×

অর্থনীতি

চাপে ব্যাংকিং খাত

Icon

nakib

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২০, ১০:২২ এএম

করোনা ভাইরাসের কারণে আগামী জুন পর্যন্ত ঋণ আদায় না হলেও তা খেলাপি করতে পারবে না ব্যাংকগুলো। ফলে ঋণ আদায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে এপ্রিল ও মে- এ দুই মাসের ঋণের সুদও স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে এমন সুদ ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না বলেও গত রবিবার ও সোমবার আলাদা সার্কুলারের মাধ্যমে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে কার্যত ব্যাংকগুলোর দৃশ্যমান আয় অনেকাংশেই কমে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা বলছেন, করপোরেট কর প্রদান, ঋণমানের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ এবং যাবতীয় খরচ বাদ দিলে ব্যাংকের নিট মুনাফা বলতে কিছুই থাকবে না। ফলে প্রচণ্ড চাপে পড়ে গেছে ব্যাংকিং খাত। এমনকি ব্যাংকের মূলধনে আঘাতের শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দুই মাস স্থগিত করা হলেও কোন ধরনের চাপ ব্যাংকগুলোতে পড়বে না কারণ পরবর্তীতে সুদের অর্থ ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হবে। তবে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফায় চাপ পড়বে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। জানতে চাইলে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ সামস-উল ইসলাম বলেন, সরকারি ব্যাংক সবসময়ই সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছে। দেশের কাজে এগিয়ে এসেছে। এই দুই মাসের জন্যও আশাকরি তেমন কোন চাপ পড়বে না। তবে বেসরকারি ব্যাংকের জন্য একটু সমস্যা সৃষ্টি হবে। কারণ এই সিদ্ধান্তে তাদের পরিচালন মুনাফার ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হতে পারে। ব্যাংকিং খাত কিভাবে বিষয়গুলো সামাল দিবে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুুবুর রহমান বলেন, সামাল দেয়ার বিষয়টি এখনো জানি না। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে, আমরা সেই নির্দেশ মোতাবেক দুই মাসের জন্য সব ধরনের ঋণের সুদহার স্থগিত করছি। এতে আমাদের ব্যাংকের ওপরে অনেক বড় চাপ পড়বে। কারণ এই দুই মাসে আমরা কোনো আয় দেখাতে পারছি না। আমাদের ১৪ হাজার কোটি টাকা আয় হিসেবে আসছে না। এতে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার উপরে চাপ বাড়বে। তিনি বলেন, গত বছর আমাদের পরিচালন মুনাফা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ বছর ৯ শতাংশ সুদ হার কার্যকর করায় তার নেমে আসবে ১৫ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা। সেখানে যদি ১৪ হাজার কোটি টাকা আমাকে লস দিতে হয়, সেটা আমার ব্যাংকের জন্য অনেক বড় ধরনের চাপ। তিনি আরো বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত বড় একটা ভূমিকা পালন করছে। সে জায়গা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা আমরা মেনে চলছি। অপেক্ষায় আছি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী নির্দেশনার জন্য। জানা গেছে, নভেল করোনা ভাইরাসে বিশ্ব বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের ব্যবসা বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় গত এপ্রিলে ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি কোনো ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করতে না পারলেও তাকে ঋণখেলাপি করা যাবে না মর্মে গত এপ্রিলে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলারে আরো বলা হয়, তাদের নিয়মিত ঋণগ্রহীতা হিসেবে রাখতে হবে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার জন্য সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে। আলোচ্য সময়ে কোনো ঋণখেলাপি অবস্থা থেকে নিয়মিত হলে সেটি করা যাবে। এর ফলে কার্যত ঋণ আদায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলা করতে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের বিশেষ ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ক্রেডিট কার্ডের ওপর কোনো সুদ আরোপ করা যাবে না। একই সঙ্গে আরোপিত সুদ আদায় স্থগিত করতে হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়। সর্বশেষ গত রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট ব্যবসায়িক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকের সকল প্রকার ঋণের ওপর ১ এপ্রিল থেকে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত আরোপিত/আরোপযোগ্য সুদ স্থানান্তর করতে হবে ‘সুদবিহীন ব্লকড হিসাবে’। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ব্লকড হিসাবে স্থানান্তরিত সুদ সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতার নিকট হতে আদায় করা যাবে না এবং এমন সুদ ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। যদি কোনো ব্যাংক ইতোমধ্যে সুদ আয় খাতে স্থানান্তর করে থাকে, তা রিভার্স এন্ট্রির মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে। ব্লকড হিসাবে রক্ষিত/রক্ষিতব্য সুদ সমন্বয়ের বিষয়ে পরবর্তীতে অবহিত করা হবে। জানা যায়, ঋণের বিপরীতে যে সুদ পাওয়া যায় ব্যাংকিং খাতের জন্য সেটিই সবচেয়ে বড় আয়। বর্তমানে কার্যত ব্যাংকগুলোর দৃশ্যমান আয় অনেকাংশেই কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। এর ফলে ব্যাংকের মূলধনে আঘাতের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App