×

মুক্তচিন্তা

গরিবকে জাকাত দিয়ে দায়মুক্ত হোন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২০, ০৯:০৭ পিএম

গরিবকে জাকাত দিয়ে দায়মুক্ত হোন
মাহে রমজানে অবশ্যই জাকাত দিতে হবে এমন ধরাবাঁধা নিয়ম না থাকলেও সামর্থ্যবান রোজাদাররা বেশি পুণ্যের আশায় এ মাসে জাকাত দেন। যেহেতু মাহে রমজানে একটি আমলের পুণ্য বা সোয়াব সত্তর থেকে সাতশগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়ার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় হাদিস শরিফে। ইসলামের পাঁচ ভিত্তির অন্যতম হচ্ছে জাকাত। এটি প্রত্যেক সামর্থ্যবান সচ্ছল মুসলমানের ওপর ফরজ। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে জাকাতের বিধান লঙ্ঘন করলে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। পরকালে যেমন জাকাতের বিধান লঙ্ঘনকারীর শাস্তি অনিবার্য, তেমনি দুনিয়াতেও তাকে পার্থিব বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হবে। তাই ইসলামের অর্থনৈতিক ইবাদত জাকাতদানে ধনীদের সচেষ্ট ও দায়িত্বনিষ্ঠ হতে হবে। নিজ তাগিদেই জাকাত প্রদান করে দায়মুক্ত হতে হবে। ‘আকিমুস সালাত ওয়াতুজ জাকাত’ তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত আদায় করো। নামাজের মতোই জাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক ফরজ ইবাদতরূপে সাব্যস্ত করা হয়েছে। নামাজ যেভাবে নিজ উদ্যোগে নিজের উপকারের জন্য আল্লাহর নির্দেশ হিসেবে ফরজজ্ঞানরূপে মানুষ আদায় করে ঠিক অনুরূপভাবে জাকাত যার ওপর ফরজ হয়েছে সে নিজ তাগিদে স্বউদ্যোগী হয়েই কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হবে এই তো ইসলামের দিক নির্দেশনা। গরিবের দিকে চেয়ে রমজানে জাকাত বিতরণ যথার্থ ও প্রাসঙ্গিক। যেহেতু গরিব দুস্থ মানুষও এ মাসে রোজা-ঈদ উদযাপনে শামিল হতে চায়। যদিও এদের আর্থিক সঙ্গতি ও সচ্ছলতা নেই। তাই গরিবরা যাতে রোজার মাসটি নিশ্চিন্তে শান্তিতে সচ্ছলতার সঙ্গে খেয়েপরে পার করতে পারে এজন্য রোজার শুরুর দিকে হিসাব করে ধনীদের জাকাতদানে মনোনিবেশ করতে হবে। দেরিতে জাকাত দেয়া মানে গরিবকে কষ্টে রাখা, তাদের অস্থিরতা-অসহায়ত্ব দেখেও চুপ থাকা। এটা অমানবিক। এ কারণেই রোজার শেষের দিকে জাকাত বিতরণের যে রীতি তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জাকাত সঠিকভাবে প্রদান ধনীদের ওপর ধর্মীয় ফরজ কর্তব্য হলেও এদিকে অনেক ধনীর দৃষ্টিপাত নেই। ঠিকভাবে জাকাত বিতরণে আগ্রহ ও সহানুভ‚তি যতটা থাকা দরকার ততটা চোখে পড়ে না। এজন্যই যত শঙ্কা। মহানবী (দ.) বলেছেন, ‘আযজাকাতু কিনতারাতুল ইসলাম’ জাকাত ইসলামের সেতুবন্ধন। জাকাত আদায়ের দ্বারা বিত্তবানরা নিঃস্ব মানুষের কাছাকাছি অবস্থান তৈরি করে। পরস্পর ভালোবাসা ও সম্প্রীতি জাগ্রত হয় জাকাতের মাধ্যমে। অথচ আমরা চারপাশে যা দেখছি তা হাদিসের শিক্ষার সঙ্গে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কুরআন মজিদের সুরা তাওবার ১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘ওয়াতুজ জাকাত ফাইখওয়ানুকুম ফিদদ্বীন’ ওরা জাকাত দেয়ার নীতি গ্রহণ করলে ওরা তোমাদের দ্বীনি ভাই হয়ে যাবে। এই ফরজ কাজ আদায়ে বিত্তবানদের বাহাদুরি অপ্রত্যাশিত। প্রদর্শনীর চিন্তা বাদ দিয়ে যথাযথভাবে জাকাত আদায়ে ধনীরা সচেষ্ট হবে এটাই ধর্মীয় নির্দেশনা। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দুনিয়ার কাউকে সন্তুষ্ট করবে বা প্রশংসিত হবে এই প্রবণতা নামাজের ক্ষেত্রে না থাকলেও নামাজের মতোই আরেকটি ফরজ ইবাদত জাকাত আদায় করতে গিয়ে আত্মম্ভরিতা বা লৌকিকতা প্রদর্শন মোটেই ইসলামের শিক্ষা নয়। নামাজের আজান শুনে নামাজি নিজ উদ্যোগেই মসজিদে ছুটে যায় নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে। অথচ যার ওপর জাকাত দেয়া ফরজ হলো সে জাকাত আদায়ে মোটেই তৎপর নয়, উদ্যোগী নয় তাতো আল্লাহর আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, জঘন্য পাপ। ইচ্ছাকৃত নামাজ পরিত্যাগ করার দায়ে যেমন আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে জাকাত আদায়ে গড়িমসি বা অবহেলা করলে তাতেও রেহাই মিলবে না। নিজের নামাজ অন্যকে দিয়ে আদায় করা যায় না, নিজেকেই পড়ে নিতে হয়। জাকাতের ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য। জাকাত ফরজ হলে নিজে উদ্যোগী ও তৎপর হয়ে গরিব ও হকদার খুঁজে খুঁজে জাকাত প্রদানে মনোনিবেশ করতে হবে। গরিবের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে অর্জিত ধন সম্পদ পবিত্র ও বৃদ্ধির সুযোগ ধনীদেরই লুফে নিতে হবে। কেননা আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন ‘ওয়াফি আমওয়ালিহিম হক্কুল লিস্সায়িলি ওয়াল মাহরুম’ (সুরা জারিয়াত-১৯) অর্থাৎ ধনীদের ধন সম্পদে সুনির্দিষ্ট ও সুপ্রতিষ্ঠিত হক বা অধিকার রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিত লোকের জন্য। তাই গরিবের প্রাপ্য অধিকার সসম্মানেই তাকে গচ্ছিত করে দেয়া সবার কর্তব্য। মসজিদে মসজিদে ইমাম-খতিব সাহেবরা জাকাত প্রদানে উদ্বুদ্ধ করে বক্তব্য দেবেন, প্রচলিত জাকাত প্রদানের রীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ার তাগিদ দেবেন এ বিনীত প্রত্যাশা তাদের প্রতি। লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App