওই ট্রেন সাধারণ যাত্রী কেউ তুলবে না এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া উনি (সংশ্লিষ্ট ম্যাজিট্রেট) সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (নেজারত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এরশাদ মিয়া এত অতিউৎসাহী হয়ে সব কাজ ফেলে ট্রেনে কেন এলো, কারা এল এসব জানার জন্য একদল বাহিনী নিয়ে স্টেশনে এনে কর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সিসি টিভি ফুটেজ দেখবেন এমন কেন হবে। তার এত ইনটেন কেন ছিল তা ভেবে দেখা দরকার। উনি তো কোন তদন্তে সিলেট স্টেশনে যান নি, তাহলে একেবারে সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষন, রেলের ম্যানেজারসহ কর্মীদের জেরা করা এসব কেন করবেন। কিসের এত ইনটেনশন। বিষয়টা নিয়ে তিনি কেন এত অতি উৎসাহী হলেন, সেজন্য আমরা রেলের পক্ষ থেকে ওনার বিষয়ে সিলেটের ডিসিকে জানাবো, কেন তিনি এত ইনটেনশনালী বিষয়টি নেন। এটা রেলের অথ্যান্তরিন বিষয়ে হস্তক্ষেপ।

প্রসঙ্গত করোনা পরিস্থিতিতে রেল কর্মকর্তাদের ঢাকা থেকে সিলেটে পেনসহ-বেতনের অর্থ পরিবহনের প্রয়োজনে গত ১৮ এপ্রিল শনিবার একটি দু বগির ট্রেন বিকেলে কমলাপুর থেকে ছেড়ে সন্ধ্যে নাগাদ সিলেট স্টেশনে পৌঁছে। এই ট্রেনে করে রেলের কর্মীদের সঙ্গে অবৈধভাবে ৩১ জন সাধারণ যাত্রী নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (নেজারত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এরশাদ মিয়া। লক ডাউনের মধ্যে এ অবৈধ যাত্রী স্থানান্তরের জন্য রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার সুপারিশ করেন সিলেট জেলা প্রশাসক।

এর প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হাবিলদার কামরুল হাসানকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়। আর ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলওয়ে, তাদের রিপোর্টে ওই ম্যাজিট্রেটের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমানিত হওয়ায় হাবিলদার কামরুল হাসানকে কাজে পূনরায় বহাল করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল শনিবার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (নেজারত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এরশাদ মিয়ার নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনা সদস্যদের একটি টিম সিলেট স্টেশনে এসে কতৃপক্ষের কাছে কেন লকডাউনের মধ্যে ট্রেনে করে যাত্রী নিয়ে আসা হয়েছে সে কৈফিয়ত জানতে চান। তখন স্টেশন সিলেট রেলের কতৃপক্ষ জানান, এটি করে বিশেষ প্রয়োজনে রেলের কিছু কর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনী মিলে কর্মীদের বেতনের টাকা নিয়ে ২৪ জন কর্মীকে আনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে সিসি ক্যামেরা যাচাই করে ৫৫ জন যাত্রীকে ওই ট্রেন থেকে নেমে যেতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে ট্রেনের চালক ও হেলপার ছাড়াও বেতনের কাজে নিয়োজিত পদস্থ চার কর্মকর্তা-কর্মচারি ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) ১৬ সদস্য ছিলেন। অনুসন্ধানে যানা যায় এ ট্রেনে রেলের ২৪ সদস্য ছাড়াও ৩১জন সাধারণ যাত্রীকে অর্থের বিনিময়ে ঢাকা থেকে সিলেটে আনা হয়েছে। কেন লকডাউন ভেঙে ঢাকা থেকে সিলেট যাত্রী নিয়ে যাওয়া হলো সে জন্য রেলের ওইসব সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ জানান হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেটের সেই নির্বাহী ম্যাজিট্রেট এরশাদ মিয়া ।

তিনি জানান, আমরা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখেছি সব মিলিয়ে ওই ট্রেনে রেলওয়ের স্টাফ ছিলেন ২৪ জন। শুরুতে ট্রেনে কারা এসেছে আমরা বারবার জানতে চেয়েছি। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তা অস্বীকারের চেষ্টা করে। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ৫৫ জন যাত্রীর নেমে যেতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে ৩১ জন সাধারণ যাত্রী ছিলেন, যারা স্টেশনে বাইরে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে যান। লকডাউনের মধ্যেও ট্রেন চলার এ ঘটনাটি জানাজানি হলে সাধারনের মধ্যেও তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে রেলের কর্মীদের বেতন দিতে কয়েকজন সিলেটে এসেছিলেন। পথে ট্রেন প্রতিটি স্টেশনে থেমে থেমে বেতন পৌঁছে দিয়ে এসেছে। পরের দিন ১৯ এপ্রিল রবিবার সকালে ট্রেনটি সিলেট থেকে ওই ২৪ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App